অনলাইন ডেস্ক
অধ্যাপক জন রাইট। যুক্তরাজ্যের ব্রাডফোর্ড ইনস্টিটিউট ফর হেলথ রিসার্চের প্রধান। তিনি একাধারে চিকিৎসক এবং মাহামারি বিশেষজ্ঞ। আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলের কলেরা, এইচআইভি এবং ইবোলা মহামারি বিষয়ে রয়েছে তার যথেষ্ট জ্ঞান।
করোনা পরিস্থিতিতে হার্টের রোগীরা কী ধরনের ভোগান্তিতে পড়ছেন বা তারা কী করছেন তা নিয়ে এই চিকিৎসকের অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করেছে বিবিসি। একইসঙ্গে সেখানে রয়েছে যুক্তরাজ্যের ব্রাডফোর্ডে কৃষ্ণাঙ্গ, এশিয়ান এবং জাতিগত সংখ্যালঘুরা কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে কেমন আছেন সে কথাও। পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো জন রাইটের অভিজ্ঞতা-
করোনা মাহামারি ছড়িয়ে যাওয়ার পর থেকে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক সংক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে আসার প্রবণতা উদ্বেগজনক হারে হ্রাস পেয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমাদের চিন্তার কারণ হলো, মানুষ আসলে হাসপাতালে আসতে ভয় পাচ্ছে। কারণ হাসপাতালে এসে উল্টো যদি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে এটা নিয়ে তারা চিন্তিত!তাই প্রয়োজনে থাকার পরও তারা হাসপাতালমুখী হতে চাইছেন না।
কিন্তু আসলেই কি বিষয় তাই? নাকি মহামারির কারণে যে লকডাউন চলছে তারও কিছু অবদান রয়েছে? আমাদের যে গতিময় জীবন ছিল তাতে লাগাম টেনে ধরেছে এ লকডাউন। ফলে আমাদের জীবন হয়ে গেছে ধীর। পাশাপাশি বাতাস হয়েছে পরিষ্কার কারণ সড়ক নেই যানবাহনের চলাচল। এই যে পরিচ্ছন্ন বায়ুতে আমরা শ্বাস নিচ্ছি তা কি আমাদের খোশমেজাজে রাখতে সহযোগিতা করছে না? এই ধীর জীবনযাপন হয়তো নতুন স্বাস্থ্যকর অভ্যাস এবং লাইফস্টাইল হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফিটবিট হেলথ এবং ফিটনেস ট্র্যাকার ব্যবহারকারীদের কল্যাণে একটি বিষয় সামনে চলে এসেছে। হার্ট রেট বা হৃদকম্পন ভালো স্বাস্থ্যের নির্দেশক। হৃদকম্পন কম থাকাটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আর ফিটবিট খুঁজে পেয়েছে, লকডাউনের সময়ে গড় হৃদকম্পন কমেছে। একইসঙ্গে কমেছে হাঁটার পরিমাণও। মানুষ ডেক্সভিত্তিক কাজ করছে বেশি এবং বেড়েছে মোবাইল নির্ভরতা। এসময়ে বেড়েছে ঘুমের পরিমাণও। মানুষ এখন অন্য সময়ের চেয়ে আগে বিছানায় যাচ্ছেন এবং ঘুমাচ্ছেন লম্বা সময় ধরে।
অধ্যাপক অ্যালিস্টার হল। ইয়র্কশায়ার অ্যান্ড হাম্বারের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ রিসার্চের এ কার্ডিওলোজিস্ট এবং ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর বলেছেন, তিনি এখনো এরকম কোনো প্রমাণ দেখেননি যে, মানুষ হার্ট অ্যাটাকের পরও বাসায় অবস্থান করছেন। তবে তিনি দেখেছেন, মানুষ প্রচুর পরিমাণে ব্যায়াম করছেন।
‘আমাকে হাসপাতালে গাড়ি চালিয়ে যেতে হয়। এসময় আমি দেখি প্রচুর মানুষ রাস্তায় হাঁটছেন। যদিও আমি আগে এমন পরিস্থিতি দেখিনি।’
তিনি ভাবছেন, লকডাউনের এসময়ে মানুষ আরও বেশি সক্রিয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডেস্কে বসে থাকার চেয়ে বরং তারা এখন হাঁটাচলা করছেন, ঘুরছেন-ফিরছেন। একইসঙ্গে ওষুধ খাওয়ার কথাও মানুষ মনে রাখছে ঠিকঠিক।
