শিক্ষার আলো ডেস্ক
শুধু অষ্টম বা নবম শ্রেণিতে গিয়ে নয়, আগামী বছর ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই শুরু হবে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন। এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। এ লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং নতুন একটি অ্যাপস তৈরি করা হচ্ছে। এই অ্যাপস ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতার তথ্য রেকর্ড রাখা হবে এবং বছর শেষে একটি সনদ দেওয়া হবে।
আগে শুধু নবম শ্রেণিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করানো হতো। জেএসসি চালুর পর অষ্টম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করা হতো এবং অষ্টম শ্রেণি শেষে সনদ পেত শিক্ষার্থীরা।
তথ্য অনুযায়ী, নির্ধারিত ফি দিয়ে সব শিক্ষার্থীকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। স্কুল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এই রেজিস্ট্রেশন করা হবে। এই রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষার্থী শনাক্ত করা হবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রতিটি বোর্ড শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করবে। আগামী বছর থেকেই এই কার্যক্রম শুরু হবে। এতে কী সংখ্যক শিক্ষার্থী কোন শ্রেণিতে রয়েছে, তার একটি সুস্পষ্ট চিত্র আমাদের কাছে থাকবে। ফলে পাবলিক পরীক্ষার আগে গিয়ে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের যে চাপ তৈরি হয়, তা আর থাকবে না। এছাড়া এই রেজিস্ট্রেশনের ফলে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করাও সম্ভব হবে।’
রেজিস্ট্রেশনকৃত প্রতিটি শিক্ষার্থীর তথ্য নতুন একটি অ্যাপসে যুক্ত করা হবে। আর এই অ্যাপস তৈরি করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড।
চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে সপ্তম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম শুরু হয়েছে। এতে কোনো পুরোনো আদলে কোনো পরীক্ষা হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এই মূল্যায়ন যাতে বোর্ডে সংরক্ষিত করা যায়, সে লক্ষ্যেই এনসিটিবি কাজ করছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম করবে শিক্ষা বোর্ডগুলো। আর শিক্ষার্থীদের পারফরমেন্স রেকর্ড রাখার জন্য একটি অ্যাপস তৈরি করা হচ্ছে। রেজিস্ট্রেশনের তথ্য অ্যাপসে যুক্ত করা হবে। এই অ্যাপসে শিক্ষার্থীর পারদর্শিতার তথ্য শিক্ষকরা আপলোড করবেন। সেটা একটি কেন্দ্রীয় সার্ভারে এসে যুক্ত হবে। বছর শেষে শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতার ওপর সনদ তৈরি হবে। শিক্ষার্থীরা ওয়েবসাইট বা অ্যাপস থেকে এই সনদ ডাউনলোড করতে পারবে।’
এনসিটিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘চলতি বছর থেকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম শুরু হয়েছে। এই শিক্ষার্থীদেরও পারদর্শিতার তথ্য সংগ্রহ করা হবে। তাও এই অ্যাপসে যুক্ত করা হবে।’
আগামী বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম চালু হবে। নতুন কারিকুলামের আলোকে নতুন বইও ছাপানো হচ্ছে। ফলে এসব শ্রেণিতেই মূল্যায়নের ধরনে পরিবর্তন আসবে।
নতুন কারিকুলামে বলা হয়েছে, মূল্যায়ন শিক্ষাক্রমের একটি অপরিহার্য ও অবিচ্ছিন্ন অংশ। এই শিক্ষাক্রম রূপরেখায় মূল্যায়নকে কেবল শিক্ষার্থীর শিখন মূল্যায়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে পুরো শিক্ষাব্যবস্থার কার্যকারিতা মূল্যায়ন, শিখন পরিবেশের মূল্যায়ন ও সেই সঙ্গে শিখনের মূল্যায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। প্রচলিত মূল্যায়ন ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে মুখস্থবিদ্যাভিত্তিক পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে সরে এসে বহুমাত্রিক মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর বিভিন্ন মাত্রার জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি ও চেতনা বিকাশের ধারাকে মূল্যায়নের আওতায় আনা হয়েছে। সব ধরনের শিখন মূল্যায়নের ভিত্তি হচ্ছে যোগ্যতা।
শিক্ষাক্রম রূপরেখায় মূল্যায়নের যে কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, শিখনকালীন মূল্যায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বহুমাত্রিক উপায়ে মূল্যায়ন, শিখনের জন্য মূল্যায়ন এবং মূল্যায়নের মাধ্যমে শিখন, পর্যবেক্ষণ, প্রতিফলনভিত্তিক ও প্রক্রিয়ানির্ভর মূল্যায়ন, ধারাবাহিক মূল্যায়ন, সতীর্থ মূল্যায়ন, অংশীজন মূল্যায়ন, মূল্যায়নে টেকনোলজির (অ্যাপস) ব্যবহার, মূল্যায়নে জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনা করা এবং ইতিবাচক ফলাবর্তন প্রদান।
তবে যে আদলে মূল্যায়ন চলছে, তাতে সন্তুষ্ট নন শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের একটি অংশ। তারা বলছেন, এই আদলের মূল্যায়নে শিক্ষার্থী পড়াশোনায় মনোযোগী হচ্ছে না। তবে শিক্ষা প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে, এই কারিকুলামের সুফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে।
Discussion about this post