শিক্ষার আলো ডেস্ক
বিশ্বে সবচেয়ে কম বয়সে বিজ্ঞানে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করলো বাংলাদেশের মাহির আলী রুশো। যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান ইউনির্ভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড স্যোশ্যাল সায়েন্স তাকে এই ডিগ্রি দিয়েছে।
মনিপুর হাইস্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়া রুশোর ঝুলিতে শুধু সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রিই নয়, সে ডাটা ব্যবস্থাপনার উপর শেষ করেছে মাইক্রো মাস্টার্স। গতানুগতিক ধারার এসএসসি, এইচএসসি ক্লাসে পা না দিয়েই এই ১৫ বছর বয়সে পড়ছে মাস্টার্সে।
বিশ্বের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে এখন পর্যন্ত ৫০টিরও বেশি কোর্স করে সনদ অর্জন করেছে রুশো। যার মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গ ও যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটির সনদ।
মাহির আলী রুশো জানায়, পত্রিকা বা গুগলের মাধ্যমে সে জেনেছে অল্প বয়সেও মার্স্টার্স করা যায়। সেখান থেকেই তার আগ্রহ। রুশো জানায়, প্রথাগত সনদ না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রে মার্স্টার্স করা যায়। যোগ্য হলেই সে তার ইচ্ছেমত বিষয়ে পড়তে পারে। এজন্য আগের কোন সনদ প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশেও এই সুবিধা থাকা উচিৎ বলে সে মনে করে।
রুশোর নতুন গবেষণার বিষয় ভূমিকম্পের আগাম বার্তা। ইঁদুরের মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়ে ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা পাওয়ার কথা ভাবছে সে। তার এই গবেষণাপত্র আমেরিকার আরআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অলিম্পিয়াডে বিজ্ঞান বিভাগে টপ ফাইভে স্থান পেয়েছে। এজন্য সে পেয়েছে বৃত্তিও।
আগামী ১১ থেকে ১৭ই জুন আমেরিকার আরআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত অলিম্পিয়াডে সে উপস্থাপন করবে তার এই গবেষণাপত্র।
মাহির আলী রুশো জানায়, ইঁদুর বা সাপ ভূমিকম্পের আগাম বার্তা পেয়ে যায়। আবার ইঁদুরের মস্তিস্ককে কম্পিউটারাইজ করার কাজ চলছে। তাই ইঁদুরের মস্তিস্ককে ব্যবহার করে ভূমিকম্পের আগাম বার্তা পাওয়া সম্ভব বলে মনে করে সে।
এডুমিত্রা অলিম্পিয়াডে চূড়ান্ত পর্বে জয়ী হওয়ায় সে সুযোগ পেয়েছে নাসা কার্যালয় পরিদর্শনের। জুন মাসেই দুদিনের নাসা পরিদর্শনে যাবে রুশো।
রুশোর বাবা সেন্ট্রাল মেডিক্যাল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান প্রফেসর মোহাম্মদ আলী বলেন, ক্লাস ফাইভ থেকেই তার ছেলের বিজ্ঞানের প্রতি প্রচণ্ড ঝোঁক ছিল। সে সময় আমার একটা ল্যাপটপ ছিল, সেটাও খুব বেশি ভালো ছিল না। কিন্তু একটা পর্যায়ে আমি খেয়াল করি, সে আমার ল্যাটপটে ভিডিও দেখছে। এসব ভিডিও ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথের ভিডিও। আর সবগুলোই তার চেয়ে অনেক আপার লেভেলের (উপরের স্তরের)।
তিনি আরও বলেন, এরপর আমি একদিন তাকে ডেকে নিয়ে বলি, বাবা তুমি যেসব ভিডিও দেখো সেসব কি তুমি বুঝো, নাকি শুধু দেখো? তার উত্তর ছিল- বাবা আমি এসবই বুঝি। তারপর তার সঙ্গে কয়েকদিন আমি নিয়মিত কথা বলি। দেখলাম আসলেই সে বোঝে।
সে সময় রুশো তার বাবা-মায়ের কাছে একটি আবদার করে বসে। সে প্রতিদিন অন্তত দুই ঘণ্টা ইউটিউবে ভিডিও দেখতে চায়। প্রথমে বাবা-মা এতো সময় ভিডিও দেখায় কিছুটা আপত্তি করলেও পরে শর্ত দেয় যে, প্রতিদিনের পড়াটুকু ঠিকভাবে সেরে সকালে এক ঘণ্টা এবং রাতে এক ঘণ্টা করে ইউটিউব দেখতে পারবে। তাতেই রাজি হয় রুশো।
মোহাম্মদ আলী বলেন. রুশোর বয়স যখন ১১ বছর, তখন সে ক্যালকুলাস এবং জ্যামিতিক বিভিন্ন সমাধান রপ্ত করে ফেলে। ১২ বছর বয়সে কলেজ পর্যায়ের গণিত ও ফিজিক্স অনায়াসে করতে পারত।
তিনি আরও বলেন, এই জানাশোনার বিষয়টা আরও বেড়ে যায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় স্কুল বন্ধ হলে। তখন অনেক বেশি সময় রুশো বিজ্ঞানের এসব বিষয়ে জানতে ব্যয় করতে থাকে। ২০২০ সালের মার্চ থেকে সে অনলাইনে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত, ক্যালকুলাস, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি বিষয়ে অসংখ্য অনলাইন কোর্সে অংশ নেয়। তার মধ্যেই অনলাইনে ‘সেন্ট জোসেফ ন্যাশনাল পাই অলিম্পিয়াড’ সম্পর্কে জানতে পেরে এতে অংশ নেয় রুশো এবং হয়ে যায় চ্যাম্পিয়ন।
রুশোর গর্বিত মা চিকিৎসক রুমা আক্তার বলেন, আসলে সন্তানকে বুঝতে হবে। সে কি চায় সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনেক সময় তার চাওয়ার থেকে আমাদের চাওয়াকে বেশি গুরুত্ব দিই, যা তাদের বিকাশকে বাধা দেয়।
রুশো বলেন, কেউ কাউকে শেখাতে পারে না। নিজে থেকে শিখতে হয়। আমাদের সবসময় অ্যাকাডেমিক বইয়ের বাইরে পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। কেননা আমরা নিজের বই তো পড়বোই, তার বাইরে সেটা কেন হচ্ছে সেটা জানতে অন্য বইও পড়ব। আমরা আসলে যা পড়ি সেটা খুব শর্টকাট। সেখানে গভীরভাবে কোনো কিছু দেখানো হয় না। তাই সেটা জানতে হলে পড়াশোনার বিকল্প নেই। সুত্র- চ্যানেল আই, ডেইলি স্টার
Discussion about this post