শিক্ষার আলো ডেস্ক
২০২৩ সালের নতুন শিক্ষাবর্ষে পাঠ্যবইয়ে ভুলের ছড়াছড়ি। এর মধ্যে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির চারপাঠ্য বইয়ে ১৮৮টি ভুল ও ৫৮টি অসঙ্গতি সংশোধনের সুপারিশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি।
চলতি বছর প্রথম, ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদান শুরু হয়। পরীক্ষামূলকভাবে এসব শ্রেণিতে প্রণয়ন করা হয় পাঠ্যবই। ক্লাস শুরুর পর বইগুলোর নানা ভুল ও অসংগতি নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক ও সমালোচনা। একপর্যায়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুটি প্রত্যাহার করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
এর মধ্যে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাবার নামে ভুল করা হয়েছে। শেখ বাদ দিয়ে শুধু লেখা হয়েছে লুৎফর রহমান। এছাড়া দুটি ইতহাসের বইয়ে আরও ১৮টি অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। এতে নতুন কারিকুলাম চালু হওয়ার পর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)’র ইতিহাস বই নিয়ে নানা বির্তক সৃষ্টি হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ছেলেবেলার ‘মুজিব’ শিরোনামে ৭ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর বাবা লুৎফর রহমান ছিলেন সরকারি অফিসের কেরানি। অথচ তিনি ছিলেন আদালতের সেরেস্তাদার। পদটি আজও দেশের সব জেলা জজ আদালতে বহাল আছে।
এদিকে, ৭৭ পৃষ্ঠায় ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রথম সরকার’ শিরোনামে লেখা হয়েছে, কর্নেল ওসমানিকে জেনারেল পদ দিয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি করা হয়। শুদ্ধ হচ্ছে, তিনি কর্নেল পদে থেকেই মুক্তিযুদ্ধে সর্বাধিনায়ক। আর দেশ হানাদারমুক্ত হবার পর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে চলতি বছরের সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ৭০ পৃষ্ঠায় তাঁর নাম লেখা হয়েছে শুধু ‘তাজউদ্দিন’। প্রথমত, আহমদ লেখা হয়নি। আবার ‘তাজউদ্দিন’ বানান লিখেছে ‘হ্রস্ব ই-কার’ দিয়ে। একই বইয়ের ৬২ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধের দেশি ও বিদেশী বন্ধুরা’। আসলে হবে ‘মুক্তিযুদ্ধের বিদেশী বন্ধুরা’।
এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান (অনুশীলন) বইয়ের ৮৭ পৃষ্ঠায় ‘চাঁদ ও সূর্যের পালা’ শিরোনামের নিবন্ধে লেখা ‘অভিশপ্ত চাঁদ’ সংশোধন করে ‘চাঁদের গল্প’ নাম দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া একই শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ৮ পৃষ্ঠার ১৩ নম্বর পঙ্ক্তিতে ‘ততদিনে বালক মুজিব পরের জন্য খাটায় উৎসাহ পেয়ে গেছে’ এর পরিবর্তে ‘ততদিনে বালক মুজিব মানুষের জন্য কাজ করার উৎসাহ পেয়ে গেছে’; সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ১১২ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘মুখে গোঁফদাড়ির জঙ্গল’ এর পরিবর্তে ‘মুখে গোঁফদাড়ি’ পড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
এনসিটিবি বলছে, বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশসহ ৫টি উপায়ে এবারের বইগুলোর ভুলত্রুটি ও অসঙ্গতি তুলে আনা হয়েছে। ঈদের পর স্কুল খোলার আগেই যেসব ভুলত্রুটি সংশোধন করা প্রয়োজন, তা শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কাছে পাঠানো হবে। পরে তারা শ্রেণিশিক্ষকদের মাধ্যমে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পাঠ্যপুস্তকে এ ত্রুটিগুলো সংশোধন নিশ্চিত করবেন। এ ছাড়া আগামী বছরের বইয়ে তা পরিমার্জন করে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞ কমিটির জমা দেওয়া প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে আছে ১০টি অসংগতি ও ২৫টি ভুল, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ৪টি অসংগতি ও ৫০টি ভুল এবং ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ে ৩৫টি অসংগতি ও ৯০টি ভুল রয়েছে। একই শ্রেণির ‘বিজ্ঞান অনুশীলন পাঠ’ বইয়ে ৯টি অসংগতি ও ২৩ ভুল চিহ্নিত করা হয়েছে। ভুলগুলোর মধ্যে বানান ভুলের পরিমাণই বেশি। এর মধ্যে কোনো কোনো শব্দের বানান একাধিকবার ভুল করা হয়েছে।
এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. মশিউজ্জামান বলেন, চলতি বছর পাঠ্যপুস্তকে যেসব ভুল-ত্রুটি সংশোধন করা প্রয়োজন, তার একটি তালিকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে পাঠানো হবে। প্রতিষ্ঠানপ্রধানেরা ঈদের পর পাঠদান শুরু হলেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শ্রেণিশিক্ষকের মাধ্যমে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পাঠ্যপুস্তকে ভুল-ত্রুটিগুলোর সংশোধন নিশ্চিত করবেন। আর আগামী বছর তা পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তক হিসেবে বিতরণ করা হবে।
Discussion about this post