অনলাইন ডেস্ক
বর্তমান পৃথিবীর বয়স প্রায় ৫ কোটি বছর। যা মহাবিশ্বের বয়সের কমবেশি এক তৃতীয়াংশ। এর প্রায় অনেক পরে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী জীব মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয় এ পৃথিবী। এ বিপুল সময়ের মধ্যে অজস্র ভূতত্ত্বীয় পরিবর্তন পৃথিবীতে ঘটার সাথে সাথে বিবর্তন ঘটেছে মানুষের জীবনেও। এরই ধারাবাহিকতায় মানুষ তার প্রয়োজনে তৈরি করেছে শহর যাকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর বুকে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন সভ্যতা যেগুলোর অনেকই কালের গর্ভে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
পৃথিবীতে কত প্রাচীন সভ্যতা হারিয়ে গেছে তার কোনো হিসাব নেই। এমন অনেক সভ্যতা আছে যা এখনো আবিষ্কৃতই হয়নি। যেসব সভ্যতার খোঁজ পাওয়া গেছে, সেসব নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। এসব সভ্যতা এবং তাদের জীবনযাপন ও শহর নিয়ে আছে নানা গল্প, তৈরি হয়েছে নানা সিনেমা।
চলুন জেনে নেই এমনই কিছু হারিয়ে যাওয়া,রহস্যে ঘেরা শহরের কথা !
পানাম নগর:
বাংলাদেশের প্রাচীন সোনারগাঁর বড় নগর,পানাম নগর, খাস নগর এই তিন নগরের মধ্যে পানাম ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এখানে বাংলার বারোভূঁইয়াদের ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত কয়েক শতাব্দী পুরোনো অনেক ভবন রয়েছে।এই নগরী ১৫ শতকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে ইউরোপীয় অনুপ্রেরণায় নতুন ঔপনিবেশিক স্থাপত্যরীতিতে গড়ে ওঠে। পানামের টিকে থাকা বাড়িগুলোর মধ্যে ৫২টি বাড়ি উল্লেখযোগ্য। পানাম সড়কের উত্তর পাশে ৩১টি আর দক্ষিণ পাশে ২১টি বাড়ি রয়েছে। আরো রয়েছে ৪০০ বছরের পুরোনো টাঁকশাল বাড়ি। বাড়িগুলোর স্থাপত্য নিদর্শন দেখে বোঝা যায় এখানে ধনী বণিকশ্রেণির লোকেরা বসবাস করতেন। বাড়িগুলোতে মোগল ও গ্রিক স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণ দেখা যায়।
মহেন্দ্রপর্বত:
খ্রিষ্টীয় নবম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত টিকে ছিল এই শহরটি। ২০১৩ সালে শহরটির অস্তিত্বের প্রথম প্রমাণ পায় ইতিহাসবিদরা। জঙ্গলের মাঝে খোদাই করা কিছু পাথর পেয়ে ইতিহাসবিদরা বলেছেন এই শহরটি খমের সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল। এই সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তীর্ণ কিছু এলাকা। শহরটিতে বিভিন্ন প্রাসাদ,মন্দির এবং অন্যান্য কিছু স্থাপনার খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। বিশাল সম্পত্তি এবং ক্ষমতার অধিকারী হলেও এই সাম্রাজ্যের স্থায়ীত্বকাল দীর্ঘ ছিলনা। এই শহরটি খ্রিষ্টীয় নবম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত টিকে ছিল।
আটলান্টিস:
৩৬০ খ্রিস্টপূর্বে সর্বপ্রথম গ্রীক দার্শনিক প্লেটোর লেখায় আটলান্টিস দ্বীপের উল্লেখ পাওয়া যায়। প্লেটোর বর্ণনানুসারে, ৯,৬০০ খ্রিস্টপূর্বে কোনো এক অজানা কারণে “আগুন ও ভূমিকম্পময় ভয়ানক এক রাতে” এই গোটা দ্বীপটাই ধ্বংস হয়ে যায়। ডুবে যায় পানির নিচে।এরপর থেকেই এই রহস্যময় হারিয়ে যাওয়া শহরটি বহু অভিযাত্রী, গবেষক, ইতিহাসবিদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে।একটা সময়ে এই শহরটিতে হাজারো লোকের বসবাস ছিল। অন্য শহরগুলোর ন্যায় এখানেও ছিল মানুষের কোলাহল। একসময় শহরটি জনশূন্য হয়ে যায়।
