অনলাইন ডেস্ক
২০২৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানে অসাধারণ কিছু আবিষ্কার হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নিউক্লিয়ার ও মেডিক্যাল ফিজিক্স, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, লেজার, অ্যান্টিম্যাটারসহ আরও অনেক বিষয়। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান পোর্টাল ফিজিকস ওয়ার্ল্ড এর মধ্য থেকে সেরা ১০টির তালিকা প্রকাশ করেছে।
ইঁদুরের ত্বক স্বচ্ছ করার উপায়
যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একটি ফুডগ্রেড হলুদ রং ব্যবহার করে জীবিত ইঁদুরের ত্বক স্বচ্ছ করেছেন। এটি ত্বকের নিচে থাকা লিভার, অন্ত্র বা ব্লাড ফ্লো সহজে দেখতে সাহায্য করে। ভবিষ্যতে এই পদ্ধতি মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহার করার আশা দেখছেন বিজ্ঞানীরা।
লেজার দিয়ে পজিট্রোনিয়াম ঠাণ্ডা করা
ইউরোপিয়ান নিউক্লিয়ার গবেষণা কেন্দ্র সার্ন এবং টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা লেজার ব্যবহার করে পজিট্রোনিয়াম নামে একটি অ্যান্টিম্যাটার কণা ঠাণ্ডা করেছেন।
যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা একটি কম্পিউটার মডেল তৈরি করেছেন। এটা ক্যানসার রোগীদের জন্য আরও সুনির্দিষ্টভাবে রেডিওথেরাপি প্রয়োগ করতে সাহায্য করবে। এটি সুস্থ কোষের ক্ষতি কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকর হবে বলে আশা করছেন গবেষকেরা।
আরও পড়ুন-মানব মস্তিষ্কে বিস্ময়কর মাত্রার প্লাস্টিকের অবস্থান
যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক সিলিকা বলের মধ্যে সীসা-২১২ নিউক্লিয়াস রেখে সেগুলোন নিউক্লিয়ার রেডিয়েশন ক্ষয় প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেছেন। এ পদ্ধতি ভবিষ্যতে নিউট্রিনো শনাক্তকরণেও ব্যবহার করা যাবে বলে মনে করছেন গবেষকেরা।
যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা একটি ছোট এবং সাশ্রয়ী টাইটেনিয়াম-স্যাফায়ার লেজার তৈরি করেছেন। এটি গবেষণা এবং শিল্পখাতে লেজারের ব্যবহারে বিপ্লব ঘটাবে মনে করছেন গবেষকেরা।
কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের ত্রুটি সংশোধন
গুগল এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা কোয়ান্টাম কম্পিউটারে ত্রুটি সংশোধনের উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। তাঁরা একটি পারমাণবিক প্রসেসরে ৪৮টি লজিক্যাল কিউবিট ব্যবহার করে কোয়ান্টাম ত্রুটি সংশোধন করে দেখিয়েছেন। এছাড়া তাঁরা একটি সুপারকন্ডাক্টিং চিপে ‘সারফেস কোড থ্রেশহোল্ড’-এর নিচে কোয়ান্টাম ত্রুটি সংশোধন প্রয়োগ করেছেন।
পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার কারণে তৈর হওয়া নয়েজ কোয়ান্টাম কম্পিউটারের প্রধান দুর্বল দিক। এই সমস্যার সমাধানকে কোয়ান্টাম প্রযুক্তির জন্য মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
গবেষক দলটি, সম্পূর্ণ ভিন্ন কোয়ান্টাম সিস্টেম নিয়ে কাজ করে এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রমে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের এই সাফল্য ভবিষ্যতে কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে শুধু একটি গবেষণার সরঞ্জাম নয়, বরং বাস্তব সমস্যার সমাধানের জন্য একটি কার্যকর যন্ত্রে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে এই গবেষণা কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে আরও কার্যকর এবং বাস্তবসম্মত করে তুলবে।
এনট্যাঙ্গেল্ড ফোটনের মাধ্যমে উন্নত চিত্র
ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের গবেষকরা কোয়ান্টাম ফোটনের সাহায্যে উন্নত মানের চিত্র ধারণ করেছেন। এন্ট্যাঙ্গেলড ফোটনের ব্যবহার করে ইমেজিংয়ে নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করেছেন। এই দলে করেছেন ফ্রান্সের সোরবন ইউনিভার্সিটির ক্লো ভের্নিয়ের এবং হুগো ডেফিয়েন। তারা একত্রে কোয়ান্টাম এনট্যাংলমেন্ট ব্যবহার করে একটি অপটিক্যাল ছবি এনকোড করতে সক্ষম হয়েছেন।
এই পদ্ধতির বিশেষত্ব হলো, ছবিটি কেবল তখনই দেখা যায় যখন একজন পর্যবেক্ষক একক-ফোটন সংবেদনশীল ক্যামেরা ব্যবহার করেন। তা না হলে এটি অদৃশ্য থাকে। এই কৌশলটি বায়োলজিকাল টিস্যু এবং দীর্ঘ-দূরত্বের অপটিক্যাল যোগাযোগে উন্নত ইমেজিং সিস্টেম তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
একই সময়ে, ভের্নিয়ের এবং ডেফিয়েন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগোর প্যাট্রিক ক্যামেরন ও অন্যান্যদের সঙ্গে মিলে এন্ট্যাঙ্গেলড ফোটন ব্যবহার করে অভিযোজনযোগ্য অপটিক্যাল ইমেজিং উন্নত করেছেন। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, এই পদ্ধতিতে প্রচলিত ব্রাইট-ফিল্ড মাইক্রোস্কোপির তুলনায় আরও উচ্চ-রেজোলিউশনের ছবি তৈরি করা সম্ভব। এই অভিযোজনযোগ্য অপটিকস পদ্ধতি কোয়ান্টাম মাইক্রোস্কোপের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
চাঁদের অন্ধকার পিঠ থেকে নমুনা সংগ্রহ
চীনের ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে চাঁদের অদেখা পৃষ্ঠ (far side) থেকে প্রথমবারের মতো নমুনা সংগ্রহ করেছেন। চাঁদের এই অংশে অবতরণ করা অত্যন্ত কঠিন, কারণ এটি পৃথিবীর উল্টো দিকে এবং সেখানে বিশাল গহ্বর রয়েছে ও সেখানকার ভূখণ্ড অসমতল।
বিজ্ঞানীরা চাঁদের এই অংশের প্রতি বিশেষ আগ্রহী, কারণ এটি চাঁদের সামনে পৃষ্ঠ (near side) থেকে অনেকটাই আলাদা। এই পার্থক্যের কারণ সম্পর্কে জানতে চাঁদের এই অংশের গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: ফিজিকস ওয়ার্ল্ড
Discussion about this post