শিক্ষার আলো ডেস্ক
অবশেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশের ৯০টি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের (বিএএড কলেজ) সনদের মান সমান নিশ্চিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এর ফলে ৭৬টি বেসরকারি বিএড কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তি এবং কলেজগুলোয় অর্জিত সনদে এমপিও স্কেল পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধা থাকলো না।
এই প্রজ্ঞাপন জারির পর যেসব প্রতিষ্ঠান বিভ্রান্তিমূলক কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্যে বিভান্তিমূলক কাজ করবে, প্রশিক্ষণের মান নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হবে তাদের অধিভুক্তি বাতিল করা হবে।’
উপাচার্য আরও জানান, ভর্তি নিয়ে প্রতিযোগিতার কারণে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়ে থাকে। এই বিভান্তি দূর করতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নির্বিশেষে সবক্ষেত্রেই অর্জিত সনদের মান সমান।
প্রসঙ্গত, প্রশিক্ষণ নিয়ে বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের বাতিল করা চিঠি প্রচার করে এই বিভ্রান্তি ছাড়ানো হচ্ছিল। বিভ্রান্তি ছড়ানোর ঘটনায় এর আগেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বেসরকারি কলেজগুলো বিভ্রান্তি অবসানে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করে।
এর পর গত ২ জানুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশের ৯০টি বেসরকারি কলেজের সনদের মান সমান উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ৯০টি বিএড কলেজের হালনাগাদ তালিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হলো। এর মধ্যে বেসরকারি ৭৬টি এবং সরকারি বিএড কলেজ ১৪টি। সারা দেশব্যাপী বিস্তৃত বিএড কলেজগুলোর অবস্থান, অবকাঠামো ও শিক্ষক সংখ্যার তারতম্য থাকলেও অভিন্ন কারিকুলাম অনুযায়ী পাঠদান এবং কোর্স সমাপনান্তে অভিন্ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি অর্জন করে বিধায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জিত সনদের মান প্রতিষ্ঠান নির্বিশেষ সর্বক্ষেত্রেই সমান। সময়ে সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভ্রান্তিমূলক তথ্য আমলে না নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হলো।
আরও পড়ুন: শিক্ষকতার সুযোগ রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রথম অধিভুক্তি লাভ করে। এরপর ২০০৮ সাল থেকে কিছু কিছু মানহীন কলেজের ব্যর্থতার কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি পর্যবেক্ষণ টিম সারা দেশের বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলো পরিদর্শন করে প্রশিক্ষণের মান নির্ণয়ের চেষ্টা করেন। প্রশিক্ষণের গুণগতমান বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন টিম ৩৮টি বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজকে লাল তালিকাভুক্ত করে তা বন্ধের সুপারিশ করে। কিন্তু সরকারের আদেশের বিরুদ্ধে ২৩টি কলেজ আদালতে মামলা করার কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বন্ধ করতে পারেনি। ফলে প্রতি বছর প্রশিক্ষণার্থী ভর্তির সময় কলেজগুলো গুজব—বিভ্রান্তি ছড়ায়। বিভান্তি ছড়িয়ে বলা হয়, ২৩ কলেজের বাইরে ভর্তি করানো যাবে না এবং ভর্তি হলে অর্জিত সনদ দিয়ে উচ্চতর স্কেল ও এমপিওভুক্ত হওয়া যাবে না। অথচ দেশে অধিভুক্ত বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ রয়েছে ৭৬টির বেশি।
রাজধানী ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন কলেজের অধ্যক্ষ ও বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করায় অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে কেউ বাড়তি সুযোগ নিতে পারবে না।’
Discussion about this post