জাপান চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে অংশ নিতে শুরু করায় তার সমাজ ও উৎপাদন ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্স, আইওটি, বিগ ডাটা ইত্যাদি প্রযুক্তি দেশটির রূপান্তরে একটি নতুন ভূমিকা পালন করছে এবং শিল্প উৎপাদন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ ২.০-এর কৌশল ও কর্মসূচি প্রণয়নে আমাদের তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ ১.০, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, পঞ্চম শিল্পবিপ্লব ও সোসাইটি ৫.০ এর সামগ্রিক বিষয়াদির পাশাপাশি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার কথাও মনে রাখতে হবে।
আমরা যদি ২০০৮ সালের ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বরকে বিবেচনা করি তবে সে দিন থেকেই বস্তুত আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির দ্বিতীয় স্তরে পা রাখব। এরই মাঝে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির প্রথম ধাপ অতিক্রম করে তারও পরের দুই বছর তথা শেখ হাসিনার ধারাবাহিক তৃতীয় সরকারের মেয়াদ শেষে কি কি লক্ষ্য অর্জন করব তার আলোচনা করেছি। আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালে ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারে ২০২৩ সালের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করায় আমার ডিজিটাল বাংলাদেশ ২.০ এর সূচনার কাজগুলো সেখান থেকেই জেনে গেছি। আমি মনে করি, বিশেষত ডিজিটাল দুনিয়ার লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের বহমান কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ ২.০ এর লক্ষ্যমাত্রাকেও সহজে নির্ধারণ করতে পারব। ২০২৩ সালের মাঝে বর্তমান সরকার যেসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে বা যেসব পরিকল্পনা গ্রহণ করবে তারই ধারাবাহিকতা ডিজিটাল বাংলাদেশ ২.০ এ বহমান থাকবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য এর আগে আমি ৫টি কৌশল ও প্রতিটি কৌশলের জন্য ৬টি কর্মসূচি নির্ণয় করেছি। আমি মনে করি কালক্রমে সেই কৌশলগুলোর সামান্য নবায়ন হয়তো প্রয়োজন হবে। তবে আপাতত ২০২৩ সাল অবধি আমাদের ডিজিটাল যাত্রায় আমরা আমার নির্ণিত কৌশল-কর্মসূচি ও জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালার কর্মসূচিগুলোকে অনুসরণ করতে পারি। একই সঙ্গে আমাদের এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, সোসাইটি ৫.০ ও পঞ্চম শিল্পবিপ্লবের কথাও মনে রাখতে হবে। আমার নিজের বিশ্বাস ২০২১ সালের মাঝে পৃথিবী জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, ৫জি, চতুর্থ বা ৫ম শিল্পবিপ্লব বা সোসাইটি ৫.০ এর বদৌলতে সামনের দিনগুলোকে আরো স্পষ্ট করতে সক্ষম হবে।
প্রথমেই দেখা যাক ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য আমাদের কৌশল ও কর্মসূচিগুলো কি। প্রথম কৌশলটি হলো : শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর ও ডিজিটাল দক্ষতাসম্পন্ন মানবসম্পদ উন্নয়ন; এর জন্য আমি ছয়টি কর্মসূচি গ্রহণেরও প্রস্তাব করেছি- ক) পাঠ্যসূচিতে ডিজিটাল প্রযুক্তি, খ) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব, গ) ডিজিটাল ক্লাসরুম, ঘ) ডিজিটাল পাঠ্যবিষয়, ঙ) শিক্ষক প্রশিক্ষণ, চ) ডিজিটাল প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণ।