অনলাইন ডেস্ক
একটা সময় ছিল যখন অফলাইনে সার্টিফিকেট সংশোধনের আবেদন করতে হতো। কিন্তু সময় এখন পাল্টে গেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়া লেগেছে সর্বত্র। এখন সার্টিফিকেট সংশোধনের আবেদনও অনলাইনে করা যায়।
অনলাইনে কীভাবে জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি এবং সমমানের সার্টিফিকেট সংশোধনের আবেদন করতে হয়, ঢাকা পোস্টের কাছে জানতে চেয়েছেন অনেকে। চলুন জেনে নিই কীভাবে সার্টিফিকেট সংশোধন করার জন্য আবেদন করতে হয়।
সার্টিফিকেট সংশোধনের আবেদন করার জন্য প্রথমে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। প্রত্যেকটা বোর্ডের ওয়েবসাইটে Online Application নামে একটা লিংক থাকবে সেই লিংকে গিয়ে সার্টিফিকেট সংশোধনের আবেদন করতে হবে। একেকটা বোর্ডের ইন্টারফেস একেক রকম হলেও সব বোর্ডেই সার্টিফিকেট সংশোধনের অপশন আছে। আমরা আপনাদের দেখাব যশোর বোর্ডে কীভাবে সার্টিফিকেট সংশোধনের আবেদন করতে হবে।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে ঢোকার পর বাম পাশে ওপরের দিকে অনেকগুলো অপশনের মধ্যে একটি Name & Age Correction। এখানে ক্লিক করলে আপনাকে আবেদনের জন্য অন্য একটি ওয়েব পেইজে নিয়ে যাবে। সেখানে পরীক্ষার ধরন (জেএসসি/এসএসসি/এইচএসসি), পাসের সন, রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর এবং কেন্দ্রের নাম ও কোড নম্বর দিতে হবে। সবকিছু সঠিকভাবে দেওয়ার পর ফাইন্ড অপশনে ক্লিক করলে সনদ অনুযায়ী আপনার তথ্য চলে আসবে। সেখানে আপনার মোবাইল নম্বর, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা দিতে হবে।
এর নিচের অংশে আপনি কী ধরনের সংশোধন চান, তার তথ্য চাওয়া হবে। প্রার্থিত তথ্যগুলো ব্লক করা থাকবে। ওপরের একেকটা ঘরে টিক চিহ্ন দিলে একেকটা তথ্যের ঘর খুলবে। যেমন, আপনি নাম সংশোধন করতে চান। সেক্ষেত্রে Name correction বা নাম সংশোধনে ক্লিক করবেন। জন্ম-তারিখ সংশোধনের জন্য জন্ম-তারিখ সংশোধনের লিংকে ক্লিক করতে হবে।
এর নিচে থাকবে কোন পরীক্ষার তথ্য সংশোধন করতে চান। এ ক্ষেত্রেও আগের মতো টিক চিহ্ন দিয়ে ব্লক খুলতে হবে। এরপর পরীক্ষার ধরন (জেএসসি/এসএসসি/এইচএসসি), পাসের সন, রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর এবং কেন্দ্রের নাম ও কোড নম্বর দিতে হবে। তারপর কী কারণে তথ্য সংশোধন করতে চান, তা একটি বক্সে লিখতে হবে।
এরপর আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যান কপি আপলোড করে জমা দিতে হবে। সাইটে জন্ম সনদ, প্রাইমারি স্কুল পাসের সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রত্যয়নপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম সনদ, এফিডেভিট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), অন্যান্য এবং জাতীয় পরিচয়পত্র (নিজ/পিতা/মাতা যেটা প্রয়োজন) এমন অপশন থাকবে। প্রত্যেকটা অপশনের পাশে ব্রাউজ করার ঘর থাকবে। সেখানে ব্রাউজ করে নির্দিষ্ট ফোল্ডার থেকে স্ক্যান কপি আপলোড করতে হবে। অন্যান্য অপশনে বয়স প্রমাণের মেডিকেল সনদ, গ্রামের ক্ষেত্রে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের এবং শহরের ক্ষেত্রে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র ইত্যাদি দিতে হবে। এরপর আবেদন সাবমিট করতে হবে।
