শিক্ষার আলো ডেস্ক
আজ সোমবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে নতুন শিক্ষাক্রম ২০২২ এর বাস্তবায়ন বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে দেশে প্রচলিত শিক্ষা কাঠামোয় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এই বছর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে এবং পরবর্তীতে বছরানুক্রমে নতুন নতুন শ্রেণিতে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়াও নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ও চাকুরি নিয়োগের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোলেমান খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহম্মাদ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী, এনসিটিবির সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগামীতে চাকরির ক্ষেত্রেও নিয়োগ হবে পারদর্শিতার মূল্যায়নের ভিত্তিতেই। নতুন শিক্ষাক্রম এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সাযুজ্যপূর্ণ করা হবে চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রও। এছাড়াও আমাদের সরকারি চাকরির পাশাপাশি বর্তমানে বেসরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সনদের চেয়েও বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে দক্ষতারও ওপর। আর নতুন শিক্ষাক্রম আমাদের শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছে।
বর্তমানে দেশের উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের ক্ষেত্রে আমাদের একক ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে এনটিএ গঠনের জন্য আরও দু-তিন বছর সময় লাগবে। নতুন শিক্ষাক্রমে যে-সব শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন তারা ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগেই আমরা এ পরিবর্তন আনতে পারব বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন, তারই অংশ হিসেবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী নাগরিক তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষা ব্যবস্থার রূপান্তর ঘটানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রত্যাশা করা হয়েছে, শিক্ষা ব্যবস্থার এই রূপান্তরের মধ্যে দিয়েই ভবিষ্যতের স্মার্ট শিক্ষার্থীর বুনিয়াদ রচিত হবে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষার উদ্দেশ্যে শিক্ষা ব্যবস্থার সকল ধারাকে বিবেচনা করে প্রথমবারের মতো জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ প্রণয়ন করা হয়েছে।
ডা. দীপু মনি বলেন, বিশ্বের ১০২টি দেশের মধ্যে ৭৬টি দেশের শিক্ষাক্রমে সুনির্দিষ্টভাবে দক্ষতাভিত্তিক যোগ্যতাকে নির্ধারণ করা হয়েছে এবং ৫১টি দেশের শিক্ষাক্রম সম্পূর্ণ রূপান্তরমূলক দক্ষতাভিত্তিক করা হয়েছে। ওইসিডি (২০১৮) ভুক্ত দেশগুলোও এই পরিবর্তিত সময়ের চাহিদা অনুযায়ী একটা সাধারণ শিক্ষাক্রম রূপরেখা তৈরি করেছে, বেশ কিছু উন্নয়নশীল দেশও যার অংশীদার এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর দিকে তাকালেও দেখা যায়, ভুটান, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকাসহ অন্যান্য দেশও তাদের শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের কাজ শুরু করেছে।
বাংলাদেশও একইভাবে শিক্ষাব্যবস্থায় একটি সার্বিক পরিবর্তনের তাগিদ অনুভব করছিল যা একই সাথে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জাতীয় শিক্ষার লক্ষ্য শিখন-শেখানো প্রক্রিয়া, মূল্যায়ন, শিখন পরিবেশ, শিখন উপকরণ, শিক্ষা ব্যবস্থাপনা এবং শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, এলাকার জনগণসহ সকল উপাদানের মাঝে আন্তঃসম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে একই পরিবর্তনের ধারায় নিয়ে আসবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ সেই দীর্ঘ তাগিদ, পরিকল্পনা, গবেষণা ও অভিজ্ঞতার ফসল। কাজেই নিঃসন্দেহে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।
Discussion about this post