১৩৫০-৪৬০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
১৩৮০ কোটি বৎসর আগে বিগব্যাং-এর মাধ্যমে মহাবিশ্বের জীবন শুরু হয়েছিল। ১৩৫০ কোটি বৎসরের ভিতরে বস্তুজগত নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গ্যালাক্সি এবং নক্ষত্র তৈরির পর্যায়ে চলে এসেছিল। কিন্তু মহাকাশের বস্তুজগতের পরিবর্তন তখনও চলছিল। মহাকাশীয় এই বস্তুজগতের বিবর্তনের ধারায় প্রায় ৪৬০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সৃষ্টি হয়েছিল আমাদের সৌরজগৎ। এই সূত্রে সৃষ্টি হয়েছিল আমাদের পৃথিবী। এই বিবর্তনের পথ ধরে এই গল্পের এই নতুন অধ্যায়ের শুরু।
১৩৫০–১৩০০ কোটি বৎসর খ্রিষ্টপূর্বাব্দ:
মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এই সময়কে নামকরণ করেছেন পুন-আয়োনিত আমল
(Reionization ages)। এই সময়ের ভিতরে ধীরে ধীরে মহাকশের নানা প্রান্তে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে জ্বলে উঠছিল ছোটো বড় নানা ধরণের নক্ষত্রসহ নানা ধরণের মহাকাশীয় উপাদান। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা এই সময়ে উৎপন্ন যে সকল উল্লেখযোগ্য নক্ষত্রের সন্ধান পেয়েছেন,
সেগুলোকে প্রাচীনতম নক্ষত্র হিসেবেই অভিহিত করে থাকেন। যেমন-
- SMSS J031300.36-670839.3 (১৩২০ কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
- HE 1523-0901 (১৩২০ কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
- Sneden’s Star (১৩০০ কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
- SDSS J102915+172927 (১৩০০ কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
- HE0107-5240 (১৩০০ কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)
মূলত নক্ষত্র সৃষ্টির মধ্য দিয়ে- মহাকাশ তার অন্ধকার দশার পথ পেরিয়ে আলোকিত দশার দ্বার প্রান্তে এসে পৌঁছেছিল। আবার সৃষ্ট নক্ষত্রের সূত্রে- নক্ষত্র থেকে বেরিয়ে আসা আয়োনিত কণায় মহাকাশ সমৃদ্ধ হয়ে উঠছিল। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো- আণবিক মেঘ সৃষ্টির আগেই প্রচুর আয়োনিত পরমাণু মহাবিশ্বে ছিল। তার সাথে যুক্ত হতে শুরু করলো নক্ষত্রজাত আয়োনিত পরমাণুরাশি। এর মধ্য দিয়ে সূচিত হয়েছিল একটি নতুন মহাজাগতিক অধ্যায়। মহাকাশবিজ্ঞানীরা এই যুগকে পুন-আয়োনিত আমল
(Reionization ages) নামে অভিহিত করে থাকেন। প্রায় ১০০ কোটি বৎসর ধরে এই প্রক্রিয়াটি অব্যাহত ছিল। ফলে মহাকাশের পরিবেশ পাল্টে গিয়েছিল। মহাকাশীয় সহজাত শীতলতার প্রক্রিয়ায় তাপমাত্রা কমা শুরু হয়েছিল এই সময়ের শুরু থেকেই। ১৩৫০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে মহাকাশের তাপমাত্রা ছিল ৬০ কেলভিন। আর ১৩০০ কোটি বৎসর শেষে এর তাপমাত্রা নেমে এসে দাঁড়ালো ১৯ কেলভিন।
আণবিক মেঘের আদি অণুগুলোর সাথে আয়োনিত পরমাণুর যুক্ত হয়ে আণবিক মেঘগুলো নতুন রূপে বিকশিত হচ্ছিল। মেঘের উপকরণকে মহাকাশ
বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন কসমিক ধূলিকণা (Cosmic dust) । এতে ছিল আয়োনিত গ্যাস, হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের অণুসহ আন্তঃনাক্ষত্রিক নানাবিধ উপকরণ। যেমন- কার্বন, জটিল জৈব-অণু, ফরমালডিহাইড, পলিসাইক্লিক এ্যারোম্যাটিক হাইড্রোকার্বন ইত্যাদি। এসব মিলে তৈরি হয়েছিল নীহারিকা। এই সময়েও গ্যালাক্সি তৈরি প্রক্রিয়া চলছিল। আমাদের ছায়াপথ নামক গ্যালাক্সির উদ্ভব হয়েছিল ১৩৬০ কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দের দিকে। ছায়াপথ ছাড়া এই আমলে সৃষ্টি হয়েছিল
