শিক্ষার আলো ডেস্ক
জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে স্কুলে স্কুলে শুরু হতে যাচ্ছে শিশুদের টিকাদান। সরকারের পক্ষ থেকে চলতি বছরের শুরুতেই জানানো হয়েছে, ১০ থেকে ১৪ বছরের শিশুদের (৫ম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি) এই টিকা দেওয়া হবে। চিকিৎসকরা বলছেন, এই উদ্যোগ অনেক প্রাণ বাঁচাবে। শিশু ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতাও তৈরি হবে।
এ বিষয়ে তারা বলছেন, ৯ থেকে ৪৫ বছর বছর পর্যন্ত মেয়েদের সচেতন করা গেলে এবং সঠিক সময়ে ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা গেলে আগামী একশ বছরের মধ্যে জরায়ুমুখের ক্যানসার সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব হবে।
গত সোমবার (২৪ জুলাই) রাজধানীর কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছে চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, সরকারের উদ্যোগে হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) টিকা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি বছর ৫ লাখ ৭০ হাজার নারী জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হন, মারা যান ৩ লাখের বেশি। বাংলাদেশে নারীরা স্তন ক্যানসারের পর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন জরায়ুমুখ ক্যানসারে। দেশে প্রতিবছর ৮ হাজার নারীর জরায়ুমুখের ক্যানসার শনাক্ত হচ্ছে। এই ক্যানসারে আক্রান্ত নতুন ও পুরনো রোগী মিলিয়ে বছরে ৫ হাজার নারীর মৃত্যু হয়। কিশোরী মেয়েদের টিকা দেওয়ার মাধ্যমে প্রতিরোধব্যবস্থা নিলে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের পরীক্ষা–নিরীক্ষার (স্ক্রিনিং) মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত ও চিকিৎসার মাধ্যমে সহজেই নির্মূল করা সম্ভব জরায়ুমুখ ক্যানসার।
এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণে বেশ কয়েকবছর ধরে কর্মকৌশল নিয়ে কাজ করছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে নারীদের জরায়ু ক্যানসারের টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করা হবে।
উল্লেখ্য, জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে ১০ বছর বয়সের পর থেকেই টিকা নেওয়া যায়। এই টিকার তিনটি ডোজ নিতে হয়। প্রথম ডোজের এক মাস পর দ্বিতীয় ডোজ এবং তার তিন মাস পর তৃতীয় ডোজ নিতে হয়।
এই টিকা দিতে যেন অভিভাবকরা কোনও ভয় না পান উল্লেখ করে কুমুদিনী মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক বিলকিস বেগম চৌধুরী বলেন, এটা খুব ভালো উদ্যোগ হয়েছে। এই ক্যানসারের পিছনে বাল্যবিবাহ একটি বড় কারণ হিসেবে ধরা হয়। হিউম্যান প্যপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) এর জন্য দায়ী। যদি যৌনসম্পর্কের আগে এই টিকা দেওয়া যায় তবে সংক্রমণের শঙ্কা কম থাকে। ফলে স্কুলগামী শিশুদের এটা দেওয়ার সিদ্ধান্ত খুব ভালো ফল দিবে বলে মনে করছি।
এই টিকাদান কর্মসূচির অধীনে ১০ থেকে ১৪ বছরের সকল শিক্ষার্থীকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে নাকি ধাপে ধাপে দেওয়া হবে প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আব্দুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, কোথায়, কীভাবে দেওয়া হবে সেটার সার্বিক পরিকল্পনা মন্ত্রী মহোদয় নিজেই ঘোষণা করবেন।
Discussion about this post