অনলাইন ডেস্ক
নানা কারণে আমরা ভয় পাই বা উদ্বিগ্ন হই। প্রচণ্ড ভয় পেলে অনেক সময় আমাদের শরীর কাঁপতে থাকে, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়ে ওঠে। প্রশ্ন হলো, কেন এমন হয়? ভয় পেলে আমাদের শরীর এভাবে কাঁপে কেন? আর এটা কেন চাইলেও নিয়ন্ত্রণ করা যায় না?
ভয় আমাদের ‘ফাইট/ফ্লাইট’ রেসপন্স কে উদ্যত করে (এক্টিভেট করে)। কোনো অপ্রীতিকর কিছু দেখে তার থেকে দৌড়ে পালানোর যে প্রবণতা তাকে ই বলে ফ্লাইট রেসপন্স। ফ্লাইট শব্দটি এসেছে ইংরেজি Flee শব্দ থেকে। যার মানে হলো – ছুটে পালানো বা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করা। আর কোনো অপ্রীতিকর কিছু দেখে তার দিকে তেড়ে যাওয়া বা তার সাথে সরাসরি সংগ্রাম/ দ্বন্দ্ব / মারামারি তে লিপ্ত হবার প্রবণতা ই হলো ফাইট রেসপন্স।
এই রেসপন্স গুলো নিয়ন্ত্রিত হয় সিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম দ্বারা। সিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম পেরিফেরাল নার্ভাস সিস্টেমের ই একটি অংশ যা স্পাইনাল কর্ড হতে উৎপন্ন অনেক গুলো নার্ভ/ স্নায়ু দ্বারা গঠিত। এই নার্ভ গুলো দেহের বিভিন্ন অঙ্গের সাথে সংযুক্ত। আর আমরা যখন ভয় পাই তখন মস্তিষ্ক এই স্নায়ু গুলোর মাধ্যমে সমস্ত অঙ্গে সংকেত পাঠায় ভয়ের জিনিসের সাথে ফাইট করতে (ফাইট রেসপন্স) কিংবা ভয়ের জিনিস হতে দৌড়ে পালাতে (ফ্লাইট রেসপন্স)।
আর তখন ই আমাদের হার্ট বিট বাড়ে, চোখের মণি বড় হয় আরো সব লক্ষণ দেখা যায়।
আসলে, ভয় বা উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অংশ উদ্দীপ্ত হয়। অংশটির নাম অ্যামিগডালা। অজানা আশঙ্কায় প্রচুর পরিমাণে অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণ করে এই অ্যামিগডালা। এটা একধরনের হরমোন। এর একটা ডাকনামও আছে ইংরেজিতে—ফাইট অর ফ্লাইট হরমোন। বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘লড়ো অথবা পালাও’ হরমোন। আর ভয় পেলে ‘ফাইট-ফ্লাইট’ উভয় প্রতিক্রিয়া ই সৃষ্টি হয়। তার মানে এড্রেনালিন ও ক্ষরণ হয়। আর এজন্য ই আমাদের মাংসপেশি তথা সমস্ত শরীর ই কাঁপে ফাইট বা ফ্লাইট রেসপন্স দেখানোর জন্য।এই হরমোন একদিকে যেমন পালিয়ে যেতে প্ররোচিত করে মানুষকে, বিশেষ করে প্রাথমিক অবস্থায়; তেমনি উপায় না থাকলে, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে। এ জন্যই এমন নামকরণ। কিন্তু এর কারণটা কী? অ্যাড্রেনালিন সরাসরি পেশির রিসেপ্টর বা সংবেদী কোষের ওপর কাজ করে। এ কারণে পেশির তন্তুগুলোর সংকোচন-প্রসারণ দ্রুততর হয়। দেহ প্রস্তুত হয়ে ওঠে ভয় বা উদ্বেগ মোকাবেলার জন্য।
অ্যাড্রেনালিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পেশির কম্পন বাড়তে থাকে। একসময় তা আর নিয়ন্ত্রণে থাকে না। বাইরে থেকে দেখলে তখন মনে হয় গোটা শরীর কাঁপছে। প্রায় একই কারণে দুঃসংবাদ শুনলে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
আরো একটি কারণ আছে। তা হলো মাংসপেশি তে যে রক্ত সঞ্চালিত হয় সে রক্ত হতে হঠাত গ্লুকোজ মাত্রা কমে যায় বা গ্লুকোজ আলাদা হয়ে যায়। আর এজন্য আমরা কাঁপি। কারণ আমাদের মস্তিষ্ক চায় যাতে আমরা ভয়ের ব্যাপার হতে দৌড়ে পালাই বা ভয়ের ব্যাপার এর সাথে যুদ্ধে নামি।
এ অবস্থা থেকে মুক্তির কিছু সাধারণ উপায় বাতলে দেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন বড় করে শ্বাস নেওয়া। বিশেষজ্ঞরা এই ‘বড়’ করে শ্বাস টানা বলতে নির্দিষ্ট এক বিষয়কে বোঝান। ১-৪ পর্যন্ত স্পষ্টভাবে গুনতে যতটা সময় লাগে, ততটা সময় ধরে শ্বাস টেনে নেওয়া (প্রশ্বাস), সমপরিমাণ সময় শ্বাস ধরে রাখা এবং একই পরিমাণ সময় নিয়ে শ্বাস ছাড়লে (নিঃশ্বাস) সেটাকে ‘বড়’ করে শ্বাস নেওয়া বলা হয়। এতে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ে। মস্তিষ্কও বেশি অক্সিজেন পায়। ফলে অ্যাড্রেনালিনের প্রবাহ কিছুটা কমে। তা ছাড়া, শারীরিক ব্যায়াম কিংবা যোগব্যায়ামের মতো অভ্যাস বিপদে মাথা ঠান্ডা রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক। সে জন্য অবশ্য সময় নিয়ে ধীরে ধীরে নিজেকে প্রস্তুত করে তুলতে হবে। কারণ, চট করে মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব নয়। সে জন্য নিয়মিত আত্মনিয়ন্ত্রণ চর্চার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
Discussion about this post