এমনি আরও বেশকিছু গ্যালাক্স। যেমন-১৩৪০ কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দে সৃষ্টি হয়েছিল GN-z11 গ্যালাক্সি। এর কিছু পরে ১৩২০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে তৈরি হয়েছিল Galaxy EGS8p7।
১৩০০ কোটি থেকে ১০০০ কোটি খ্রিষ্ট–পূর্বাব্দ:
পুন-আয়োনিত আমলে গ্যালাক্সি তৈরি হওয়া শুরু হলেও, ব্যাপকভাবে গ্যালাক্সি তৈরি হয়েছিল ১৩০০ থেকে ১০০০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে। এই কারণে একে বলা হয় গ্যালাক্সি-সংঘটন (Galaxy formation) আমল। উল্লেখ্য এই আমলে মহাবিশ্বের তাপমাত্রা ১৯ কেলভিন থেকে ৪ কেলভিনে নেমে এসেছিল। গ্যালাক্সি তৈরি প্রক্রিয়ার সময় এবং পরে বহু নক্ষত্রের জন্ম হয়েছিল এবং এই সৃষ্টি প্রক্রিয়া এখনও অব্যাহত আছে। এই সময়ের সৃষ্ট একটি উল্লেখযোগ্য নক্ষত্র হলো- BPS CS31082-0001। ধারণা করা হয়ে এই নক্ষত্রটির জন্ম হয়েছিল ১২৫০ কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দে।
১০০০ কোটি থেকে ৪৬০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দ: ইতিমধ্যে আমরা জেনে গেছি যে, প্রায় ১৩,৬০ কোটি পূর্বে জন্মলাভ করেছিল ছায়াপথ নামক গ্যালাক্সি। আর
এই গ্যালাক্সি’তেই ৪৬০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
দিকে সৃষ্টি হয়েছিল সূর্য ও সৌরজগৎ।
এই ছায়াপথ নামক গ্যালাক্সি‘র কেন্দ্র থেকে প্রায় ২৫০০০ আলোকবর্ষ দূরে অরিওন (Orion) নামক বাহুতে, প্রায় ৫০০ কোটি বৎসর আগে বিশাল আকারের একটি মহাকাশীয় মেঘ জমাট বেঁধেছিল। এই মেঘ থেকে সৃষ্টি হয়েছিল আদিম সূর্য।
৪৬০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে এই সূর্যের পাশে কোনো নবতারার বিস্ফোরণের ফলে বা এর পাশ দিয়ে যাওয়া কোনো বৃহৎ নক্ষত্রের প্রভাবে সূর্য থেকে বিপুল পরিমাণ বস্তু ছিটকে পড়েছিল। এই ছিটকে পড়া একটি অংশ মহাকাশে পালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সূর্যের কাছাকাছি কিছু বস্তু আবার সূর্যের টানে সূর্যের বুকে আশ্রয় নিয়েছিল। বাকি অংশটুক সূর্যের আকর্ষণে বাধা পড়ে গিয়েছিল। এই বাধা পড়া অংশ সূর্যের মাধ্যাকর্যষণ শক্তিকে উপেক্ষা করে মহাকাশে পালিয়ে যেতে পারলো না। আবার সূর্যের আকর্ষণে সূর্যের বুকে আশ্রয় নিতেও ব্যর্থ হলো। ফলে এরা সূর্যকে ঘিরেই আবর্তিত হতে থাকলো। প্রথমাবস্থায় এই আটকে পড়া বস্তুপুঞ্জ সূর্যকে ঘিরে বলয় তৈরি করেছিল। কালক্রমে এই বলয়গুলো থেকে তৈরি হয়েছিল ছোটো-বড় নানা ধরনের মহাকাশীয় গোলক। কালক্রমে এই গোলকগুলো থেকে সৃষ্টি হয়েছিল গ্রহ, উপগ্রহ, ধূমকেতু ইত্যাদি। আর এসব নিয়ে সূর্যের পরিবার তথা সৌরজগৎ।
সূর্য পরিচিতি
সূর্যের অভ্যন্তরে হাইড্রোজেন গ্যাস সংযোজিত হয়ে হিলিয়াম সৃষ্টি হয় এবং এই সূত্রে তৈরি হয় উত্তাপ ও আলো। বর্ণালীর শ্রেণি অনুসারে সূর্যি G2 শ্রেণির অর্থাৎ হলুদবর্ণের নক্ষত্র। ভরের বিচারে সূর্য বামন শ্রেণির
(V)। এই কারণে সূর্যের বর্ণালী শ্রেণির সংকেত হিসাবে লিখা হয় G2V।