এল ডোরাডো বা স্বর্ণমোড়া শহর:
ষোড়শ শতাব্দীতে স্বর্ণ নগরী এল ডোরাডোর সন্ধান পাওয়া যায়। ইউরোপিয়ানরা যখন গুপ্তধন খোঁজার নেশায় মেতে ছিল তখন গুজব ওঠে আদ্রিজ পর্বতচূড়ায় রয়েছে এক শহর যেখানে স্বর্ণের কোনো অভাব নেই। বহু অভিযাত্রী এই শহর খুঁজে বেড়িয়েছে। কিন্ত কেউই এই শহরটি আজ পর্যন্ত খুঁজে পায়নি। যেখানের রাজা সোনার গুঁড়ায় নিজের দেহ আবৃত করে রাখে। এই গল্প থেকেই সেই শহরের নামকরণ করা হয় এল ডোরাডো বা স্বর্ণমোড়া শহর।
লায়োনিস রাজ্য:
ব্রিটেনের সিসিলি দ্বীপে অবস্থিত ছিল বিশাল লায়োনিস রাজ্য। উত্তাল সমুদ্র কোনো একদিন বিশাল এই রাজ্যকে গিলে নেয়। উইলিয়াম ওরচেস্টারের লেখা ভ্রমণবৃত্তান্ততে উল্লেখ রয়েছে যে বন, মাঠসহ ১৪০টি গির্জা, সবই আজ ডুবে আছে পর্বত ও সিসিলি দ্বীপের মধ্যবর্তী স্থানে। ইতিহাসবিদদের মতে, ৩,০০০ বছর নিমজ্জিত থাকার ফলে গোটা সভ্যতাটি সমুদ্রের বহু গভীরে হারিয়ে গিয়েছে।বিখ্যাত চরিত্র রাজা আর্থার আর বীর ত্রিস্তানের বাসস্থান হিসেবে লায়োনিসের উল্লেখ রয়েছে।প্রত্নতত্তবিদেরা অনেক খোঁজাখুঁজি করে হারানো সেই শহরের কোনো চিহ্ন খুঁজে পান নি।
পম্পেই:
ইতালির কাম্পানিয়া অঞ্চলের আধুনিক নাপোলির কাছেই এর অবস্থান ছিল। ৬২ খ্রিস্টাব্দে ভয়াবহ এক ভূমিকম্প,৭৯ খ্রিস্টাব্দে ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির দুই দিন ব্যাপী অগ্নুৎপাতের ফলে ধারনা করা হয়, উঁচু ছাই ও ঝামাপাথরের নিচে চাপা পড়ে এই শহরটি ধ্বংস হয়ে যায়।
z এর শহর:
আমেরিকান লেখক ডেভিড গ্রান ফাউসেটের একটি অভিযান নিয়ে ‘The Lost City of Z’ নামে একটি বই লেখেন। এই বইয়ের উপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে একটি মুভিও নির্মাণ করা হয়।যেখানে উল্লেখ রয়েছে ১৯২৫ সালে তিনজনের একটি দল, ব্রিটিশ সার্ভেয়ার কর্নেল পার্সি হ্যারিসন ফাউসেটের নেতৃত্বে ব্রাজিলের ‘মাতো গ্রোসো’ এলাকার দুর্গম জঙ্গলে প্রবেশ করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল একটি প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ খুঁজে বের করা। ফাউসেট এই প্রাচীন শহরের নাম দিয়েছিলেন ‘Z এর হারানো শহর’। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো পরবর্তীতে এই তিনজনকে আর কোনো দিন খুঁজে পাওয়া যায়নি।এরও কয়েক দশক পরে প্রায় ১০০ জন মানুষ যারা এদের খোঁজ করতে গিয়েছিলেন তারাও সেখানে গিয়ে বেমালুম গায়েব হয়ে যায়।
আজলান:
হারিয়ে যাওয়া আজলান শহরকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল আজটেক সভ্যতা। প্রাচীন আমেরিকার অন্যতম উন্নত সভ্যতা বলা হয় এই সভ্যতাকে। মেক্সিকোর আজটেক জাতি গড়ে তুলেছিল এই সভ্যতা।ধারনা করা হয়, ১১০০ থেকে ১৩০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আজটেক জাতি আজলানে বসবাস করে। অনেকের কাছেই এটি আটলান্টিস বা ক্যামেলোটের মতো রহস্যময় শহর। কারণ এসব শহরের কোনো অস্তিত্ব ও অবস্থান আজও কেউ খুঁজে পায়নি।
Discussion about this post