শিক্ষার আলো ডেস্ক
আজ রবিবার (১৬ জুলাই) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ‘অধ্যক্ষ সম্মিলন ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে’ প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে অঞ্চলভিত্তিক বিকেন্দ্রীকরণের নির্দেশনা দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, অসচ্ছল ও মেধাবী ১০ জন শিক্ষার্থীর হাতে বৃত্তির চেক তুলে দেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি শিক্ষা সংক্রান্ত উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক প্রশিক্ষণ চালু করা হয়েছে। সেটি যেন আরও উন্নত করা হয় এবং প্রতিনিয়ত যেন শিক্ষক প্রশিক্ষণটা থাকে। তাছাড়া আমাদের আটটি বিভাগ আছে। আমরা অঞ্চলভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা করেছি। আটটি বিভাগে আটটি সেল গঠন করে অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে সেসব প্রতিষ্ঠানের সমস্যা দেখা এবং সমাধান করা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন কারিকুলাম কোথায় কী আছে- সেগুলো বিবেচনা করা, সেইভাবে পরামর্শ করা- এই বিষয়টার দিকে আমরা নজর দিতে পারি। তাতে আমাদের শিক্ষার মান আরও উন্নত হবে। আমাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আরও দক্ষতা অর্জন করবে। এখন তো সমগ্র বাংলাদেশে ওয়াইফাই কানেকশন। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের পদক্ষেপ নিয়েছি। কাজেই ব্রডব্যান্ড কানেকশন এখন ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত চলে গেছে। সারা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছে। কাজেই অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা যোগসূত্র করে সেখানকার কার্যক্রম চালালে সেটার মানটা আরও উন্নত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সেশনজট নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় একটি বৃহৎ পরিবার। উচ্চশিক্ষার ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলাদেশের কলেজসমূহে অধ্যয়ন করছে। নতুন পরিকল্পনায় এই বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা, গবেষণা, আইসিটি, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ের আমূল পরিবর্তন করা হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের সুযোগ সুবিধাও অনেক বাড়িয়েছি। অসচ্ছল মেধাবী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রদানের যে পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েছে তা নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘বাঙালির ভাষা-সাহিত্যের যে সমৃদ্ধি, সংস্কৃতির গভীরতা ও বিস্তৃতি, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের যে অনমনীয় চেতনা, ত্যাগ ও সংগ্রামের যে ইতিহাস এবং সমাজের বহুত্ববাদিতা, মানবিকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার আবহমান সুর তাকে হৃদয়ে, মননে এবং জীবন চর্চায় ধারণ করে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা গড়ে উঠবে। একইসঙ্গে কায়মনে শাশ্বত বাঙালি হবে, হবে বিশ্ব মানব- এ আমাদের প্রত্যাশা।’
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবাদে সব সেবা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। কলেজগুলোয় স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস অবশ্যপাঠ্য করেছি। এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের পথে হাঁটছি।’
‘অধ্যক্ষ সম্মিলন ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান ২০২৩’ এ প্রধানমন্ত্রী যে ১০টি শিক্ষা সংক্রান্ত উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন সেগুলো হচ্ছে— জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রণীত একাডেমিক ও ফিজিক্যাল মাস্টার প্ল্যান, আইসিটি মাস্টার প্ল্যান, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট, টুঙ্গিপাড়ায় আর্কাইভ, মিউজিয়াম ও উন্মুক্ত গ্যালারি প্রতিষ্ঠা, ১২টি দক্ষতাভিত্তিক পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম, ১৯টি শর্ট কোর্স, মূল ক্যাম্পাসে ৪টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রোগ্রাম, আইসিটি কোর্স অবশ্যপাঠ্যকরণ, জেনোসাইড – লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ প্রোগ্রাম, এক্সামিনেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, গ্রন্থ রচনা প্রকল্প এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুস সালাম হাওলাদার।
সারাদেশ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ২ হাজার ২৫৭টি কলেজের অধ্যক্ষরা এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
Discussion about this post