অনলাইন ডেস্ক
প্রত্যেক পদার্থ পরমাণু নামক অসংখ্য অতি ক্ষুদ্র কণা দ্বারা গঠিত। সব মৌলের পরমাণুতে থাকে ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন। নিউট্রন ও প্রোটন পরমাণুর কেন্দ্র নিউক্লিয়াসে অবস্হান করে। আর ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের বাইরে অবস্হান করে। পরমাণু সামগ্রিকভাবে কোনো চার্জযুক্ত থাকে না। নিউট্রন চার্জবিহীন, তাই পরমাণুতে ইলেকট্রন ও প্রোটনের সংখ্যা সমান সমান থাকে। কেননা প্রোটন ও ইলেকট্রনের আধান বিপরীতধর্মী।
এদিকে একই মৌলের বিভিন্ন পরমাণুর কয়েক প্রকারের ভর হতে পারে। ভর হলো প্রোটন ও নিউট্রনের সর্বমোট সংখ্যা। কিন্তু যে সব পরমাণুর প্রোটন সংখ্যা সমান। অথচ ভর ভিন্ন হয়, সে সব পরমাণুকে পরস্পরের আইসোটোপ বলা হয়। এতে প্রতীয়মান হয় যে, নিউট্রনের সংখ্যার তারতম্যের জন্যই আইসোটোপের সৃষ্টি। এদিকে একই মৌলের সব আইসোটোপের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম একই হয়ে থাকে। অবশ্য কতিপয় পরমাণু থেকে যে প্রতিভাসের সৃষ্টি হয় তার নাম তেজস্ক্রিয়তা। এক্ষেত্রে ইউরোনিয়াম, থোরিয়াম, প্লুটুনিয়াম, ইত্যাদি হলো তেজস্ক্রিয় পদার্থ। আসলে পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে ভেঙ্গে বা বিভাজন করে যে শক্তি পাওয়া যায় তাকে পারমাণবিক শক্তি বলে।
এ প্রেক্ষাপটে উল্লেখ্য যে, ১৯০৫ সালে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন প্রমাণ করেন যে, পদার্থ ও শক্তি প্রকৃতপক্ষে অভিন্ন অর্থাত্ পদার্থকে শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায় এবং শক্তিকে রূপান্তরিত করা যায় পদার্থে। এ সূত্রে m ভরবিশিষ্ট কোনো পদার্থকে শক্তিতে রূপান্তরিত করলে যে শক্তি উত্পন্ন হয় তার পরিমাণ E = mc2; এক্ষেত্রে c = আলোকের বেগ (৩০০০,০০০km/sec)। এ প্রেক্ষাপটে ফিশন (Fission) এর কথা এসে যায়। মূলত ফিশন হলো বিভাজন বা ভাঙ্গন। একটি ভারী পরমাণুকে দ্রুতগ্রামী নিউট্রন দ্বারা ভেঙ্গে হালকা ভরের একাধিক পরমাণু ও শক্তি উত্পন্ন করা হয়। এই প্রক্রিয়াকে কাজে লাগানো হয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে (Nuclear power plant)। যে সকল তেজস্ক্রিয় পদার্থ এই ফিশন বিক্রিয়ায় অংশ নেয় তাদের ফিসাইল পদার্থ বা পারমাণবিক জ্বালানী বলা হয়।
পারমাণবিক বিদু্যত্ কেন্দ্রে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার হয় ইউরেনিয়াম ২৩৫ আইসোটোপ। মজার ব্যাপার হলো যে, তেজস্ক্রিয় কিছু আইসোটোপ আছে, যেগুলো বিশেষ অবস্হায় নিজেরাই নিজেদের পরমাণুকে ভেঙ্গে তাপশক্তি বিকিরণ করে। সাধারণত ইউরেনিয়াম ২৩৫ পরমাণুর নিউক্লিয়াসে ৯২টি প্রোটন ও ১৪৩ টি নিউট্রন থাকে। এরই পরমাণুতে বাইরে থেকে একটি নিউট্রন ঢুকিয়ে দিলে আইসোটোপ ইউরেনিয়াম-২৩৬ এ পরিণত হয়। এই আইসোটোপটি নিজের অস্তিত্ব বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারে না। তাই এর পরমাণুটি ভেঙ্গে দুটি পরমাণুতে পরিণত হয়।
ভেঙে যাওয়ার সময় পরমাণুটি প্রচুর তাপশক্তি উত্পন্ন করে দুটি অতিরিক্ত নিউট্রনকে মুক্ত করে দেয়। উক্ত মুক্ত নিউট্রন দুটি আবার ইউরেনিয়ামের নতুন দুটি পরমাণুকে ভেঙ্গে প্রচুর তাপশক্তি উত্পন্ন করে চারটি নিউট্রনকে মুক্ত করে দেয়। এইভাবে চলতে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম-২৩৫ এর অস্তিত্ব থাকবে। আর এই ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়াকে বলা হয় চেইন রিয়েকশন (Chain reaction)|
পর্ব-২
আসলে বিদ্যুৎ উত্পাদনের প্রক্রিয়া বাতাসে পাখা ঘুরানো, সৌর বিদু্যত্ ও ব্যাটারি চালিত রাসায়নিক বিদু্যত্ ব্যতীত সব একই। এক্ষেত্রে জেনারেটর ঘুরিয়ে বিদু্যত্ উত্পন্ন করা হয়। আর এটা পানির স্রোতই হোক কিংবা তাপ দিয়ে বাষ্পই করেই হোক, তার সাহাঘ্যে করা হয়ে থাকে। সহজ কথা হলো তাপে পানিকে বাষ্প করে টারবাইনের মাধ্যমে জেনারেটর সচল বা চালানো বা ঘুরানো হয়ে থাকে। যাহোক, আনবিক শক্তির মাধ্যমে তাপ সৃষ্টি করে কীভাবে বিদু্যৎ উত্পাদন করা হয়; সেই বিষয়টি নিম্নে তুলে ধরতে সচেষ্ট হয়েছি।
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, পারমাণবিক বিদু্যত্কেন্দ্রে পারমাণবিক শক্তিকে ব্যবহার করে তাপ উত্পন্ন করা হয়। আর তাপ দিয়ে পানিকে বাষ্প করে টারবাইন এর মাধ্যমে জেনারেটরকে সচল করা হয়। যেমনটি পানি বিদু্যত্কেন্দ্রে হয়ে থাকে। পারমাণবিক বিদু্যৎ কেন্দ্রের যে চেম্বারে নিউক্লিয়ার ফিশন করা হয় বা পোড়ানো হয়, তাকে রিয়্যাকটর বলে। এর মধ্যে নিয়ন্ত্রিতভাবে রিঅ্যাকশন বা বিক্রিয়া সংঘটিত করা হয়। এভাবে এই বিক্রিয়া চলার প্রাক্কালে প্রচুর পরিমাণ তাপশক্তি উত্পন্ন হয়। আর নিয়ন্ত্রণ না করলে এটা চেইন রিঅ্যাকশনে পরিণত হতে পারে। এই ফিশন বা বিক্রিয়ার ফলে কিছু ভর হারিয়ে যায়।
বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের সূত্র অনুসারে হারিয়ে যাওয়া ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ফিশন বা বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে এই শক্তির পরিমাণ ২০ কোটি ইলেকট্রন ভোল্ট-ইভি। আর ১ গ্রাম ইউ-২৩৫ এর সব কয়টি নিউক্লিয়াস ফিশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে ভেঙে ফেলা হলে প্রায় ২৪ মেগাওয়াট ঘন্টা শক্তি পাওয়া যায়।
Discussion about this post