শিক্ষার আলো ডেস্ক
বেশি আর্দ্রতার কারণে অসহনীয় গরম পড়েছে। জনজীবন বিপর্যস্ত…।’ এই আর্দ্রতা বিষয়টা কী? কেনই–বা এটার কারণে গরম বেশি অনুভূত হয়? তাপমাত্রার সাথে সাথে বেশি আর্দ্রতা কেন অসহনীয় ?
আবহাওয়ার সংবাদে মাঝেমধ্যে বলা হয়, ‘টেম্পারেচার ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ফিলস লাইক ৪২।’ মানে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও গরম লাগছে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। অর্থাৎ গ্রীষ্মের আর্দ্র দিনে সত্যিকারের তাপমাত্রার চেয়ে বেশি তাপ অনুভূত হয় আমাদের শরীরে। এর রহস্যটা তাহলে কী? এমন আবহাওয়ায় মাঝেমধ্যে দমকা বাতাস বয়ে যায়, তবে সে বাতাসও এত গরম থাকে যে প্রশান্তির বদলে উল্টো ভীষণ অস্বস্তি লাগে। ঘামও বেরোয় না শরীর থেকে।
আর্দ্রতা কী?
বাতাসে ভাসমান জলীয় বাষ্পই হচ্ছে আর্দ্রতা। এই আর্দ্রতার কারণে শরীর থেকে অতিরিক্ত তাপ ঘামের সাহায্যে বের হয়ে যেতে পারে না। তাই গরমের মাত্রা বেড়ে যায় আরও বেশি। সাধারণ অবস্থায় ঘাম যখন ত্বকের উপরিভাগে আসে, তখন আমাদের শরীরের তাপে সেসব ঘাম বাতাসে বাষ্পীভূত হয়ে যায়। কিন্তু বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকলে ঘাম সহজে বাষ্পীভূত হয় না। কারণ, আশপাশের বাতাসে এমনিতেই তখন আর্দ্রতা বেশি থাকে। বাতাস অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প গ্রহণ করতে পারে না। শরীরের ঘাম যত ধীরে ও কম পরিমাণে বাষ্পীভূত হয়, আমরা তত বেশি গরম ও অস্বস্তি অনুভব করি।
আর্দ্রতা বাড়ে কেন?
বেশি গরমে আর্দ্রতাও বাড়ে। কারণ, ঠান্ডা বাতাসের তুলনায় গরম বাতাস বেশি পানির কণা ধরে রাখতে পারে। গবেষকেরা বলেন, তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি ফারেনহাইট (শূন্য দশমিক ৫৬ ডিগ্রি সেলস) বাড়লে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়ে ৪ শতাংশ। এ কারণে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ একই থাকলেও শীতকালের চেয়ে গ্রীষ্মকালে আমাদের অনেক বেশি অস্বস্তি লাগে।
আরও পড়ুনঃ জীবন-বিপন্নকারী মারাত্মক তাপমাত্রার ঝুঁকিতে শত কোটি মানুষ!
আর্দ্রতা শ্বাসকষ্ট বাড়ায় !
গরম ও আর্দ্র বাতাস যে শুধু আমাদের ত্বকেই অস্বস্তির সৃষ্টি করে, তা নয়। এমন বাতাসে আমাদের শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। জলীয় বাষ্প বাতাসে থাকা অক্সিজেন ও নাইট্রোজেনের কিছু অংশ বাষ্পীভূত করে দেয়। আর্দ্র বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ যায় কমে। ফলে শ্বাস নিতে আমাদের কষ্ট হয়। একই সঙ্গে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি গরম থাকায় শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়া চালাতে আমাদের শরীরকে বেশি শক্তি খরচ করতে হয়।
কতটুকু আর্দ্রতা অস্বস্তির কারণ ?
ঠিক কত তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা আমাদের জন্য অস্বস্তির কারণ হতে পারে, তার নির্দিষ্ট কোনো মাত্রা নেই। আমাদের শরীর এমনিতেই উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার সঙ্গে ধীরে ধীরে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষের শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে ৯–১৪ দিনের মধ্যে শরীর এই উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
তাই এমন গরমে সুস্থ থাকতে বেশি বেশি পানি ও তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে। গোসল করতে হবে নিয়মিত। সবচেয়ে বড় কথা, পৃথিবীকে ভালো রাখতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী দিন দিন আরও উষ্ণ হয়ে উঠছে। আমাদের মতো নাতিশীতোষ্ণ দেশগুলোতে আবহাওয়া এবং জলবায়ুর পরিবর্তন আরও স্পষ্ট।
Discussion about this post