অনলাইন ডেস্ক
দেশে প্রথম বারের মতো সাইটিনোপোগোন অ্যাঙ্গুলিস্পোরাস (Scytinopogon Angulisporus) নামক ছত্রাকের এক নতুন প্রজাতির দেখা মিলেছে। ক্লাভেরিয়াসি গোত্রের এ ছত্রাক প্রজাতির সঙ্গে অতীতে প্রকাশিত ছত্রাক প্রজাতির মিল নেই।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় অর্থায়নে গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ ও একই বিভাগের অধ্যাপক ড. গাজী মোশাররফ হোসেন।
বাংলাদেশ জার্নাল অব প্লান্ট ট্যাক্সনে ২৮ নম্বর ভলিয়্যুমের ২ নম্বর অনুচ্ছেদের ডিসেম্বর সংখ্যায় গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বিভিন্ন প্রজাতির ছত্রাক জন্মালেও সাইটিনোপোগোন অ্যাঙ্গুলিস্পোরাস প্রথম বারের মতো খুঁজে পাওয়া গেছে। দেশে ছত্রাক নিয়ে প্রকাশিত গবেষণায় এ প্রজাতির কোনো রেকর্ড নাই।
শ্রেণিবিন্যাসগত দিক থেকে নতুন শনাক্তকৃত এ প্রজাতিটির অবস্থান- রাজ্য: ফানজাই, বিভাগ: ব্যাসিডিওমাইকোটা, উপ-বিভাগ: অ্যাগারিকোমাইটিনা, শ্রেণি: অ্যাগারিকোমাইসিটিস, উপ-শ্রেণি: অ্যাগারিকোমাইসিটিডা, বর্গ: অ্যাগারিক্যালেস, গোত্র: ক্লাভেরিয়াসি, গণ: সাইটিনোপোগোন, প্রজাতি: সাইটিনোপোগোন অ্যাঙ্গুলিস্পোরাস।
গবেষণায় অ্যাঙ্গুলিস্পোরাসের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা হয়, এটা দেখতে চকের মতো সাদা, তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফ্যাকাসে হলুদ রঙ ধারণ করে। শুকিয়ে গেলে পুরোটাই ধুসর বর্ণের হয়ে থাকে। গোড়ার দিকের একটি সংকুচিত অংশ থেকে শাখায় বিভক্ত হয়। শাখাগুলো একই সমতলে বাড়লেও প্যাঁচানো হয়ে থাকে। শাখাগুলো ক্রমশ সুরু হয়ে ওপরের দিকে উঠে। তবে শাখার অগ্রভাগ ভোতা হয়ে থাকে। হায়ালিন কোণাকৃতির। এতে ক্রিস্টিডিয়া থাকে না। সাবহাইমেনিয়াম কোরালাকৃতির এবং সুরু হাইফি দিয়ে গঠিত।
গবেষণায় আরও বলা হয়, এ প্রজাতিটি বনের মৃত বস্তুর উপর জন্মে থাকে। সাধারণ ট্রপিক্যাল ও সাবট্রপিক্যাল অঞ্চলে এ প্রজাতিটি পাওয়া যায়। বিশেষ করে আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, মিয়ানমার, ক্যামেরুন, কঙ্গো, কিউবা, ভারত, জাপান, মাদাগাস্কার, মালেশিয়া, মৌরিতাস, নাইজেরিয়া, পানামা, ফিলিপাইনস, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, উগান্ডা ও যুক্তরাষ্ট্রে এ প্রজাতিটি পাওয়া গেছে।
গবেষণা উঠে আসে, সাইটিনোপোগোন গণটির অধীনে কোরাল আকৃতির আরও কয়েক প্রকার প্রজাতি আছে। এ গণটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরা স্পোর আকৃতির এবং সৌন্দর্যমণ্ডিত। এ গণটি দেখতে টেরুলা গণের মতো হলেও ব্যাসিডিওম্যাটা ও রংয়ের পার্থক্যের কারণে এটাকে সহজেই আলাদা করা যায়। সাইটিনোপোগোন ডিলবাটাস, রোবাস্টাস এবং কার্টেসিয়াম প্রভৃতি প্রজাতির সাথে গঠনগতভাবে নতুন প্রজাতিটির গঠনগত মিল রয়েছে। তবে হাইমেনিয়াম ও কোণাকার নুডুলোজ ব্যাসিডিওস্পোরের ভিন্নতার কারণে এটি স্বতন্ত্র।
