নিউজ ডেস্ক
সুনামগঞ্জের ছাতক গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণের জন্য দায়ী বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান নাইকো। বিস্ফোরণে বাংলাদেশের জ্বালানি সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি স্থানীয় পরিবেশ ও স্বাস্থ্যেরও বিপুল ক্ষতি হচ্ছে। এ জন্য বাংলাদেশকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে নাইকোকে।
আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি আদালত ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপুটস’র (ইকসিড) ট্রাইব্যুনাল সম্প্রতি বহুল প্রতীক্ষিত এ রায় দেয়। রবিবার(৩মে) এক অনলাইন সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু জানান, দীর্ঘ ১০ বছর আইনি মামলা লড়ার পর এই রায় বাংলাদেশের পক্ষে এসেছে। এতে প্রমাণ হয়েছে গ্যাসের খনি খননে নাইকোর গাফলতি ছিল। তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। রায় পক্ষে আসাতে সারা বিশ্বের কাছে বার্তা গেছে বাংলাদেশে গিয়ে যা ইচ্ছা তাই করা যাবে না। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ইকসিড এই রায় প্রদান করে। তবে মার্চের শুরুর দিকে এ তথ্য জানানোর পরিকল্পনা থাকলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়ায় তা বাতিল করা হয়।
পেট্রোবাংলা ও বাপেক্স সূত্র জানায়, ছাতক গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণের কারণে বাংলাদেশের অন্তত এক হাজার ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে। এর পাশাপাশি পরিবেশ, প্রতিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতি হয়েছে, হচ্ছে। সেই ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে পেট্রোবাংলার নিয়োগ করা একটি বহুজাতিক কোম্পানি কাজ করছে।
এদিকে আগের গ্যাস বিক্রির বিল বাবদ নাইকো পেট্রোবাংলার কাছ থেকে ৩০ মিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে। ইকসিডে এ বিষয়ে পৃথক মামলা করেছে নাইকো। বাংলাদেশ সেই দেনা অস্বীকার করেনি। তবে বিস্ফোরণের ক্ষতিপূরণ সাপেক্ষে তা পরিশোধ করবে বলে জানিয়েছে। বাংলাদেশে নাইকোর একমাত্র সম্পদ ব্লক-৯ এর গ্যাসের অংশীদারিত্ব। যার মূল্য ২৮০ ডলারের মত। সেই হিসেবে গ্যাসের অপচয় বাবদ যে ক্ষতি হয়েছে তা থেকে গ্যাসের বকেয়া বিল ও ব্লক-৯ এর মূল্য বাদ দিলেও ৭০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি পাবে বাংলাদেশ। তার সঙ্গে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতিপূরণ যুক্ত হবে। ইকসিডের ফেব্রুয়ারির রায়ে ক্ষতি ও নাইকোর দায় উল্লেখ করা হলেও কত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তা উল্লেখ করা হয়নি। পরবর্তী রায়ে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ জানানো হবে। তবে নাইকো ইতোমধ্যে দেউলিয়ায় হয়ে গেছে। সে হিসেবে তারা কীভাবে ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ করবে তা আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জ্বালানি বিভাগ জানায়, পরিবেশগত ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেতে আগামী বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর তা ইকসিডে জানানো হবে। সবমিলিয়ে নাইকো থেকে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে অন্তত: দেড় বছর সময় লাগবে। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ একটি আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দিয়ে যে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয় তা ২০১৮ সালে ইকসিডে জমা দেওয়া হয়। ইকসিড রায়ে বলেছে, নাইকোর গাফিলতি এবং অদক্ষতার জন্যই বিস্ফোরণ ঘটেছে। ফলে এর দায় নাইকোকেই নিতে হবে। বাংলাদেশকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ক্ষতির বিষয়টি চূড়ান্ত করতে আগামী সেপ্টেম্বরে আবার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটি হয়তো পেছাতে পারে।
জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান বলেন, কানাডিয়ান তেল গ্যাস কোম্পানি নাইকো ২০০৩ সালে বিএনপির সময়ে বাংলাদেশের ছাতক গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নের কাজ পায়। একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রকে প্রান্তিক দেখিয়ে বিএনপি সরকার নাইকোকে কাজ দেয়। এতে রাষ্ট্রীয় বিপুল পরিমাণ ক্ষতির কথা উল্লেখ করে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করেছে। এই মামলাটি দেশের আদালতে চলমান রয়েছে।
মামলাটিতে বাংলাদেশের পক্ষে বিদেশী আইনজীবী ফলি’র সঙ্গে লড়ছেন বাংলাদেশি আইনজীবী ব্যারিস্টার মঈন গণি।
উল্লেখ্য, গ্যাসকূপ খনন করার সময় ২০০৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ছাতক গ্যাসক্ষেত্রে প্রথম দফা বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর আবার চেষ্টা করতে গেলে আরও এক দফা বিস্ফোরণ ঘটে। এতে খনিটিতে থাকা গ্যাসের অনেকটা পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। স্থানীয় প্রাণবৈচিত্র বিলুপ্ত হয়। এখনও ছাতকে এই গ্যাস ক্ষেত্রের আশেপাশের এলাকায় গ্যাস উদগীরণ ঘটছে। এতে স্থানীয়রা নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন।
Discussion about this post