নিউজ ডেস্ক
করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্তের চিকিৎসায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) হাসপাতালের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে তিন সপ্তাহেই। চীন সরকার উহানে এ ধরনের একটি হাসপাতাল নির্মাণ করেছিল ১০ দিনে।
বসুন্ধরার হাসপাতালটির অবকাঠামো আগেই বানানো ছিল। শুধু বসানো হয়েছে শয্যা ও আনুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতি।
দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের জমি ও অবকাঠামো ব্যবহার করে হাসপাতাল বানানোর মূল কাজটি করছে সরকারের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
আইসিসিবির চারটি কনভেনশন সেন্টার ও একটি ট্রেড সেন্টারে গড়ে উঠেছে দেশের সবেচেয়ে বড় এ হাসপাতাল।
ধারণা করা হচ্ছে, দেশের দুর্যোগের সময় দ্রুততার সঙ্গে নির্মিত বৃহত্তম এ হাসপাতালটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন।
কোভিড-১৯ বিপর্যয় শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং সরকারের যতদিন ব্যবহারের প্রয়োজন শেষ না হবে ততদিন বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে আইসিসিবিকে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে। বসুন্ধরার কাছ থেকে আইসিসিবির সব স্থাপনা বুঝে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপ দিতে গত ১৪ এপ্রিল কাজ শুরু করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর (এইচইডি)।
বৃহস্পতিবার (৭ মে) এইচইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালের অবকাঠামোগত কাজ আমরা শতভাগ শেষ করে ফেলেছি। এখানে পরিচালক, সহকারী পরিচালক নিয়োগ হয়েছে। এখন তাদের হাতে হাতে সবকিছু বুঝিয়ে দেব। স্বাস্থ্য অধিদফতর যখন মনে করবে, তখন চালু করবে।
অফিস থেকে জানতে পেরেছি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৯ মে দুপুর ১২টায় হাসপাতালটি উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক করেছে। আমরা সেই অপেক্ষায় আছি এবং শতভাগ প্রস্তুত আছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা যতটুকু শুনেছি ডাক্তার-নার্স নিয়োগ হয়ে গেছে। কী কী সহায়ক জনবল দরকার সেটা নিয়োগ দিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব এখন স্বাস্থ্য অধিদফতরের।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দু’জন কর্মকর্তা অনানুষ্ঠানিক সফরে হাসপাতালটি ঘুরে গেছেন। আমরা তাদের সবকিছু দেখিয়েছি। তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ধারণা করছি, প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে হাসপাতালটি উদ্বোধন করতে পারেন।
উদ্বোধনের বিষয়টি নিশ্চিত হতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমানের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মন্ত্রী ৯ মে (শনিবার) দুপুর ১২টায় উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক করেছেন। কে উদ্বোধন করবেন সেটা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তীতে তিনি ঠিক করবেন।
আইসিসিবির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এম এম জসীম উদ্দিন বলেন, ৯ মে উদ্বোধনের কথা মৌখিকভাবে শুনেছি। তবে এখনও চিঠি পাইনি। এর আগে ৪ মে উদ্বোধনের একটা তারিখ পেয়েছিলাম। তবে সেটা হয়নি। তাই চিঠি না পেয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছি না।
করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে সরকারকে আইসিসিবিতে পাঁচ হাজার শয্যার একটি সমন্বিত অস্থায়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি দিলে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল পরিদর্শন করে হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। নানা হিসাব-নিকাশ শেষে সেখানে দুই হাজার ১৩ শয্যার হাসপাতাল ও ৭১ শয্যার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। আইসিসিবির সুবিশাল চারটি কনভেনশন হল ও একটি এক্সপো ট্রেড সেন্টারে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ হাসপাতালটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে সরকারের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।
কী থাকছে এই হাসপাতালে:
অস্থায়ী হাসপাতালটি নির্মাণের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, তিনটি কনভেনশন সেন্টার ও একটি প্রদর্শনী তাঁবুতে দুই হাজার তেরটি শয্যা পাতা হয়েছে।
তিনি বলেন- “এখানে আসলে আইসোলেশন করে রাখা হবে আর পোর্টেবল অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। দুই বেডের মাঝখানে আমরা বিদ্যুতের লাইন টেনে দিয়েছি ওখানে সকেট আছে।
কোন রোগীর যদি পোর্টেবল অক্সিজেন লাগে অথবা অন্য কিছু লাগে যাতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যায় এবং ডাক্তাররা যেন তার রুমে বসে প্রত্যেকটা রোগীকে দেখতে পারেন তার জন্য সিসিটিভির ব্যবস্থা করা হয়েছে। মনিটরটা ডাক্তারের রুমে থাকবে উনি দেখতে পাবেন।”
দুই হাজারের বেশি শয্যা পাতা হলেও কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর জন্য জরুরি আইসিইউ ইউনিট ও ভেন্টিলেশন সুবিধা এখনো সংযোজন করা হয়নি।
তবে এসব সুবিধার জন্য বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারের একটি ইউনিটে ৪৫ হাজার বর্গফুট জায়গা প্রস্তুত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় এখনো এটি আটকে আছে, বলছেন কর্মকর্তারা।
Discussion about this post