সূর্য প্রায় পূর্ণ-গোলকের মতো। কারণ, এর বিষুব অঞ্চলের ব্যাসের চেয়ে মেরু অঞ্চলের ব্যাসের পার্থক্য মাত্র ১০ কিলোমিটার। এই সামান্য পার্থক্যের কারণেই একে বলা হয় প্রায়-পূর্ণগোলক। কিন্তু দূর থেকে দেখলে একে পূর্ণ গোলকই মনে হয়। এটি একটি গ্যাসীয় গোলক হওয়ার কারণে, এর উপরিতল গ্রহগুলোর মতো সুনির্দিষ্ট অবস্থায় থাকে না। গ্যাসের ঘনত্ব, অভ্যন্তরীণ অন্তর্মুখী-চাপ ও বহির্মুখী-চাপে এর উপরিতলের প্রতিনিয়ত পরিবর্তন ঘটতে থাকে। মূলতঃ এর আলোকমণ্ডলের প্রান্তীয় অংশ অনুসারে সূর্যের উপরিতলের পরিমাপ নেওয়া হয়।
ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে সূর্যের দূরত্ব হলো-২.৫´১০১৭ কিলোমিটার (২৬,০০০ আলোক বর্ষ)। যেহেতু পুরো ছায়াপথ নিজেই তার নিজস্ব কক্ষপথ ধরে ছুটে চলেছে। সেই কারণে, সূর্যও নির্দিষ্ট গতিতে ছায়াপথের কেন্দ্র অনুসরণ করে ছুটে চলেছে। এক্ষেত্রে সৌরজগতের ঘূর্ণায়ামান গতি প্রতি সেকেণ্ডে প্রায় ২১৭ কিলোমিটার। এই গতিতে সৌরজগৎ একবার সম্পূর্ণ আবর্তিত হতে সময় নেয় ২২৬,০০০,০০০ বৎসর। আর সূর্য তার অক্ষের উপর একবার ঘুরে আসতে সময় নেয়- পার্থিব সময়ের হিসাবে প্রায় ২৫ দিন, ৯ ঘন্টা,৭ মিনিট ১২ সেকেন্ড। নিজ অক্ষের উপর এর ঘুর্ণন গতি প্রায় ৭১৭৪ কিলোমিটার/ঘন্টা।
এর ব্যাস ১.৩৯২´১০৬ কিলোমিটার (পৃথিবীর প্রায় ১০৯
গুণ বড়।) এর উপরিতলের জায়গার পরিমাণ ৬.০৯´১০১২। পৃথিবীর তুলনায় এই জায়গার পরিমাণ দাঁড়ায় ১১,৯০০ গুণ বেশি। এর ভর ১.৯৮৯১´১০৩০ কিলোগ্রাম। অর্থাৎ এই ভর পৃথিবীর ভরের চেয়ে ৩৩২,৯৫০ গুণ বেশি। এর আপেক্ষিক ঘনত্ব ১.৪০৮ গ্রাম/ঘন-সেন্টিমিটার (পানি এক)। এর উপরিতলের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির পরিমাণ ২৭.৯ গ্রাম। সূর্যের কেন্দ্রের ঘনত্ব প্রায় ১৫০,০০০ কেজি/মিটার৩। এই ঘনত্ব পৃথিবীর পানির ঘনত্বের ১৫০গুণ বেশি। বর্তমানে সূর্যের বস্তুপুঞ্জের বিশ্লেষণ করে ধারণা পাওয়া যায়,
তা হলো-
হাইড্রোজেন ৭৩.৪৬%
হিলিয়াম ২৪.৮৫%
অক্সিজেন
০.৭৭%
কার্বন ০.২৯%
লৌহ
০.১৬%
নিয়ন ০.১২%
নাইট্রোজেন ০.১৯%
সিলিকন ০.০৭%
ম্যাগনেশিয়াম ০.০৫% সালফার
০.০৪%
সূর্যের অভ্যন্তরীণ গঠন প্রণালী অনুসারে সূর্যকে প্রধান ৩ টি ভাগে ভাগ করা হয়। ভাগগুলি হলো-
১. কেন্দ্রমণ্ডল (Center zone): এই মণ্ডলে রয়েছে ঘন হাইড্রোজেনের শাঁস। এই অংশের বিস্তৃতি প্রায় ১৭৫ হাজার কিলোমিটার। তবে এই অঞ্চল বাইরে থেকে দেখা যায় না। এই অঞ্চলের তাপমাত্রা ১৩,৬০০,০০০ কেলভিন। সূর্যের ভিতরের নিউক্লিয়ার ফিউশানের মধ্য দিয়ে হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম তৈরি হয়। প্রতি সেকেন্ডে ৮.৯´১০৩ প্রোটন
(হাইড্রোজেন নিউক্লে) সংযোজিত হয়ে হিলিয়াম নিউক্লে তৈরি হয়। এক্ষেত্রে প্রতি সেকেণ্ডে সূর্যের অভ্যন্তরে ৪,২৬০,০০০ টন হাইড্রোজেনের পরিবর্তন ঘটে চলেছে। এই প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় উচ্চ-ক্ষমতা সম্পন্ন ফোটন কণা ও উত্তাপ। ধারণা করা হয়, আগামী ৫০০ কোটি বৎসরের ভিতরে সূর্যের সকল জ্বালানী শেষ হয়ে যাবে এবং এরপর সূর্য একটি লাল বামন তারায় (reddwarf star) পরিণত হবে।
