অনলাইন ডেস্ক
আধুনিক প্রযুক্তির উৎকর্ষতার যুগে মানুষতো এখন ভুলেই গেছে কাগজে চিঠি লেখার কথা। এক সময় আমাদের চারপাশে দেখতে পাওয়া পরিচিত সেই পোস্ট-বক্সগুলো, আজও শৈশবের স্মৃতি হিসেবে রয়ে গেছে। তবে জাপানের পোস্ট-বক্সটি একটু ভিন্নমাত্রার। আর তাতে চিঠি ফেলা অনেকের কাছে এক নতুন অভিজ্ঞতা।
জাপানের ‘নিশিমুরো’ জেলায় মাছ উৎপাদনের জন্য পরিচিত এক জনপ্রিয় শহর ‘সুসামি’। প্রায় ১৭৪.৭১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শহরটি বিস্তৃত। এছাড়া পাঁচ হাজার লোকের বাস রয়েছে এখানে। এদের অধিকাংশই পেশায় মৎস্যজীবী। বেশ ছিমছাম আর সুন্দর এ শহরের পরিবেশ। সমুদ্র উপকূলবর্তী হওয়াতে শহরের কাছেই রয়েছে দর্শনীয় সমুদ্রতট। প্রতিবছর এখানে বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসেন গভীর সমুদ্রে ডাইভিংয়ের জন্য। এর বাইরে আরও একটি রোমাঞ্চকর অভিযানের নেশায় তারা ছুটে আসেন এখানে।
১৯৯৯ সালের এপ্রিলে পর্যটনের প্রসার ঘটানোর জন্য এখানকার স্থানীয় প্রশাসন সমুদ্রের তলদেশে পোস্ট-বক্স স্থাপনের এক অদ্ভুত পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ‘তৎহিকো মাতসুমোতো’ নামের এক ৭০ বছরের পোস্টমাস্টার সমুদ্রের তলদেশে এই পোস্ট-বক্সের ধারণাটি পর্যটন অধিদপ্তরের কাছে প্রস্তাব করেছিলেন।
সমুদ্র সৈকত থেকে ১০ মিটার দূরে এবং প্রায় ৩২ ফুট গভীরে এই পোস্ট-বক্স স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু কীভাবে লোকে এই পোস্ট-বক্সে চিঠি ফেলবে? আর সেই চিঠি সমুদ্রের পানিতে নষ্ট না হয়ে কিভাবে তা যথাযথ প্রাপকের কাছে পৌঁছে দেয়া যাবে?
সে ভাবনা থেকে সিদ্ধান্ত হয়, পর্যটকরা ওয়াটার-প্রুফ কাগজে এবং ওয়াটার-প্রুফ মার্কার পেন দিয়ে চিঠি লিখে সমুদ্রের জলের নিচে গিয়ে সে পোস্ট-বক্সে চিঠি পোস্ট করতে পারবেন। ফলে পর্যটকরা সমুদ্রের জলে ডাইভিং করার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা আর প্রিয়জনের কাছে তার মনের ভাব প্রকাশের ইচ্ছায় চিঠি লিখে সেই পোস্ট-বক্সে তা ফেলে আসেন।
প্রতিবছর হাজার হাজার চিঠি জমা পড়ে এই ডাকবাক্সে। পোস্ট-বক্স স্থাপনের পর থেকে এখন পর্যন্ত এই বক্সে প্রায় ৩২ হাজার চিঠি পড়েছে। ২০০২ সালে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে, এই অদ্ভুত পোস্ট-বক্সটি স্থান করে নেয়।এছাড়া এরই আকর্ষণে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক পর্যটক জাপানের ‘সুসামি’ শহরে এসে ভিড় করেন।
Discussion about this post