আরও উল্লেখ করা হয়, অ্যাঙ্গুলিস্পোরাস ও রোবাস্টাসের ব্যাসিডিয়োম একই রকম হলেও স্পোরের আকার, ক্রিস্টালের উপস্থিতি এবং চুপসানো হাইফির কারণে তাদের আলাদা করা যায়। এছাড়াও র্যামারিয়া ইনভ্যালি ও র্যামারিয়োপসিস কুঞ্জি প্রজাতিরাও দেখতে অনেকটা নতুন শনাক্তকৃত প্রজাতিটির মতো।
বরগুনার তালতলি উপজেলার টেংরাগিরি বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে কাছে উপকূলীয় বনভূমির ১০০ বর্গমিটার আয়তনের মধ্যে এই প্রজাতিটি খুঁজে পান এই দুই গবেষক। প্রাঞ্চ ও ফেচনার নির্দেশিত পদ্ধতিতে প্রজাতিটির ফ্রুটিং নমুনা সংগ্রহ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান গবেষণাগারে এ গবেষণা চালানো হয়।
উদ্ভিদবিজ্ঞানের এ দুই অধ্যাপক ছত্রাক নিয়ে দেশের সুন্দরবন, হরিনঘাটা, পাথারঘাটা, ছনবুনিয়া, টেংরাগিরি, গঙ্গামতি প্রভৃতি অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা করে আসছেন।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ জাগো নিউকে বলেন, ‘গবেষণা এলাকায় ভিন্ন গঠনের এ ছত্রাক আমাদের চোখে পড়ে। পরে আণুবীক্ষণিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেল পরিচিত ছত্রাকের সঙ্গে এর বৈশিষ্ট্যগত মিল নাই। দেশে বর্তমান ছত্রাক প্রজাতির ওপর রচিত পুস্তক ঘেঁটেও এ প্রজাতি এর আগে দেশের কোথাও পাওয়া গেছে এরকম কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। মাক্রো ও মাইক্রো আণুবীক্ষণিক গবেষণায় আমরা নিশ্চিত হই এটি সাইটিনোপোগোন অ্যাঙ্গুলিস্পোরাস প্রজাতি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে মাইক্রো ফাংগাস নিয়ে খুব একটা কাজ নেই। যেখানে অ্যান্টিবায়োটিকসহ নানা উপাদানের সন্ধানে সারা বিশ্বে ছত্রাক সেকেন্ডারি মেটাবোলিটিস নিয়ে কাজ হচ্ছে। এছাড়াও দেশে ছত্রাকের বৈচিত্র্য নিয়ে কাজের পরিমাণ অনেক কম।’
নিবন্ধটির অপর গবেষক অধ্যাপক গাজী মোশাররফ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রজাতিটি ম্যানগ্রোভ বাস্তুসংস্থানের একটি ছত্রাক। ম্যানগ্রোভ অঞ্চলের বাস্তুসংস্থানের ওপর ছত্রাকের প্রভাব নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এ প্রজাতিটি আমাদের নজরে আসে। পরে গবেষণায় দেখা যায় দেশে এই প্রজাতির কোনো রেকর্ড নাই।’
বিজ্ঞানী প্যাটারসন ১৮৮৮ সালে এর নাম দিয়েছিলেন ক্লাভেরিয়া অ্যাঙ্গুলিস্পোরা। পরবর্তীতে বিজ্ঞানী কর্নার ২০১২ সালে প্রজাতিটির নাম রাখেন সাইটিনোপোগোন অ্যাঙ্গুলিস্পোরাস।
Discussion about this post