বিজ্ঞান ডেস্ক
বুধবার (২৩ আগস্ট) ভারতের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪মিনিটে চাঁদের পৃষ্ঠে অভিকর্ষ আর গতির কৌশলী নৃত্যের মাধ্যমে চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে ছুঁয়েছে, যেখানে দিনের বেলায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর এবং রাতে মাইনাস ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে। চাঁদের এই প্রান্ত এতদিন ছিল অজানা। ভারত চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান অবতরণ করা বিশ্বের প্রথম দেশ। আর সামগ্রিক অভিযানের দিক থেকে চতুর্থ। ভারতের আগে চাঁদে মহাকাশযান পাঠিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীন।
চাঁদের দক্ষিণ প্রান্তের অসম উচ্চতা, হাজার হাজার গভীর গর্ত আর মাটি থেকে উঠে আসা শত শত প্রতিবন্ধকতায় ভূখণ্ডটি আন্তঃগ্রহীয় অবস্থানে চন্দ্রযান-৩ এর অবতরণ ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। চন্দ্রযান-৩ এর অবতরণ প্রচেষ্টার মাত্র কয়েকদিন আগে রাশিয়া তার পাঠানো মহাকাশযান লুনা-২৫ হারিয়েছে। ঠিক একই অঞ্চল থেকে প্রায় ১২০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবতরণ করেছে বিক্রম।
মহাকাশযানটি অবতরণ করায় সবার চোখ এখন বিজ্ঞানের দিকে। পরবর্তী ১৪ দিন ওই অঞ্চলটি সূর্যের আলোতে আলোকিত হওয়ার সময় চন্দ্রযান-৩ এর দিকে নজর রাখবেন বিজ্ঞানীরা। ইসরো বলেছে, অঞ্চলটি আবার অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেলে ‘বিক্রম’ ও রোভার ‘প্রজ্ঞান’র অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যেতে পারে। এই মিশনের এক চান্দ্রদিন বা পৃথিবীর ১৪ দিনের সমান একটি সময়সীমা রয়েছে।
এই দুই যান চাঁদের ভূ-কাঠামো, এর খনিজসম্পদ এবং ভবিষ্যতে মানুষের অনুসন্ধানের সম্ভাব্যতা যাচাই এবং মূল্যবান তথ্য-উপাত্ত ইসরোর কাছে পাঠাবে; যা ভবিষ্যতে চন্দ্রাভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবনে সহায়তা করবে। চাঁদের পৃষ্ঠে চন্দ্রযান-৩ অভিযানের ফল কেবল ভারত নয়, বরং বিশ্বজুড়ে মহাকাশ গবেষণার সব সংস্থা উপকৃত হবে। ভারতের এই অভিযানকে আধুনিক চাঁদের দৌড়ের কেবল শুরু বলা হচ্ছে।
কী আছে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে?
> আগামী দিনে পৃথিবীর বাইরে যদি কখনও মানুষের বসবাসের জায়গা তৈরি হয়, তাহলে সবার আগে দরকার হবে পানির। তাই পৃথিবীর বাইরে এই একটি বস্তুই হন্যে হয়ে খুঁজে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সেই পানির সন্ধান মিলতে পারে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।
> এরই মধ্যে চন্দ্রযান-১ এবং চন্দ্রযান-২ এর অরবিটার চাঁদে খনিজ সম্পদ এবং পানির উপস্থিতির সন্ধান দিয়েছে।
> পরে বিজ্ঞানীরা আরো গবেষণা করে দেখেছেন, চাঁদের এসব এলাকায় অজস্র খাদের গভীরে যেহেতু কখনও সূর্যের আলো প্রবেশ করেনি, তাই সেখানে থাকতে পারে জলীয় বরফ। সেই বরফেরই সন্ধান করবে চন্দ্রযান-৩।
> চাঁদের এই দক্ষিণ মেরুতে যে কূপের মতো গর্ত রয়েছে, তা থেকে আরো তথ্য পাওয়ার আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। চাঁদের আগ্নেয়গিরি এমনকি প্রাচীন সমুদ্রের উৎসেরও খোঁজ করবেন তারা।
> চাঁদের এই মেরুতে অভিযাত্রী যান ‘প্রজ্ঞান’র ঘুরে বেড়ানোও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। দক্ষিণ মেরুর এই আঁধারে মোড়া এলাকায় প্রায়ই উল্কাপাত হয়। যখন-তখন ছিটকে আসে গ্রহাণুও। সেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে চন্দ্রযান-৩ কে বাঁচিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জও অনেক।
Discussion about this post