‘কোলস্টেরল বেড়ে গেলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো ঘটনাগুলো ঘটে। বর্তমানে মানুষ ওষুধ নিয়ে অত্যন্ত সচেতন এবং তারা তা সময়মতোই খান, যা অন্যসময় ভুলে যেতেন।’
আর একটু বেশি ঘুমানোও মানুষকে ভালো রাখছে বলে মনে করে তিনি।
যদিও এর একটি বাজের দিকের কথা বলেছেন অধ্যাপক হল। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত এটার কিছু বাজে দিকও আছে। প্রচুর চকলেট খাওয়া অথবা মদ্যপানের পর অত্যধিক ঘুমানোর ফলে ক্ষতি হতে পারে।’
এটা হয়তো এখন তেমন একটা ভোগাবে না। তবে পরে সমস্যা হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত কৃষ্ণাঙ্গ, এশিয়ান এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের (বিএএমই) নিয়ে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন। এর সম্ভাব্য কিছু কারণ হলো, দারিদ্র্যতা, নানা শারীরিক সমস্যা, একসঙ্গে অনেক লোকের বসবাস। তাছাড়া স্বাস্থ্য এবং সেবাখাতে সামনের কাতারের কর্মী হওয়ার কারণেও তারা ঝুঁকিতে রয়েছেন বেশি। কারণ যাই হোক না কেন, এটা স্বাস্থ্যখাতে ভবিষ্যতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এটা ব্রাডফোর্ডের জন্য জরুরি একটি বিষয়। কেননা, এখানকার এক তৃতীয়াংশ বাসিন্দা এবং ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের কর্মীরা শেতাঙ্গ নন।
ড. স্যাম খান। অ্যাকিউট মেডিসিনের একজন কনসালটেন্ট। তিনি গত ২০ মার্চ কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হন। প্রায় ছয় সপ্তাহ ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। এক পর্যায়ে তার হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। তার মূল উপসর্গ ছিল শুকনো কাশি এবং শারীরিক দুর্বলতা। বর্তমানে তিনি সুস্থ হয়ে চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে কাজে যোগ দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।
বিএএমই কর্মীদের সামনের সারি থেকে সরানোর বিষয়ে তিনি কী ভাবছেন সে বিষয়ে আমি তার কাছে জানতে চাইলাম।
তিনি যা বললেন তা হলো, এটা ব্রাডফোর্ডে খুবই কঠিন হবে। একইসঙ্গে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে একটি বিরাট অংশ তারা। তাছাড়া কোনো স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসক শুধুমাত্র তারা কৃষ্ণাঙ্গ, এশিয়ান বা জাতিগত সংখ্যালঘু বলেই রোগী দেখতে পারবেন না এমন বলাটাও খুবই উদ্ভট।
ড. স্যাম বলেন, ‘আমি জানি না আপনি কীভাবে এটা করতে চাইছেন বা করবেন। এরচেয়ে বরং আপনাকে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে চিন্তা করতে হবে।’
দীর্ঘমেয়াদে ড. স্যামের মতো আরও অনেক অ্যাকিউট ফিজিশিয়ানের জন্য বিষয়টি কী দাঁড়াবে। তারা জানতেও পারবেন না কোন রোগী কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত আর কে নয়।
স্যাম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তবে কি যারাই হাসপাতালে আসবে তাদেরই পরীক্ষা করা উচিত? যা আমরা বর্তমানে এইচআইভির ক্ষেত্রে করছি।’
আমি জানতে চাইলাম বিষয়টি নিয়ে তিনি চিন্তিত কি-না?
তার ভাষ্য হলো, অবশ্যই। এটা চিন্তিত হওয়ার মতোই বিষয়। এটা আমাকে চিন্তিত করে। আমার চেয়ে আমার স্ত্রীকে বেশি এ বিষয়টি চিন্তাগ্রস্ত করে রাখে। এটা দেখেও আমি ভয় পাই। সৌজন্যে-বাংলানিউজ২৪.কম
Discussion about this post