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য দেশের সব জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল দক্ষতাসম্পন্ন মানবসম্পদে পরিণত করা হচ্ছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমি নিশ্চিতভাবেই এটি উপলব্ধি করি যে ২০২১ সাল নাগাদ এই ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন অতি সামান্যই হবে। আমি দুঃখের সঙ্গে এ ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যথাযথ উদ্যোগের অভাব অনুভব করি এবং সে জন্য আমাদের প্রস্তুতিও নগণ্য। এমনকি ডিজিটাল যুগে আমাদের শিশুদের যে ডিজিটাল দক্ষতা থাকা দরকার তার প্রতিও সামান্যতম নজর দিচ্ছি না আমরা। যেসব দক্ষতা থাকা দরকার সেগুলো হলো- ক) ডিজিটাল পরিচিতি, খ) ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা, গ) ডিজিটাল সুরক্ষা, ঘ) ডিজিটাল নিরাপত্তা, ঙ) ডিজিটাল আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা, চ) ডিজিটাল যোগাযোগ, ছ) ডিজিটাল সাক্ষরতা, জ) ডিজিটাল বিশ্বে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় অধিকারগুলো সচেতনভাবে আয়ত্তে রাখা। তিনটি স্তরে এই দক্ষতা অর্জন করা যেতে পারে। আমরা এই বিষয়ে তেমনটা সচেতন নই এবং আমাদের নতুন প্রজন্ম জানে না যে, তাদের এমন দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তারা এটিও জানে না যে এসব দক্ষতা তিনটি স্তরে অর্জন করতে পারে। স্তরগুলো হলো- ডিজিটাল নাগরিকত্ব, ২. ডিজিটাল সৃজনশীলতা, ৩) ডিজিটাল উদ্যোক্তা।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে আমাদের দ্বিতীয় কৌশল হলো: সরকারের ডিজিটাল রূপান্তর ও জনগণের সব সেবা ডিজিটালকরণ; এই কৌশলটির জন্য ছয়টি কর্মসূচি হলো- ক) কাগজবিহীন সরকার, খ) সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, গ) সরকারের ডিজিটাল সংযুক্তি, ঘ) সরকারের সেবাকেন্দ্র, ঙ) ডিজিটাল নিরাপত্তা, চ) সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল করা। এই কৌশল অবলম্বন করে আমাদের অগ্রগতি তুলনামূলকভাবে ভালো। কিন্তু সেই অর্জনকেও আমরা খুব সন্তোষজনক বলতে পারব না। আমরা কেবল সরকারি সেবাগুলোর কথাই বেশি ভাবছি। বিশেষত সরকারি কর্মচারীদের বিশাল বাহিনীকে ডিজিটাল যুগের দক্ষতাসম্পন্ন করতে কোনো সঠিক পরিকল্পনা আমরা হাতে নেইনি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তৃতীয় কৌশল হলো: শিল্প ও অর্থনীতির ডিজিটাল রূপান্তর; এই কৌশলটি প্রয়োগ করার জন্য ছয়টি কৌশল হলো- ক) কাগজবিহীন লেনদেন, খ) ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল, গ) উৎপাদনে ডিজিটাল প্রযুক্তি, ঘ) শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, ঙ) সৃজনশীল, উদ্ভাবন ও তথ্য ভিত্তি, চ) ডিজিটাল শিল্প স্থাপন ও অর্থনীতির ভিত্তি ডিজিটাল করা; এই কৌশল বাস্তবায়নে কেবলমাত্র আর্থিক লেনদেনে আমাদের অর্জন উল্লেখযোগ্য। বাকি ক্ষেত্রগুলোতে আমরা এখনো যাত্রাই শুরু করতে পারিনি। বরং আমাদের শিল্প ও বাণিজ্য এনালগ যুগের। অর্থনীতির অতি নগণ্য অংশ ডিজিটাল।
আমাদের চতুর্থ কৌশলটি হলো: ডিজিটাল সংযুক্তি; এই কৌশলটির জন্যও ৬টি কৌশল আমি চিহ্নিত করেছি। ক) ঘরে ঘরে ডিজিটাল সংযুক্তি, খ) দ্রুতগতির তারের সংযোগ, গ) সমন্বিত সংযুক্তি, ঘ) মাতৃভাষায় দেশীয় উপাত্ত, ঙ) নিরাপদ ইন্টারনেট, চ) শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট। আমাদের সংযুক্তির ক্ষেত্রটি সচল ও সজীব আছে। তবে গতিটা সম্ভবত মন্থর। ৫জি আমাদের সেই গতিটাকে দ্রুততর করে দেবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
