শিক্ষার আলো ডেস্ক
শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে তথ্য ও যোগাযোগ অধিদপ্তর আয়োজিত ৬ষ্ঠ রোবট অলিম্পিয়াড ২০২৩ এর উদ্ভোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন,উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের স্মার্ট দেশের স্মার্ট শিক্ষার্থী হিসেবে গড়ে তুলতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন কম্পিউটার ল্যাব তৈরি ও রোবটিক্স এন্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন রোবটিক্স ল্যাব তৈরি করা হবে।
এসময় ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান উপস্থিত থেকে এই ৬ষ্ঠ রোবট অলিম্পিয়াডের উদ্ভোধন করেন।এ অলিম্পিয়াডে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও ৫০০ জন নারীসহ দেশের ৬৩ জেলার ১ হাজার ৫৯২ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স এন্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা রোবট নিয়ে গবেষণা করছে। সেখানে আজকে ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা এটা নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। এখান থেকে যারা বিজয়ী হবে তারা গ্রিসে রোবটিক্স অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে যাবে। আমরা প্রথমবার ফিলিপাইনে রোবট অলিম্পিয়াড অংশ নিয়ে গোল্ড মেডেল পেয়েছিলাম। আমাদের শিক্ষার্থীদের মেধার কমতি নেই আছে একটু সুযোগের অভাব৷ সেই সুযোগটি আমরা শিক্ষার্থীদের দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে প্রাকৃতিক সম্পদ নেই কিন্তু আমাদের তো অনেক মানবসম্পদ রয়েছে। আমরা যদি মানবসম্পদকে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতে পারি তাহলে সেসব প্রাকৃতিক সম্পদে পূর্ণ দেশকেও আমরা পেছনে ফেলতে পারবো। বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হলে অবশ্যই ৪টি প্রযুক্তি- আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিক্স, মাইক্রোচিপ ডিজাইনিং এবং সাইবার সিকিউরিটিকে আয়ত্তে আনতে হবে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আমরা দেশের ১৩ হাজার স্কুলে শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করেছি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবটিক্স বিভাগ ও গবেষণা কেন্দ্রও খোলা হয়েছে।
আগামীতে ঢাবির প্রতিটি হলে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন কম্পিউটার ল্যাব তৈরি এবং রোবটিক্স এন্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন রোবটিক্স ল্যাব তৈরির কথা জানিয়ে পলক বলেন, রোবট অলিম্পিয়াডকে আরও সুন্দর করতে এবং শিক্ষার্থীদের ড্রোন তৈরি সম্পর্কে দক্ষ হিসেবে গড়তে অলিম্পিয়াড কর্তৃপক্ষকে ২০টি ড্রোন এবং ৫০ লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান করবো। এছাড়াও উপজেলা পর্যায়ের ৩০০ স্কুলে একটি করে ড্রোন, ভার্চুয়াল রিয়্যালিটিসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করবো। এর ফলে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে দেশ ও দেশের বাইরেও সুনাম অর্জন করতে পারবে।
তিনি বলেন, এখন রোবট আর বিলাসী কোনো পণ্য নয় এটা এখন প্রয়োজনীয় পণ্য হয়ে দাড়িঁয়েছে৷ একসময় মোবাইল ফোনও বিলাসী পণ্য ছিলো কিন্তু এটি এখন সর্বসাধারণের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। রোবট বিভিন্ন দেশের কৃষি, শিল্প খাতে দখল নিচ্ছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে ব্যবহার করে উন্নত বিশ্ব আরও নিজেদের সমৃদ্ধ করছে। বর্তমানে কৃষি খাতে ড্রোন ও উন্নত প্রযুক্তির মেশিনের ব্যবহার শুরু হয়েছে। তোমরা যদি রোবট তৈরি করতে পারো তাহলে আমরা কোথাও আগুন লাগলে উদ্ধার কাজে, নৌকা ডুবিতে উদ্ধার কাজে কিংবা ড্রেনেজ পরিষ্কারের মত রিস্কি প্রয়োজনে রোবট ব্যবহার করতে পারবো। যার ফলে মানুষের জীবন ঝুঁকি কমবে৷ তাছাড়া আমরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত রোবট বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবো।
সভাপতির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মোস্তফা কামাল বলেন, বিশ্বে এখন প্রযুক্তি নির্ভরতা বেড়েই চলছে। বর্তমান মার্কেটে রোবটের চাহিদা খুব দ্রুততার সঙ্গে বেড়ে চলছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের সক্ষম জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে পারি। বর্তমানে আমরা ৬৪ জেলায় প্রথমিকভাবে রোবট অলিম্পিয়াড শুরু করেছি। আগামীতে আমরা উপজেলা পর্যায়ে অন্তত ৩০০ উপজেলায় এই অলিম্পিয়াড শুরু করবো ৷ এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রোবটিক্স রিসার্চের সুযোগ আরও বৃদ্ধি করা দরকার। এসময় তিনি আইসিটি বিভাগ থেকে সকল কারিগরি সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করে ঢাবি উপাচার্যকে অর্থের যোগান নিশ্চিত করতে আলাদা ফান্ড গঠন করার আহ্বান জানান।
উদ্ভোধকের বক্তব্যে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আজকের শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তারাই দেশকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। আমরা রোবট বানাবো কিন্তু আমরা নিজেরা কখনো রোবট হবো না। জিওফ্রে হিনটন যাকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর জনক বলা হয়- রোবট বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মাধ্যমে পৃথিবী হুমকিতে পড়ছে কি-না ভেবে তিনি গুগলের চাকরি ছেড়েছিলেন। সুতরাং আমরা নিজেরাই রোবট হয়ে গেলে সেই আশঙ্কা সত্য বলে প্রমাণিত হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ওই দেশ সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধ যারা বিজ্ঞান ও তার আবিষ্কারকে বেশি গ্রহণ করেছে এবং সেই লক্ষ্যেই বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। আমাদের দেশ হবে প্রযুক্তি ও জ্ঞান নির্ভর, অন্তর্ভূক্তিমূলক, মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক। শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার, ফোন থাকবে কিন্তু সেটার পরিমিত ব্যবহার করতে হবে। তা না হলে নিউরোলজিকাল ডিজঅর্ডার ঘটার সম্ভাবনা থেকে যায় যার ফলে মানুষ লাগামহীন হয়ে পড়ে। এজন্য তিনি শিক্ষার্থীদের মোবাইল ও কম্পিউটার ব্যবহারে সতর্ক করে এবং সৃজনশীল কাজের সাথে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করার জন্য অভিভাবকদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
অনুষ্ঠানে রোবটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুগতা আহমেদ ও ড. আরিফুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে রোবটিক্স বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড এর সভাপতি লাফিফা জামাল, বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক সেজুতি রহমান বক্তব্য প্রদান করেন এবং এসময় বিভিন্ন হলের প্রাধ্যাক্ষবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকগণ উপস্থিত ছিলেন।
Discussion about this post