নিউজ ডেস্ক
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে এক মাস ধরে করোনাভাইরাসে শনাক্তের নমুনা সংগ্রহ করে আসছে জে কে জি হেলথকেয়ার নামে ঢাকার একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। নমুনা সংগ্রহের জন্য সংগঠনটি ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পৃথক ছয়টি স্থানে ৪৪টি বুথ স্থাপন করেছে। এসব এলাকা থেকে প্রতিদিন তিন শ থেকে সাড়ে তিন শ জনের নমুনা সংগ্রহ করে থাকে। পরে সেটি সরকার–নির্ধারিত করোনা শনাক্তকরণ ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যাঁরা নমুনা দেন, সেই পরীক্ষার ফলাফল মুঠোফোনের মাধ্যমে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়।
বিনা পয়সায় করোনা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান জে কি জে হেলথকেয়ার, ওভাল গ্রুপের একটি অঙ্গসংগঠন। ওভাল গ্রুপের চেয়ারম্যান চিকিৎসক সাবরিনা আরিফ চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে আমরা সর্বপ্রথম করোনার ঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চল নারায়ণগঞ্জে বুথ স্থাপন করি। পরবর্তী সময়ে ঢাকার কয়েকটি এলাকায় এই বুথ স্থাপন করা হয়। ফলে ওই সব এলাকার মানুষ ঝুঁকি এড়িয়ে নমুনা পরীক্ষা করাতে পারছে। আমার জানামতে, বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরাই প্রথম, এই নমুনা সংগ্রহ করছি।’
প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, খিলগাঁও গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সবুজবাগ আদর্শ গার্লস কলেজ এবং কড়াইল বস্তি এলাকায় করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের বুথ স্থাপন করেছে জে কি জে হেলথকেয়ার। এ ছাড়া গত ৮ এপ্রিল থেকে নারায়ণগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও সিদ্ধিরগঞ্জের এম এইচ বুলু স্কুল অ্যান্ড কলেজে বুথের মাধ্যমে করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত বুথগুলোতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
সাবরিনা আরিফ চৌধুরী জানান, ‘যিনি মনে করছেন, তিনি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত। সেসব মানুষ আমাদের বুথে আসার পর নমুনা দিতে পারছেন। তবে আমাদের বুথে নমুনা দিতে হলে মোবাইল নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে। বুথে আসার পর আমাদের প্রশিক্ষিত কর্মীরা করোনা আক্রান্ত সন্দেহভাজন ব্যক্তির কাছে কয়েকটি তথ্য জানতে চান। যেমন, তিনি ডায়াবেটিস কিংবা কিডনিজনিত রোগে ভুগছেন কি না। এমন কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে গেছেন কি না, যিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। সব তথ্য ডেটা ফর্মে লিপিবদ্ধ করার পর প্রশিক্ষিত কর্মীরা করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করেন।’
সংগঠনের কর্মকর্তারা জানান, রাজারবাগ, সবুজবাগ, খিলগাঁও এবং কড়াইল বস্তির পাশাপাশি আগামী সপ্তাহ থেকে নমুনা সংগ্রহের জন্য রাজধানীর গুলশান, উত্তরা ও বাড্ডা এলাকায় বুথ স্থাপন করা হবে।
জে কি জে হেলথকেয়ারের কর্মকর্তা শাম্মী ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার পাশাপাশি উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায়ও নমুনা সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে গুলশান ও উত্তরার দুটি এলাকায় এবং বাড্ডায় নমুনা সংগ্রহের জন্য ৪০টির মতো বুথ স্থাপন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাংলাদেশে যেসব বিদেশি কূটনৈতিক রয়েছেন, তাঁদের জন্য গুলশানে আলাদা বুথ হবে। আর স্থানীয়দের নমুনা সংগ্রহের জন্য আলাদা বুথ স্থাপন করা হবে।’
জে কি জে হেলথকেয়ারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের জন্য চার শ স্বাস্থ্যকর্মী বিভিন্ন বুথে কাজ করে আসছেন। নমুনা সংগ্রহের বুথ স্থাপনের আগে নমুনা সংগ্রহকারী সব কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
জে কি জে হেলথকেয়ারের আহ্বায়ক সাবরিনা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো কর্মী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হননি। প্রত্যেক কর্মীকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর নমুনা সংগ্রহের কাজে পাঠানো হয়েছে। প্রত্যেক কর্মীকে পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) সরবরাহ করাসহ সব ধরনের জিনিসপত্র সরবরাহ করে আসছি। সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় যেকোনো মানুষ আমাদের বুথে নমুনা দিয়ে করোনা পরীক্ষা করাতে সক্ষম হচ্ছেন।’ বুথের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহ করা হলে স্বাস্থ্যকর্মী সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে না বলে মন্তব্য করেন চিকিৎসক সাবরিনা। তিনি বলেন, ‘বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাঁরা নমুনা সংগ্রহ করছেন, তাঁরা কিন্তু সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। কারণ নাকের ভেতর থেকে সোয়াব সংগ্রহ করতে হলে স্বাস্থ্যকর্মীকে ওই ব্যক্তির খুব কাছাকাছি চলে যেতে হয়। আবার যখন নাকের ভেতর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়, তখন রোগী অবধারিতভাবে হাঁচি দেন। এতে নমুনা সংগ্রহকারী কিন্তু সব সময় ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।’
বেসরকারি সংগঠন জে কি জে হেলথকেয়ার বলছে, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত সন্দেহভাজন যে কেউ নমুনা দেওয়া এবং পরীক্ষার ফলাফল জানার ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির মুঠোফোন (+৮৮০১৭৯২৪৪৪১১১) নম্বরে যোগাযোগ করতে পারবেন। সৌজন্যে-প্রথম আলো
Discussion about this post