ওয়েব পেজের ওপরের দিকে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন, আবেদন সম্পাদনা, আবেদনের সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশিকা দেখা যাবে। এখান থেকে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন, আবেদনে সহযোজন-বিয়োজন করতে পারবেন। এছাড়া, আবেদনের সর্বশেষ তথ্য থেকে অনলাইন স্ট্যাটাস চেক করতে পারবেন। আর নির্দেশিকা থেকে কীভাবে আবেদন করবেন সে তথ্য দেওয়া আছে।
আবেদন সাবমিট করার পর সোনালী সেবার পিডিএফ ফাইল প্রিন্ট করে সরকারি ফি ব্যাংকে জমা দিতে হবে। এরপর এসএমএসের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এসএমএসে সভার তারিখ জানালে সেখানে যেতে হবে। লগ-ইন করে অনলাইন স্ট্যাটাস চেক করা যায়। অনুমোদন পেয়ে গেলে ফাইল প্রিন্ট করে প্রত্যেক দপ্তরে একটা করে কপি জমা দিতে হবে।
নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সামান্য পরিবর্তন হলে খুব দ্রুত হয়ে যায় কাজ। তবে, বেশি পরিবর্তন হলে বা জন্মতারিখ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সময় বেশি লাগে। সবাইকে নিয়ে সভা ডেকে সংশোধনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। জন্ম তারিখ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সিভিল সার্জনের প্রত্যয়নপত্র লাগে। এফিডেভিট করতে হয়। বা বয়স প্রমাণের মেডিকেল সনদ। অভিভাবকের নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তাদের এনআইডি।
সার্টিফিকেট সংশোধনের ক্ষেত্রে সামান্য পরিবর্তন হলে আবেদন করার পর মোটামুটি তিন-চার মাস সময় লাগবে আপনার সার্টিফিকেটটি সংশোধন হতে। তবে, বেশি পরিবর্তন হলে বা জন্মতারিখ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সময় লাগবে বেশি। সেক্ষেত্রে এক বছরেরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয় প্রার্থীদের।
এফিডেভিট
সার্টিফিকেটে নাম বা জন্ম তারিখের ভুল সংশোধনের জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট অথবা নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে এফিডেভিট/হলফনামা সম্পাদন করাতে হবে। আবেদনকারীর নিজের নাম/পিতা/মাতা/জন্মতারিখ সংশোধনের ক্ষেত্রে তার বয়স যদি ১৮ বছরের বেশি হয়, তাহলে তিনি নিজেই এফিডেভিট করতে পারবেন।
আবেদনকারীর বয়স যদি ১৮ বছর পূর্ণ না হয় কিংবা কম হয় কিংবা আবেদনকারী তার মা-বাবার নাম সংশোধন করতে চান, তাহলে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে আবেদনকারীর বাবা কর্তৃক প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিকের কাছ থেকে এফিডেভিট/হলফনামা সম্পাদন করতে হবে। হলফনামা সম্পাদনকালে অবশ্যই নিজের নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, শাখা, পরীক্ষার সাল, পরীক্ষাকেন্দ্রের নাম, রোল নম্বর, বোর্ডের নাম এবং জন্ম তারিখ উল্লেখ করে যা সংশোধন করতে চান (আবেদনকারীর নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম বা জন্মতারিখ) তাও উল্লেখ করতে হবে।
পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি
সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য এফিডেভিট/হলফনামা সম্পাদনের পর যে কোনো একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে এফিডেভিটে উল্লেখিত তথ্যাদি সংক্ষেপে উল্লেখ করতে হবে। এবং নোটারি পাবলিক অথবা প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে যে রেজিস্ট্রেশন নম্বর আসবে, তাও পত্রিকার বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করতে হবে।
Discussion about this post