২. মধ্যাঞ্চল (Interior): কেন্দ্রমণ্ডলের উৎপন্ন তাপ ও শক্তি এই অঞ্চলে পরিবাহিত হয়। এই অঞ্চলের প্রথমাংশে বিপুল পরিমাণ তেজস্ক্রিয় রশ্মির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এই কারণে মধ্যাঞ্চলের প্রথমাংশটুকু তেজস্ক্রিয়মণ্ডল (Radiative zone) বলে। এই মণ্ডলের আয়োনিত হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম থেকে বিচ্ছুরিত ফোটন কণার মাধ্যমে তাপ ও আলো বাইরের দিকে প্রবাহিত হয়। সৌরগোলকের ০.৭-১.০ অংশ পর্যন্ত এই মণ্ডলটির সীমা ধরা হয়।
৩. পরিচালন মণ্ডল (Convection
zone): তেজস্ক্রিয়মণ্ডলের পরেই রয়েছে পরিচালন মণ্ডল। এই মণ্ডলে সূর্যের গ্যাসীয় উপকরণ অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে, আয়নিত অবস্থায় দ্রুত উর্ধ্বমুখে সঞ্চালিত হতে থাকে। এই সকল সঞ্চালিত উপাদানসমূহ পরবর্তী আবহমণ্ডলে প্রবেশ করে। এই মণ্ডলের গভীর থেকে দানাদার গ্যাসীয় অংশ আবহমণ্ডলের অন্তর্গত আলোকমণ্ডলে সঞ্চালিত হয়। এরূপ এক একটি দানা দৈর্ঘ্যে ১০০ কিলোমিটার হতে পারে। এই দানাগুলি দ্বারা আলোকমণ্ডলে গ্যাস ও তাপমাত্রা পরিবাহিত হয়।
৪. সূর্যের বায়ুমণ্ডল (Solar atmosphere): কার্যকারিতার বিচারে সূর্যের বায়ুমণ্ডল চার ভাগে বিভক্ত করা হয়। ভাগগুলি হলো-
ক। আলোকমণ্ডল (Photosphere): বায়ুমণ্ডলের প্রথম অংশ আলোকমণ্ডল। এই অংশকেই দৃশ্যমান অংশ বিবেচনা করা হয়। এই অংশের উপরের দিকে সূর্যালোক ও তাপ মুক্তি পেয়ে মহাকাশে ছুটে যায়। এই মণ্ডলের তাপমাত্রা প্রায় ৬,০০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। আলোকমণ্ডলের পুরুত্ব প্রায় ১০,০০০ কিলোমিটার। এই মণ্ডলেই দৃষ্ট হয় সৌরকলঙ্ক।
সৌরকলঙ্ক
সূর্যের দিকে তাকালে সূর্যপৃষ্ঠে কিছু কালো দাগ দেখতে পাওয়া যায়। এই দাগকেই সৌরকলঙ্ক বলে। খ্রিষ্টপূর্ব ২০০ অব্দে চীনা জ্যোতির্বিদরা প্রথম সৌরকলঙ্ক শনাক্ত করেছিলেন বলে জানা যায়। ১৬১১ খ্রিষ্টাব্দে গ্যালিলিও তাঁর নব আবিস্কৃত টেলিস্কোপ দিয়ে প্রথম সৌরকলঙ্ক প্রত্যক্ষভাবে জনসমক্ষে উপস্থাপিত করেন। এরপর ১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দে জার্মান পদার্থ বিজ্ঞানী জোসেফ ভন ফ্রাউনহফার (Joseph von Fraunhofer) সূর্যের আলোকতরঙ্গ ব্যাখ্যা করেন। এরপর ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে আলোকতরঙ্গ সম্পর্কিত বিস্তারিত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্যার আইজেক নিউটন (Sir Isaac Newton)। এঁদের আলোকতরঙ্গের ব্যাখ্যায় জানা যায় সূর্যের উপরিভাগের তাপমাত্রা প্রায় ৯৩০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। কিন্তু কখনো কখনো কোথাও কোথাও এই তাপমাত্রা ৮১০০ ডিগ্রি ফারেহাইটে নেমে আসে। ফলে কম উত্তপ্ত জায়গা হিসাবে উক্ত স্থানগুলো কালো দেখায়। এই কালো দাগগুলো সর্বোচ্চ ৮০০০ কিলোমিটার বা ৫০০০ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত দেখা যায়। এই দাগগুলি অবশ্য বড় জোর কয়েক মাস থাকে, তারপর আবার মিলিয়ে যায়। প্রতি ১১ বৎসর অন্তর এই দাগগুলি পরিবর্তিত হয়ে আবার ফিরে আসে। সূর্যের ৩০ ডিগ্রি অক্ষাংশের কাছে কলঙ্কগুলি উৎপত্তি হয়ে বিষুব অঞ্চলে সঞ্চালিত হয় এবং একসময় তা ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়।