আমাদের পঞ্চম কৌশলটি বস্তুত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কৌশল। এটি হলো: ডিজিটাল জীবনধারা ও জন্মের ঠিকানায় রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তোলা; এই কৌশলটি বাস্তবায়নে আমরা ছয়টি কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেছি। সেগুলো হলো- ক) ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কল-কারখানা, কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা, আইন-আদালত, সালিশ, সরকারি সেবা, হাটবাজার, জলমহাল, ভূমি ব্যবস্থাপনাসহ জীবনের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড ডিজিটাল করতে হবে, খ) মেধাশিল্প ও সেবা খাতকে প্রাধান্য দিয়ে শিল্পনীতি তৈরি করতে হবে, গ) দেশের সব আইনকে জ্ঞানভিত্তিক সমাজের উপযোগী করতে হবে, ঘ) ডিজিটাল বৈষম্যসহ সমাজে বিরাজমান সব বৈষম্য দূর করতে হবে এবং রাষ্ট্রকে অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানসহ জীবনের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, ঙ) ডিজিটাল বিশ্বের ডিজিটাল জীবনধারার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা, চ) বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে তার জন্মের অঙ্গীকারে স্থাপন করার জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার পাশাপাশি দেশকে জঙ্গিবাদ, ধর্মান্ধতা, সন্ত্রাস ইত্যাদির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে এবং একাত্তরের ঘোষণা অনুযায়ী দেশের নীতি ও আদর্শকে গড়ে তুলতে হবে।
এসডিজি বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা : আমরা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ ২.০ এর সময়কালে থাকব তখন জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সময়ও থাকবে। আমরা লক্ষ্য করতে পারি সেই লক্ষ্যমাত্রাগুলো কি কি। ১. দারিদ্র্যহীন বিশ্ব, ২. ক্ষুধাহীন বিশ্ব, ৩. সুস্বাস্থ্য, ৪. উন্নত শিক্ষা, ৫. লিঙ্গ সমতা, ৬. সুপেয় পানি স্যানিটেশন, ৭. ক্রয়ক্ষমতায় থাকা বিশুদ্ধ জ্বালানি শক্তি, ৮. সুকর্ম ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ৯. শিল্প, উদ্ভাবন ও অবকাঠামো, ১০. হ্রাসকৃত অসমতা, ১১. টেকসই নগর ও সম্প্রদায়, ১২. দায়িত্বশীল ভোগ ও উৎপাদন, ১৩. জলবায়ু বিষয়ক কার্যক্রম, ১৪. জলজ প্রাণীর জীবন, ১৫. ভূমিতে বসবাসকারী প্রাণী, ১৬. শান্তি, বিচার ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান ও ১৭. লক্ষ্য অর্জনে পারস্পরিক সহায়তা।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও সোসাইটি ৫.০ : চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বৈশিষ্ট্যগুলোকে নিম্নরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। ১. কর্মসংস্থান ও দক্ষতার আমূল পরিবর্তন, ২. উদ্ভাবন ও উৎপাদনশীলতা, ৩. বৈষম্য নিরসন, ৪. গতিশীল প্রশাসন, ৫. নিরাপত্তা ও বিরোধ এর বিস্তৃতি, ৬. ব্যবসার আমূল পরিবর্তন, ৭. অভাবিত প্রযুক্তি এবং ৮. নৈতিকতা ও ব্যক্তি পরিচয় সংকট। এই আটটি বিষয় পর্যালোচনা করলেই একদিকে যেমন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের আগ্রাসন অনুভব করা যায় তেমনি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সংকটগুলোও বোঝা যায়। সেজন্যই হয়তো বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের মতো প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যান্ত্রিকতা অতিক্রম করে পঞ্চম শিল্পবিপ্লবের মানবিকতার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ইউরোপ, আমেরিকা বা শিল্পোন্নত দেশগুলোর চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মাতামাতির মাঝে আকস্মিকভাবে এর নেতিবাচক দিকগুলোও আলোচনায় আসতে পারে সেটি আমি অন্তত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের কাছ থেকে আশা করিনি। কিন্তু অবশেষে জাপানে সম্মেলন হচ্ছে বলেই কিনা ১৯ সালের বিশ্ব অর্থনেতিক ফোরামের প্রতিপাদ্য হচ্ছে জাপানের স্বপ্ন সোসাইটি ৫.০। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম যাকে পঞ্চম শিল্পবিপ্লব বলছে তার একটু বিবরণ পেশ করা যেতে পারে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম ৫ম শিল্পবিপ্লবকে মানবিক বলছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ভয়ংকর দিকটা কাটিয়ে চলার বিষয়ে ৫টি আশাবাদের কথা বলা হয়েছে। ক) বাণিজ্যের ডিজিটাল রূপান্তর পুঁজিবাদী অর্থনীতিতেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানাকে ক্রেতামুখী করবে। ৫ম শিল্পবিপ্লবের লক্ষ্যটা তাই মানুষকে তথা ক্রেতাকে বাদ দিয়ে নয়, খ) প্রযুক্তি দিয়ে মানুষকে স্থলাভিষিক্ত না করে মানুষের জন্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করবে।
আমরা যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা ভাবি তবে আমাদের লক্ষ্যও এর চাইতে অনেক বেশি সম্প্রসারিত বলে মনে হতে পারে। কাকতালীয়ভাবে আমরা এই ঘোষণাটি এক দশক আগে দিয়েছি। তবে আমাদের সঙ্গে তাদের ভাবনার কিছু পার্থক্য তো আছেই। আমার ডিজিটাল বাংলাদেশ বইটি পাঠ করলে পুরো চিত্রটা পাওয়া যাবে।
জাপানের পঞ্চম সমাজের ছোট্ট একটা বিবরণ এখানে তুলে ধরা যেতে পারে। কেইদারেনের রূপরেখায়, ৫টি পর্যায়ের সামাজিক বিবর্তন হিসেবে সোসাইটি ৫.০ চিত্রিত হয়েছে। ১. শিকারি সমাজ, ২. কৃষি সমাজ, ৩. শিল্প সমাজ, ৪. তথ্য সমাজ, ৫. সুপার স্মার্ট সমাজ বা সোসাইটি ৫.০।
জাপান বিজনেস ফেডারেশন সোসাইটি ৫.০ বিষয়ে একটি রূপরেখা প্রকাশ করেছে যাতে বর্ণনা করা হয়েছে যে, আমরা যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি তার জন্য ৫টি দেয়াল ভাঙার প্রয়োজন হবে। প্রকৃতপক্ষে তারা মনে করে দেয়াল ভাঙার পরে সৃষ্ট সমাজই সোসাইটি ৫.০ বা সুপার স্মার্ট সোসাইটি।
১. প্রথমেই তারা মনে করে যে প্রশাসন, মন্ত্রণালয় ও সরকারি অফিস সংস্থা জনগণের সঙ্গে যে দেয়াল তুলে রেখেছে সেটি ভাঙতে হবে, ২. জাপানের পঞ্চম সমাজের দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জটা হলো আইনের দেয়াল ভাঙা, ৩. সমাজ ৫.০-এর তৃতীয় দেয়ালটা হলো প্রযুক্তির দেয়াল। নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করা ও সমাজের বিবর্তনে একে কাজে লাগানো হচ্ছে এই দেয়ালটা ভাঙা, ৪. মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক দেয়ালটা চতুর্থ দেয়াল, ৫. পঞ্চম দেয়ালটি হচ্ছে পঞ্চম সমাজকে সমাজের সব মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করা।
জাপান চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে অংশ নিতে শুরু করায় তার সমাজ ও উৎপাদন ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্স, আইওটি, বিগ ডাটা ইত্যাদি প্রযুক্তি দেশটির রূপান্তরে একটি নতুন ভূমিকা পালন করছে এবং শিল্প উৎপাদন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ ২.০-এর কৌশল ও কর্মসূচি প্রণয়নে আমাদের তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ ১.০, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, পঞ্চম শিল্পবিপ্লব ও সোসাইটি ৫.০ এর সামগ্রিক বিষয়াদির পাশাপাশি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার কথাও মনে রাখতে হবে।
মোস্তাফা জব্বার : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও কলাম লেখক।
Discussion about this post