শিক্ষার আলো ডেস্ক
আগামী ২০২৪ জানুয়ারি হতে বাস্তবায়িত হতে যাওয়া নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের নবম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ব্যবসায় শিক্ষা, মানবিক অথবা বিজ্ঞান বিভাগ বেছে নেয়ার আর কোনো সুযোগ থাকছে না। সেক্ষেত্রে সব শিক্ষার্থীকেই বাধ্যতামূলকভাবে সাধারণ ১০টি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে।
এতদিন মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীদের বিভাগভিত্তিক বিষয়ে অন্তত ৪০০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়েছে। রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানের পাশাপাশি উচ্চতর গণিত, জীববিজ্ঞান, কৃষি শিক্ষা ইত্যাদির মতো বিষয়গুলোর মধ্য থেকে যেকোনো একটিকে বাধ্যতামূলক ও একটিকে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে বেছে নিতো শিক্ষার্থীরা।
তবে বর্তমান শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলোকে একীভূত করে ১০০ নম্বরের ‘বিজ্ঞান’ হিসেবে পড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রম থেকে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা বা মানবিকের মতো বিভাগভিত্তিক বিশেষায়ন তুলে দেয়া হচ্ছে।
নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত মোট ১০টি বিষয় থাকবে। এগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, ডিজিটাল প্রযুক্তি, জীবন ও জীবিকা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। এছাড়া এতদিন মাধ্যমিকে পরীক্ষা হয়েছে নবম ও দশম শ্রেণীর পাঠ্যক্রম মিলিয়ে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে শুধু দশম শ্রেণীর পাঠ্যক্রমের ভিত্তিতে।
নতুন এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হলে উচ্চতর পর্যায়ে বিজ্ঞান শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরো কমবে বলে আশঙ্কা শিক্ষাসংশ্লিষ্টদের বড় একটি অংশের। তারা বলছেন, বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা এতদিন ধরে নবম-দশম শ্রেণীতে পৃথকভাবে তুলনামূলক বড় পরিসরে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও উচ্চতর গণিতের মতো বিষয়গুলোয় পড়াশোনা করে আসছে। মাধ্যমিকের পর যত ওপরের স্তরে যাচ্ছে, বিজ্ঞানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের হারও তত কমছে। এ অবস্থায় মাধ্যমিক পর্যায়েই বিজ্ঞান শিক্ষার পরিসর সংকুচিত করে আনলে পরে বিজ্ঞান শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরো কমে আসবে।
নতুন শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) বক্তব্য হলো ‘এ শিক্ষাক্রমে নবম ও দশম শ্রেণীতে ‘বিজ্ঞান’ বিষয়ের অধীনে অনুপাত ও পরিমাণ, সিস্টেম, সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ সজীব এবং অজীব বস্তুগুলোর গঠন ও আচরণ, পদার্থের গঠন ও আচরণ, বস্তু ও শক্তির মিথস্ক্রিয়া, স্থিতি ও পরিবর্তন, জীববিজ্ঞান এবং পৃথিবী ও মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কে পাঠ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। শিক্ষার্থীদের এসব বিষয়ে এমনভাবে পড়ানো হবে যাতে তারা বৈজ্ঞানিক সাক্ষরতা অর্জন করে, বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে আগ্রহী হয় এবং তাদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়।’
নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান শিখন সমপর্কে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, ‘আমরা এটা করছি যাতে শিক্ষার্থীরা মানবিকতা, মূল্যবোধ, দেশের ইতিহাস-সংস্কৃতি সবকিছু মাধ্যমিক অবধি ভালোভাবে শেখে। এরপর উচ্চ মাধ্যমিকে তারা নিজেদের পছন্দের বিষয়ে পড়বে। এখন উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞানে ৩৫ শতাংশ সময় দিচ্ছে তারা। তখন ৭৫ শতাংশ সময় বিজ্ঞানে দেবে। এভাবে কোন ঘাটতি থাকলে তা পুষিয়ে নেয়া যাবে। নতুন এ শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ কমবে না। বরং আগে বিজ্ঞান নিয়ে কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে যে ধারণাহীনতা ছিল, তা কাটিয়ে ওঠা যাবে।’
Discussion about this post