৯. ফ্যাংটুথ ফিশ (Fangtooth Fish)
এদের মুখটা অনেকটা ভাইপার
ফিশের মত দেখতে হলেও,
এরা আকারে ভাইপার ফিশের
অর্ধেক, অর্থাৎ ৬ ইঞ্চির
মত আর আকৃতিতেও ভিন্ন।
BBC Blue Planet ডক্যুমেন্ট
মতে ফ্যাংটুথের দাঁত শরীরের অনুপাতে
সমুদ্রের অন্য যেকোনো মাছের
চাইতে বড়। তবে এত
বীভৎস দর্শন হলেও এরা
মানুষের ক্ষতি করার মত
নয়। এরা খুবই গভীর
জলের মাছ। এদের আবাস্থলের
গভীরতা ২০০০ থেকে ৫০০০
মিটার (৬৫০০-১৬৫০০ ফিট)। এপর্যন্ত
আবিষ্কৃত এদের দুটো প্রজাতি
রয়েছে। যথা :
১০. গাপলার ঈল/ পেলিক্যান ঈল (Gupler Eel/Pelican Eel)
এই জন্তু আপনাকে নির্ঘাত বিভৎসদর্শন কোনো এলিয়েনের কথা মনে করিয়ে দিতে পারে। ২.৫ ফুট লম্বা এই পেলিক্যান ঈল বা গাপলার ঈল (Eurypharynx pelecanoides) হল Eurypharynx গণের এপর্যন্ত আবিষ্কৃত একমাত্র সদস্য। সমুদ্রপৃষ্ঠের ১০০০ থেকে ২১০০ মিটার (৩২৮১-৬৮৯০ ফিট প্রায়) নীচে বসবাস করা এই বিভৎস প্রাণীর চোয়াল সারা দেহের তুলনায় অস্বাভাবিকরকম বড় আর অস্বাভাবিকরকম সম্প্রসারণশীল। কিন্তু এরা খুব বড় কিছু খেতে পারেনা বিধায় তুলনামূলক ছোট শিকারকেই ধরে আটকে ফেলে। এদের মাথার দিক চওড়া, কিন্তু পেছানে দিকে গিয়ে সরু আর ক্রমশ চিকন।
১১. ব্ল্যাক স্যালোয়ার (Black Swallower)
পেলিক্যান ঈল বড় কিছু
মুখের থলিতে নিতে পারলেও
গিলতে পারেনা। কিন্তু কেমন হয়
যদি বলি, এমনো মাছ
আছে, যেগুলো নিজের চাইতেও
বড় কিছুকে গিলে যেতে
পারে?!
Black
Swallower (Chiasmodon niger) এমনই
একটা মাছ, যে তার
শরীরের চাইতেও বড় কিছুকে
গিলে ফেলতে সক্ষম! সমুদ্রপৃষ্ঠের
৭০০ থেকে ২৭৪৫ মিটার
(২২৯৭-৯০০৬ ফিট) নীচে
বসবাস করা এই প্রাণীদের
দৈর্ঘ্য সবে ৯.৮
ইঞ্চি। অথচ এরা নিজ
ভরের (mass) চাইতে দশগুণ বেশি
ভরের আর কয়েকগুণ বড়/লম্বা প্রাণীকে গিলে
খেতে সক্ষম। এদের চোয়ালের
গঠনের ফলে এদের মুখে
ঢুকে পড়া সরু কোনো
প্রাণি সহজেই আটকে দাতগুলোর
ভিতরমুখী ধাক্কায় ভেতর দিকে চলে
যায়। ২০০৭ সালে কেইমেন
দ্বীপের উপকুলে পাওয়া ৭.৫ ইঞ্চির এক
স্য়্যালোয়ারের পেট থেকে একটি Snake mackerel
মাছ পাওয়া যায় যার
দৈর্ঘ্য ছিল ৩৪ ইঞ্চি!
মানে নিজে দেহের চাইতেই
প্রায় সাড়ে চার গুণ
লম্বা!
উল্লেখ্য যে এমাছ বিশ্বজুড়ে
গভীর সমুদ্রের সর্বত্রই দেখা যায়।
১২. ফ্রিলড সার্ক (Frilled Shark)
প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগরের পাওয়া Frilled Shark (Chlamydoselachus anguineus) এর বসবাস সমুদ্রপৃষ্ঠের ৫০ থেকে ১৫৭০ মিটার (১৬০ – ৫১৫০ ফিট) গভীরে। অন্যান্য বহু হাঙরের মত এটিও যেন জ্যান্ত ফসিল! আসলে হাঙরের গোটা জাতটাই খুব খুব প্রাচীন। প্রচলিত হাঙরদের চাইতে এদের শরীর অনেক সর্পিল। মানে একেবেকে চলার মত। চেহারা ভুতুড়ে আর বেড়িয়ে থাকা ক্ষুরধার দাঁতগুলো ভেতরের দিকে বেকে গিয়ে একে করেছে আরো ভয়ানক! যাতে একবার শিকার পড়লে আঙটার মত আটকে যায়! এদের সর্বোচ্চ রেকর্ডকৃত দৈর্ঘ্য ৬.৬ফিট।
১৩. সুচালোমুখো ভুতুড়ে হাঙর (Pointy nosed ghost shark)
হাঙরের আরো একটা অদ্ভুত প্রজাতি হল এই Pointy nose ghost shark বা Pointy nose blue Chimaera (Hydrolagus trolli)। এদের কুতকুতে চোখ আর অদ্ভুত কারুকার্যের মাথা দেখলে মনে হবে যেন অন্যরকম কোনো কিছু! যেন বেশ বুদ্ধিদীপ্ত কোনো প্রাণী! প্রশান্ত ও দক্ষিণ মহাসাগর, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসহ বিশ্বের অনেক জায়গাতেই সমুদ্রের ৬১০ থেকে ২০০০ মিটার (২০০০-৬৫৬০ ফিট) গভীরে এদের দেখা মেলে। এরা ৪৭” বা প্রায় ৪ ফিট পর্যন্তও বড় হতে পারে।
তো এই ছিল আজকের
আলোচনা আমাদের কিছু গভীর
সমুদ্রের প্রাণীদের নিয়ে। যদিও সাগরের
অপামর রহস্য আর প্রাণীকুল
সম্বন্ধে অনেক কিছুই আমাদের
অজানা। তবু বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার
সাথে সাথে আমরা আগামীতে
আরো অনেক কিছু জানতে
পারবো গভীর সাগরের রহস্যপুরীর
ব্যাপারে। আবিষ্কৃত হতে পারে অকল্পনীয়
রকমের বড় কোনো প্রাণি,
বা অদ্ভুত কোনো কিছু।
জানবো এই অজানা দেশ
সম্পর্কে আরো অনেক তথ্য।
তো আবার আসবো নতুন
কোনো বিষয় নিয়ে। ততদিন,
ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন,
নিজের খেয়াল রাখুন।
Discussion about this post