শিক্ষার আলো ডেস্ক
নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়ন শুরু হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর)। আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সামষ্টিক মূল্যায়নের সব কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। সামষ্টিক মূল্যায়নে বলা যাবে না ‘কেউ ভালো, কেউ খারাপ’। তারা কাজ করতে করতে শিখবে-জানবে। মোট কথা হাতে-কলমে শেখানো এ শিক্ষাক্রমের মূল উদ্দেশ্য।
জানা যায়, চলতি বছর মাধ্যমিক পর্যায়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে পড়ালেখা করছে শিক্ষার্থীরা। বছরের মাঝামাঝি সময়ে তাদের ষাণ্মাসিক মূল্যায়ন হয়। বছরের শেষে এখন হবে সামষ্টিক মূল্যায়ন। এ মূল্যায়ন প্রক্রিয়া কেমন এবং কীভাবে করতে হবে, তার টুলস (নির্দেশিকা) গত ৫ নভেম্বর স্কুলে পাঠিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এটি প্রণয়ন করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, নতুন শিক্ষাক্রমে পারদর্শিতার সূচক (পারফরম্যান্স ইন্ডিকেটর) অনুযায়ী ফল প্রকাশ করা হবে। সূচক ধরে শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করে ত্রিভুজ, বৃত্ত ও চতুর্ভুজ চিহ্ন দেবেন শিক্ষকরা। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ১০টি করে বিষয়। সেগুলো হলো—বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ডিজিটাল প্রযুক্তি, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, জীবন ও জীবিকা, ধর্মশিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। সবগুলো বিষয়েই চিহ্ন দিয়ে মূল্যায়ন করবেন শিক্ষকরা।
নির্দেশিকার ‘শ্রেণি উন্নয়ন নীতিমালা’ অংশের তথ্যানুযায়ী— একজন শিক্ষার্থীকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে দুটি বিষয় বিবেচনা করা হবে। প্রথমত শিক্ষার্থীর স্কুলে উপস্থিতির হার এবং দ্বিতীয়ত বিষয়ভিত্তিক পারদর্শিতা। ৭০ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিত থাকলে তাকে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ধরা হবে এবং পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা যাবে।
দ্বিতীয় বিবেচ্য বিষয় হলো পারদর্শিতার নির্দেশকের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীর অর্জনের মাত্রা। সর্বোচ্চ তিনটি বিষয়ের ট্রান্সক্রিপ্টে সবগুলো পারদর্শিতার নির্দেশকে কোনো শিক্ষার্থীর অর্জনের মাত্রা যদি ‘চতুর্ভুজ’ স্তরে থাকে, তবে তাকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তরণের জন্য বিবেচনা করা যাবে না। এমনকি ৭০ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিত থাকলেও।
সপ্তম শ্রেণির গণিত বিষয়ের ৮ নম্বর অভিজ্ঞতার শিরোনাম ‘চলো বৃত্ত চিনি’। এ অধ্যায়ের পারদর্শিতার সূচক ৭.৩ ও ৭.৮। পারদর্শিতার সূচক ৭.৩.১ হলো ক্ষেত্র অনুযায়ী ‘উপযুক্ত পদ্ধতি ব্যবহার করে পরিমাপের ফল নির্ণয়’। এ সূচকে পারদর্শিতার মাত্রার ঘরে বলা হয়েছে, ‘যে কোনো একটি পরিমাপ পদ্ধতি প্রয়োগ করে ফল নির্ণয় করতে পেরেছে’ এমন শিক্ষার্থী চতুর্ভুজ পাবে।
আবার ‘একাধিক পরিমাপ পদ্ধতি ব্যবহার করে ফল নির্ণয় করতে পেরেছে’ এমন শিক্ষার্থীরা বৃত্ত চিহ্নে মূল্যায়িত হবে। আর ‘বাস্তব সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে যথাযথ পরিমাপ প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে ফল নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে পারা’ শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে ‘দক্ষ’ বিবেচিত হবে এবং তাদের ত্রিভুজ চিহ্নে মূল্যায়ন করবেন শিক্ষকরা।
নতুন এ পদ্ধতিতে তিনটি চতুর্ভুজ পেলে এক প্রকার ফেল ! এ নিয়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে অভিভাবকদের মধ্যে। এখন দলগত ও একক কাজ ভালো করলেও কোনো শিক্ষক যদি কাউকে চতুর্ভুজ দিয়েও দেন, তা চ্যালেঞ্জ করার বা অভিযোগ করার কোনো সুযোগ থাকছে না। বাধ্য হয়ে অভিভাবকরা সবাই এখন ত্রিভুজ পাওয়ার জন্য শিক্ষকের কাছে ধরনা দেবেন।আবারও প্রাইভেট পড়তে বাধ্য হবে ছাত্রছাত্রীরা !আগে শিক্ষকের কাছে ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞানসহ দু-তিনটা সাবজেক্ট প্রাইভেট পড়লেই হতো। এখন ১০ সাবজেক্টে তো ১০ জন শিক্ষকের কাছে পড়তে হবে। তা না হলে দেখা যাবে, শিক্ষার্থী চতুর্ভুজ পাচ্ছে। এমন সব নেতিবাচক ভাবনা তৈরী হচ্ছে সবার মনে।
অন্যদিকে এর সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে এনসিটিবির শিক্ষাক্রম ইউনিটের সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান জানিয়েছেন, ‘যে টুলস শিক্ষকদের দেওয়া হয়েছে, তাতে খুব স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। একজন শিক্ষার্থীকে চাইলেই চতুর্ভুজ দেওয়া সম্ভব নয়। কয়েকটি সূচকের মাত্রা মিলিয়ে সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। আমার তো মনে হয় কেউ এত বেশি চতুর্ভুজ পাবে না। এগুলো নিয়ে অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের চিন্তা না করাই ভালো।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীর মূল্যায়নের রেকর্ড সংগ্রহের জন্য ত্রিভুজ, বৃত্ত, চতুর্ভুজের মতো চিহ্নগুলো ব্যবহার করা হলেও ট্রান্সক্রিপ্টে এগুলোর কোনো উল্লেখ থাকবে না। এটা নির্দেশিকায় উল্লেখ রয়েছে। সেখানে আমরা বলেছি, ট্রান্সক্রিপ্টের ফরম্যাটে উল্লেখিত চিহ্নগুলোর পরিবর্তে শিক্ষার্থীর অর্জিত সর্বোচ্চ পারদর্শিতার মাত্রা টিক চিহ্ন দিয়ে চিহ্নিত করা হবে।’
Discussion about this post