শিক্ষার আলো ডেস্ক
২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি থেকে চালু হওয়া নতুন কারিকুলামে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন-শেখানোর মাধ্যমে যোগ্যতাভিত্তিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটি প্রথম শ্রেণি, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি থেকে প্রাথমিকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণি ও মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে চালু হতে যাচ্ছে। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটায় নতুন কারিকুলাম পরীক্ষাবিহীন পড়াশোনার মতো মনে হচ্ছে অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট অনেকের কাছে।
তবে দেশে চালু হওয়া নতুন কারিকুলামে পরীক্ষা বাতিলের যে তথ্য ছড়ানো হয়েছে তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেছেন, ‘‘এ নতুন কারিকুলাম নিয়ে অপপ্রচার হচ্ছে। সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই, এটা পরীক্ষা বন্ধ হওয়ার মতো কোনো কারিকুলাম নয়। এতে পরীক্ষা পদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন হবে।’’
সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে নতুন কারিকুলাম বাতিলের দাবি করা কর্মসূচির বিষয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেছেন, পরীক্ষা না হলে তো আমি মূল্যায়ন করতে পারছি না। বার্ষিক পরীক্ষা তো অবশ্যই থাকবে। পরীক্ষা আমরা কেন নিচ্ছি? এটা দেখার জন্য যে, শিক্ষার্থী তার শিখন ফল অর্জন করছে কি-না। ক্লাসে শিক্ষার্থীদের যে মূল্যায়ন, এর জন্য শিক্ষকদের আরও মনোযোগী হতে হবে।
অন্যদিকে কারিকুলাম বাতিলের দাবি তুলে অভিভাবকদের একটি অংশ আন্দোলনে নেমেছেন গত ১৯ অক্টোবর থেকে ।
উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা মনে করছেন, মূল্যায়নের সব নম্বর দেবেন শিক্ষকেরা। শিশুরা পড়বেও না, লিখবেও না। এমনকি তারা বাসায় ফিরে পড়ার টেবিলেও বসছেন না। এ কাজ সেকাজ নিয়ে ব্যস্ত। পড়ার কথা বললেই বলে, যা করছি, তা দেখে শিক্ষকরা নম্বর দেবেন।নতুন শিক্ষাক্রমে তাত্ত্বিক বিষয়ের চেয়ে শিখনকালীন মূল্যায়নকে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। তুলে দেয়া হয়েছে সাময়িক পরীক্ষাও। পরীক্ষা পদ্ধতি না থাকায় ছাত্রছাত্রীরা অধ্যয়নমুখী হচ্ছে না। বইয়ের সাথে দূরত্ব বাড়ায় তারা ডিভাইসমুখী হচ্ছে।অপরদিকে প্রোজেক্টগুলির ইকুইপমেন্ট যতন্ত্র না পাওয়া, সেই সাথে চড়া দামের কারণে এগুলি কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন অভিভাবকরা।
বিজ্ঞানের শাখাসমূহে প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা ছিল ২৫ নম্বর করে। থিওরির সঙ্গে প্রাকটিক্যাল একটি চমৎকার সমন্বয়। এখন যেটি দেখা যাচ্ছে আনন্দের নামে শিক্ষার্থীরা বই পড়া বাদ দিয়ে পুরোটাই প্রাকটিক্যালের মতো অবস্থা।
এখন নিত্যনতুন চিন্তা করা ও পূর্ব প্রস্তুতির প্রয়োগ হয়ে পড়ছে যা সময়, শ্রম এবং ব্যয়সাপেক্ষ বলে তারা মনে করছেন। মূল্যায়ন প্রক্রিয়া বেশ ঝামেলাযুক্ত যা অধিকাংশ শিক্ষকের পক্ষে সামাল দেয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। এদিকে যেসব বিদ্যালয় একটু তৎপর সেখানকার ছেলেমেয়েরা প্রচুর প্রজেক্ট ওয়ার্ক করছে যা অনেক অভিভাবক বলছেন সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। ছেলেমেয়েরা গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থেকে কাজ করায় সকালে ঘুম থেকে ঠিকভাবে উঠতে পারেন না।
এনসিটিবি কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের কাঁধ থেকে পরীক্ষা নামক অদৃশ্য বোঝা নামিয়ে হাতে-কলমে শেখানোর প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করতেই নতুন এই শিক্ষাক্রম। শিক্ষার্থীরা এ পদ্ধতির পড়াশোনা উপভোগ করছে। অভিভাবকদের এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, আমাদের সৃজনশীল পদ্ধতির অভিজ্ঞতা বলছে, এতে শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি মার্কস পাচ্ছে। কিন্তু সে মার্কস তার জন্য যথেষ্টও নয়, আবার সে মার্কসের মাধ্যমে তার মেধা যাচাই করাটাও একেবারে সম্ভব হচ্ছে না। আর বিদ্যালয় পর্যায়ে মার্কসের উপর এতো চাপ যে, এখানে শেখানো গৌণ হয়ে যাচ্ছে। আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, নতুন কারিকুলামে শঙ্কার কিছু নেই।বছর শেষে সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে। এ প্রক্রিয়ায় ভালো শিক্ষার্থীরা যা শিখবে বা যেভাবে শিক্ষাটা পাবে, পেছনের সারির শিক্ষার্থীরাও সেভাবেই শিক্ষাটা পাবে। এতে মেধাভিত্তিক বৈষম্যের নিরসন হবে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী আরও বলেন , নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করতে হবে। এখন পড়াশোনার বিস্তৃতা একটু বাড়বে। শিক্ষার্থীরা একটা বিষয়ে শুধুমাত্র একটা পদ্ধতিতে শিখবে না, শেখার যে পরিধি সেটা বৃদ্ধি পাবে। এখানে চ্যালেঞ্জগুলো হলো শিক্ষক পর্যায়ে। এজন্য আমরা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।
Discussion about this post