সৌরকলঙ্ক অপেক্ষাকৃত শীতল হলেও এর চৌম্বকক্ষেত্র অত্যন্ত প্রবল হয়ে থাকে। উল্লেখ্য যেখানে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রে ১ গাউসের কম, সেখানে সৌরকলঙ্কে চৌম্বকক্ষেত্রের মান ২৫০০ গাউস পর্যন্ত লক্ষ্য করা যায়। এই সময় আকস্মিকভাবে এর আশপাশের আলোকমণ্ডলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। এই সময় সূর্য থেকে প্রচুর পরিমাণ শক্তি নির্গত হতে থাকে। ফলে আয়নিত (উচ্চ চার্জ যুক্ত কণা) প্রবল বেগে সূর্য থেকে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে। সৌরঝড়ের তীব্রতা পৃথিবীর আয়নমণ্ডলে পর্যন্ত আঘাত হানে। এ সময় পৃথিবীর রেডিও বার্তা বিঘ্নিত হতে থাকে।
খ। স্বল্প–তাপমাত্রা অঞ্চল (Temperature minimum): আলোকমণ্ডলের উপরের দিকের ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত অংশকে এই অঞ্চল ধরা হয়। এই অঞ্চলের তাপমাত্রা প্রায় ৪০০০ কেলভিন। কার্বন মনোক্সাইড বা জলীয় কণার মতো কিছু সরল অণুর উপস্থিতিতে এই অঞ্চল শীতল হয়ে পড়ে।
গ। বর্ণমণ্ডল (Chromosphere): আলোকমণ্ডলের পরে যে বর্ণময় গোলাপী আভাযুক্ত স্তর দেখা যায়, তাকে বর্ণমণ্ডল বলে। আলোকমণ্ডলের তীব্রতার কারণে এই স্তরটি সাধারণ অবস্থায় দেখা যায় না। একমাত্র সূর্যগ্রহণকালে এই অংশ দৃষ্ট হয়ে থাকে। এই অঞ্চলের পুরুত্ব ২০০০ কিলোমিটার।
ঘ। ছটামণ্ডল (Corona): বর্ণমণ্ডলের পরে যে বিস্তৃত শিখাযুক্ত স্তর দেখা যায় তাকে ছটামণ্ডল বলে। এই শিখাগুলোর বর্ণ সাদা হয়ে থাকে। সূর্যের বহির্মুখী চাপ এবং সৌর-বায়ু-প্রবাহের কারণে, বিশাল অগ্নিশিখা মহাকাশের দিকে প্রসারিত হয়। করোনা মণ্ডলের তাপমাত্রা ৫,০০০,০০০ কেলভিন।
সৌরজগত ও
সৌরজগতের সদস্যসমূহ
সূর্য ও তাকে ঘিরে আবর্তিত মহাকাশীয় প্রাকৃতিক উপকরণ নিয়ে গঠিত মহাকাশীয়-সংগঠন, তার সাধারণ পরিচয় সৌরজগত। বিজ্ঞানীরা মনে করেন সৌরজগতের মোট ভরের প্রায় ৯৯% ভাগ নিয়ে সূর্য তৈরি হয়েছে। বাকি ১% ভাগ নিয়ে সৌরজগতের অন্যান্য সদস্য তৈরি হয়েছে। এদের বেশিরভাগই সূর্যকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। সাধারণভাবে এই সকল সদস্যদের তালিকায় রয়েছে- ছোটো বড় নানা মাপের গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু, ধূমকেতু।
সৌরজগতের গ্রহসমূহ
- সূর্যকে কেন্দ্র করে যে সকল বিশালাকার মহাকাশীয় গোলক ঘুরে চলেছে, সে সকল গোলককে সাধারণভাবে গ্রহ নামে অভিহিত করা হয়। সূর্যের নিকট থেকে বিভিন্ন দূরত্বে এই গ্রহগুলো অবস্থান করছে। প্রকৃতপক্ষে সৌরজগতের গ্রহের সংখ্যা সুনির্দিষ্টভাবে এখনো নিরূপিত হয় না। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গ্রহের সংজ্ঞানুসারে কিছু গ্রহকে বামনগ্রহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। সেই বিচারে প্লুটোকে এখন আর প্রধান গ্রহ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। আকার এবং গাঠনিক উপাদান বিচার করে গ্রহগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগগুলো হলো–
- পৃথিবীসদৃশ–গ্রহ (terrestrial planets): সংখ্যা ৪
সূর্য থেকে পর পর চারটি গ্রহকে এই নামে অভিহিত করা হয়। এই গ্রহগুলোর গাঠনিক উপাদান পাথর ও বিভিন্ন ধরনের ধাতব পদার্থ। আবার ভূপ্রকৃতিও পৃথিবীর মতো। তাই এদেরকে পৃথিবীর অনুরূপ গ্রহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই শ্রেণিতে রয়েছে চারটি গ্রহ। এগুলো হলো– বুধ, শুক্র, পৃথিবী এবং মঙ্গল।
