সুনীল বড়ুয়া
কক্সবাজারের টেকনাফের লম্বরী গ্রামে গাছে যে পোকাগুলো বসছে এবং গাছের ক্ষতি করছে, সেই আলোচি পোকা পঙ্গপাল নয়। এটি তেমন ক্ষতিকর পোকাও নয়। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তাছাড়া প্রয়োজনীয় কীটনাশক প্রয়োগ করে পোকাগুলো দমন করা যাচ্ছে।
কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবুল কাশেম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ।
অপরদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বেশ কিছুদিন আগে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার লম্বরী গ্রামের কয়েকটি গাছে ঘাসফড়িংয়ের মতো কিছু ছোট পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। পরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের উপ-পরিচালক ও স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে কীটনাশক প্রয়োগ করে পোকাগুলো দমন করেন। অতিসম্প্রতি ঘাসফড়িং সদৃশ এসব পোকা আবারও দেখা দিলে কৃষি মন্ত্রণালয় এটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে।
মন্ত্রণালয় বলছে, শুক্রবার (০১ মে) সকালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ববিদদের সমন্বয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি দল টেকনাফের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এবং বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) থেকেও পৃথক টিম রওনা দিচ্ছে। ঘাসফড়িং সদৃশ লোকাস্ট গোত্রের স্থানীয় এ পোকার শনাক্তকরণসহ আক্রমণ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও ধ্বংসে এ টিম কাজ করবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের উপ-পরিচালক আবুল কাশেম বলেন, উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তিনিও টেকনাফেল সেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, এটি তেমন ক্ষতিকর পোকা নয়। কীটনাশক প্রয়োগ করার পর গাছে থাকা পোকাগুলো মারা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, পঙ্গপালের পাখা থাকে এবং সহজে উড়তে পারে। এটির তেমন কোনো পাখা নেই। তবে এ পতঙ্গ কাঁচা পাতা খেয়ে ফেলছে। এসব পোকা যাতে অন্য কোথাও ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য কীটনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের কৃষি বিষয়ক সংস্থা এফএও-এর প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট আহমেদ আকজায়েজ টেকনাফে ঘটনাস্থল পরির্দশন শেষে বলেন, এ পোকা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটি পঙ্গপাল নয়, কীটনাশক স্প্রে করার পর এদের বেশির ভাগই মারা গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে এসব পোকা দমনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
টেকনাফ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. হাদিউর রহমান বলেন, পোকাটির নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণাগারের পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত সেখান থেকে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। এসব পোকা যাতে অন্য কোথাও ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য কয়েকবার কীটনাশক স্প্রে করা হয়েছে।
জানা গেছে,পঙ্গপাল আর ঘাসফড়িং দেখতে একই রকম। দল বেঁধে উড়তে উড়তে পঙ্গপাল পাড়ি দিতে পারে মাইলের পর মাইল। দুটো ক্ষুদে শিংওয়ালা এ পতঙ্গটি আধা থেকে তিন ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এসময় এরা ‘দানবের মতো ক্ষুধার্ত’হয়ে ওঠে। প্রতিদিন নিজের ওজনের সমান ফসল খেতে পারে একেকটি পতঙ্গ । এ পোকার দলের আক্রমণের কারণে উজাড় হতে পারে ক্ষেতের ফসল।
টেকনাফের লম্বরী গ্রামের একটি বাড়ির আম গাছসহ বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছের শাখা-প্রশাখায় সম্প্রতি দেখা মিলে এক ধরনের এ পোকা। পোকাগুলো গাছের পাতা সম্পূর্ণ রূপে খেয়ে ফেলছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এলে বেশ হৈচৈ পড়ে যায়। কৃষি বিভাগও নড়ে চড়ে বসে।
Discussion about this post