- গ্যাসীয় দানব–গ্রহ (Jovian planet, gas giant) : সংখ্যা ৪
মঙ্গল গ্রহের পরে ৪টি বিশালাকার গ্রহ রয়েছে। এই গ্রহগুলোর প্রধান উপাদান জমাটবদ্ধ গ্যাস। এই গ্যাসপিণ্ডের প্রধান অংশ হিসাবে আছে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, মিথেন, এ্যামোনিয়া। এই ৪টি গ্রহ হলো– বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন।
- বামন গ্রহ (dwarf planet)
গ্রহের তৃতীয় সূত্রানুসারে, প্লুটোকে গ্রহ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে কিনা, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তর্ক বিতর্ক চলছিল।
- পৃথিবীসদৃশ–গ্রহ (terrestrial planets): সংখ্যা ৪
সৌরজগতের অন্তর্গত গ্রহের বিচারে, ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে International Astronomical Union তিনটি শর্তের ভিত্তিতে গ্রহের একটি সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে। এই শর্তগুলো হলো-
- সূর্যকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণের বিচারে একটি সুনির্দিষ্ট কক্ষপথ থাকবে।
- এর উপরতলে তরলপদার্থের সমোচ্চশীলতা গুণের বিচারে এক ধরনের সাম্যরূপ দেখা যাবে, যা এর কেন্দ্র থেকে উপরিতলের দূরত্বের সাম্যতার বিচারে একটি প্রায় গোলাকার রূপ লাভ করবে।
- গ্রহ নিজ অক্ষের উপর আবর্তিত হবে এবং নিকটস্থ মহাকাশীয় বস্তুর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পৃথক কোনো চক্র তৈরি করবে না।
চ্যারন নামক উপগ্রহের প্রভাবে প্লুটো নিজের কক্ষপথ পরিত্যাগ করে ছোটো একটি চক্র তৈরি করে আবর্তিত হচ্ছে। ফলে সূর্যকে প্রদক্ষিণের জন্য একটি কেন্দ্র তৈরি হয়েছে, আবার একই সাথে নিজের ক্ষুদ্র চক্রের জন্য একটি কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। প্লুটো গ্রহের তৃতীয় শর্তকে লঙ্ঘন করে বলে- বলে একে গ্রহের মর্যাদা দেওয়া হয় না। আবার আকারে ছোটো বলে বামন বলা হয়।
পাশের চিত্রে প্লুটোর যে কক্ষপথ দেখানো হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, চ্যারন নামক উপগ্রহের প্রভাবে প্লুটো নিজের কক্ষপথ পরিত্যাগ করে ছোটো একটি চক্র তৈরি করে আবর্তিত হচ্ছে। ফলে সূর্যকে প্রদক্ষিণের জন্য একটি কেন্দ্র তৈরি হয়েছে, আবার একই সাথে নিজের ক্ষুদ্র চক্রের জন্য একটি কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। প্লুটোর এই বৈশিষ্ট্যের সূত্র ধরে শুধু প্লুটো নয়, সৌরজগতের প্লুটোর মতো আরও কিছু গ্রহকে নতুন করে নাম দেওয়া হয়েছে, বামন গ্রহ। এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সৌরজগতের বামনগ্রহগুলো−এরিস, প্লুটো, হাউমেইয়া। এছাড়া আরও তিনটি গ্রহকে বামনগ্রহের তালিকায় রাখা হয়েছে। ৯০৩৭৭ সেডনা, ৯০৪৮২ অরকাস এবং ৫০০০০ কুয়াওয়ার। তবে এগুলো বামনগ্রহ কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক আছে।
- গ্রহাণুপুঞ্জ
মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মধ্যবর্তী স্থানে গ্রহের চেয়ে ছোটো ছোটো বস্তু সূর্যকে আবর্তন করে চলেছে। এই ক্ষুদ্র বস্তুগুলোকে বলা হয় গ্রহাণু। আর সকল গ্রহাণুর সমষ্টিগত নাম গ্রহাণুপুঞ্জ। এই গ্রহাণুপুঞ্জগুলো যে কক্ষপথ ধরে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে, তাকে বলা হয় গ্রহাণুপুঞ্জ-বলয় (asteroid belt)। এই গ্রহাণুগুলোর উপাদান পৃথিবীসদৃশ গ্রহগুলোর অনুরূপ। ধারণা করা হয়, দূর-অতীতে কোনো গ্রহ ভেঙে এই গ্রহাণুগুলোর সৃষ্টি হয়েছিল।
- ধূমকেতু
মহাকাশে পরিভ্রমণমান এক প্রকার মহাকাশীয় বস্তু। পৃথিবী থেকে আমরা যে ধূমকেতু দেখি, সূর্য থেকে বহুদূরে পিণ্ডের আকারে থাকে। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময়, সূর্যের নিকটবর্তী হলে, এই মহাকাশীয় বস্তুর সাথে দীর্ঘ গ্যাসীয় পুচ্ছ দেখা যায়। জ্যোতির্বিজ্ঞানে তখন একে ধূমকেতু নামে অভিহিত করা হয়।
- অন্যান্য উপকরণ
সৌরজগতের ভিতরে ভাসমান বহু ক্ষুদ্র বস্তু রয়েছে। সৌরজগত সৃষ্টির সময় এগুলো তৈরি হয়েছিল, কিম্বা সৌরজগতের বাইরে থাকে সৌরজগতে প্রবেশ করেছে। এগুলো অনেক সময় উল্কা হয়ে সূর্য এবং সৌরপরিবারের অন্যান্য সদস্যের উপর পতিত হয়।
সৌরজগতের ব্যাপ্তী
সৌরজগতের ব্যাপ্তী বলতে বুঝায়, সূর্যের কেন্দ্র থেকে কতদূর পর্যন্ত সূর্যের আকর্ষণী ক্ষমতা রয়েছে। সূর্যের এই আকর্ষণী এলাকার ভিতরে যে সকল সদস্য রয়েছে, তাদের গঠন প্রকৃতি অনুসারে সৌরজগতের ব্যাপ্তী এলাকাকে ভাগ করা হয়েছে। এই ভাগগুলো হলো–
- অভ্যন্তরীণ গ্রহ–বলয় (Inner planets belt)
এই বলয়ের দূরত্ব সূর্যপৃষ্ঠ থেকে মঙ্গলগ্রহ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই বলয়ের ভিতরে রয়েছে বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল এবং গ্রহাণুপুঞ্জ। এই বলয়ের শেষাংশে অবস্থিত গ্রহাণুগুলোর আবর্তনকে বলা হয় গ্রহাণুপুঞ্জ বলয়।
- বহিস্থঃ গ্রহবলয় (Outer planets belt)
অভ্যন্তরীণ গ্রহ-বলয়ের প্রান্তদেশে অবস্থিত গ্রহাণুপুঞ্জ বলয়ের পর থেকে এই বলয়ের শুরু এবং শেষ হয়েছে নেপচুন গ্রহ পর্যন্ত। এই বলয়ে রয়েছে বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুন গ্রহ।
- কুইপার
বলয় (Kuiper belt)
সূর্য থেকে ৩০-৫০ জ্যোতির্বিদ্যা একক (AU) দূরত্বে একটি বিশেষ ধরনের বলয়কে কুইপার বলয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মূলত নেপচুনের কক্ষপথের পরেই কুইপার বলয়ের শুরু। উল্লেখ্য এই বলয়টি অনেকটি গ্রহাণুপুঞ্জের বলয়ের মতো। তবে এই বলয়ে পাথরের পরিবর্তে রয়েছে পানি, মিথেন এবং এ্যামোনিয়ার সংমিশ্রণে সৃষ্ট বরফ খণ্ড। এই বলয়ে রয়েছে তিনটি বামন গ্রহ। এই গ্রহ তিনটি হলো- প্লুটো, হাউমিয়া, মাকেমাকে এবং এরিস। ধারণা করা হয়, এই বলয়ের ভিতরে আরও বহু ক্ষুদ্রাকার গ্রহ রয়েছে। এই অঞ্চলে বহু ধূমকেতুর উৎপত্তিস্থল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
- স্ক্যাটারেড ডিস্ক (Scattered disc)
কুইপার বলয়ের শেষাংশে থেকে দূর আকাশের বহুদূর পর্যন্ত এর বিস্তার। এই বলয়ের উল্লেখযোগ্য বামন গ্রহ এরিস (Eris)।
- দূরতম অঞ্চল
স্ক্যাটারেড ডিস্ক অঞ্চল থেকে আন্তঃমহাকাশীয় স্থানের মধ্যবর্তী অঞ্চলকে এই বলয়ের ভিতর ফেলা হয়।
- সীমানা
সৌরজগতের দূরতম অঞ্চলের শেষ সীমানার পরে রয়েছে আন্তঃমহাকাশীয় শূন্যস্থান। এই অঞ্চল সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা সম্ভব হয় নি। ধারণা করা হয়, প্রায় দুই আলোকবর্ষ বা ১,২৫,০০০ জ্যোতির্বিদ্যা একক (AU) দূরত্ব পর্যন্ত সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কাজ করে।
পৃথিবী সম্পর্কিত গবেষণার ইতিহাস:
- প্রাগৈতিহাসিক যুগে গ্রিক পৃথিবীকে অন্যান্য সকল মহাকাশীয় বস্তুর কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
- খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে এ্যারিস্টার্কাস (Aristarchus of Samos) প্রথম সূর্যকে কেন্দ্র হিসেবে ধরে সৌরজগতের একটি প্রাথমিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে তাঁর সেই ধারণাকে সে সময়ে কেউ গ্রহণ করেন নি।
- খ্রিষ্টীয় ষোড়শ শতকে নিকোলাস কোপার্নিকাস সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী আবর্তিত হচ্ছে, এই তথ্য প্রমাণাদিসহ উপস্থাপন করেন। এই তথ্যই গ্যালিলিও উপস্থাপন করার জন্য নিগৃহীত হন।
- খ্রিষ্টীয় ষোড়শ শতকে সৌরজগতের সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই সময় সূর্যের গ্রহতালিকায় স্থান পায়– বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি।
- ১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দে গ্রহ-তালিকায় স্থান পায় ইউরেনাস
- ১৮০১ খ্রিষ্টাব্দে সিরেজ (Ceres) নামক গ্রহাণু আবিষ্কৃত হয় মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মধ্যবর্তী স্থানে। প্রথমাবস্থায় এটিকে গ্রহের তালিকায় স্থান দেওয়া হয়েছিল। উল্লেখ্য, এই সময় আরও অনেক গ্রহাণুর সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল।
- ১৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দে নেপচুন আবিষ্কৃত হয় এবং সৌরজগতের গ্রহ-তালিকায় স্থান পায়।
- ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে প্লুটো আবিষ্কৃত হয়।
- ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে মহাকাশচারী কেনেথ এজওয়ার্থ (Kenneth Edgeworth) একটি প্রস্তাবনায় জানান যে, জানা গ্রহগুলোর পিছনে ধূমকেতু এবং কিছু বড় মহাকাশীয় বস্তু রয়েছে।
- ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে জান ওর্ট (Jan Oort) একটি তত্ত্বে জানান যে, সৌরজগতের শেষ প্রান্তে বিশালাকারের মেঘ রয়েছে, আর সেখান থেকে জন্ম নেয় ধূমকেতু।
- ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে সৌরজগতের নানা ধরনের মহাকাশীয় বস্তু আবিষ্কার এবং গ্রহের সূত্রানুসারে প্লুটো হয়ে যায় বামন গ্রহ।
- ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে জেরার্ড কুইপার অনুমান করেন যে, নেপচুনের কক্ষপথের বাইরে দূর-মহাকাশের দিকে বরফ-সমৃদ্ধ বস্তু আছে।
- ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে ডেভিড জেউইট (David Jewitt) এবং জান লু (Jane Luu) প্রথম আবিষ্কার করেন KBO, 1992QB1 নামক মহাকাশীয় বস্তু।
- ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে ৪৮ ইঞ্চি পালোমার মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ওসচিন টেলিস্কোপ (Oschin telescope) এর সাহায্যে কুইপার বলয়ের ১০০ কিলোমিটার ব্যাসের একটি বামন গ্রহ।
- ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে নেপচুনের কক্ষপথের পরে, কুইপার বলয়ে আবিষ্কৃত হয় এরিস নামক বামনগ্রহ।
- ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে কুইপার বলয়ে আবিষ্কৃত হয় হাউমেইয়া নামক বামনগ্রহ।
সূত্র:
Discussion about this post