পারভিন শেলী
রাজশাহী অঞ্চলে যেকোনো বাড়িতে কিছু না থাক এক খানা সজনা গাছ দেখা যাবে। আমার জানা মতে এই অঞ্চলের মানুষ সজনা ডাঁটা সব চেয়ে বেশি খেয়ে থাকে। ডাল সজনা, মাছ দিয়ে সজনা, সরিষা বাটা দিয়ে সজনা। সজনা শাক ভাজি ও ভর্তা। সজনা ফুল ডিম এর সাথে ভাজা এমন বাহারি পদে রান্না হয় সজনা । চিরো সবুজ সজনা পাতা দেখতেও বেশ মন মুগ্ধকর। শর্জিনা, সজনে, সাজনা এমন কি হাজনি নামেও শুনেছি ডাকতে। শৈশব থেকেই সজনা ডাঁটা ও শাক ছিলো আমাদের বাসার নিয়মিত খাদ্য তালিকায়। দুইটি বিশাল বড় গাছ ছিল বাসার সামনে ও পেছনে। ঝড়ে প্রত্যেক বছর ডাল ভেঙ্গে যেতো, ভাঙ্গা ডাল লাগালে আবার নতুন গাছ হয়। প্রচলিত আছে সজনা গাছের মরন নেই। সজনা পাতায় রয়েছে অসাধারন পুষ্টিগুন যা হয়তো আমাদের অনেকের অজানা। পুরো বিশ্ব একে চেনে ‘মিরাকেল মরিংগা নামে’। সজনা পাতায় রয়েছে গাজরের সমান ভিটামিন এ, অরেঞ্জ এর চেয়ে বেশি ভিটামিন সি, পালং শাক এর চেয়ে বেশি আয়রন, কলার চেয়ে বেশি পটাশিয়াম এবং শুনতে আশ্চর্য হলেও দুধের চেয়েও বেশি ক্যালসিয়াম। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ই l
প্রচুর তাৎক্ষনিক এনার্জি সমৃদ্ধ সজনা শাক আফ্রিকায় ভিশন জনপ্রিয়। সজনা পাতা ক্যাপসুল আকারেও ইউরোপ ও আমেরিকায় বিক্রি হয়ে থাকে নিউট্রিশন সাপ্লিমেন্ট হিসেবে। তবে এর কিছু পার্সপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। মরিংগা ক্যাপসুল শরীরে খুব দ্রুত শক্তি জোগায় ফলে শক্তি ক্ষয় হবার পরেই স্নায়ু অবসাদ নেমে আসে। বেশ কিছু প্রতিবেদিনেও জানা গেছে এর ক্যাপসুল সাপ্লিমেন্ট এর বিরুদ্ধে নানান মতামত।
শাক হিসেবে খাবার কোনো পার্সপ্রতিক্রিয়া নেই বরং আশ্চর্য রকম পুষ্টি সম্পন্ন সবজি ও শাক। এক গবেষনায় দেখা গেছে অনিয়ন ও ক্যাবেজ পরিবারের সবজিতে যে অ্যান্টি ক্যান্সার রয়েছে সজনা পাতায় সেই গুন মজুদ রয়েছে।
জানা যাক কিছু গুনাগুন
– সজনা পাতা শরীরে দ্রুত শক্তি জুগিয়ে সাস্থ ভাল করতে সাহায্য করে।
– পরিপাক তন্ত্র সুস্থ রাখে ও খাদ্য হজমের শক্তি বৃদ্ধি পায়।
– রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
– মন প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করে
– উচ্চ রক্ত চাঁপ কমাতে সাহায্য করে
– প্রচুর আঁশ সমৃদ্ধ তাই কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর করে
– আর্থ্রাইটিস এ খুব ভাল কাজ করে
– স্টমাক আলসার ভাল করে এবং স্টমাক লাইনিং মজবুত রাখে।
– প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে সজনা শাকে l
অনেকেই সজনা খেলেও শাক খেতে জানেন না। সামান্য একটু পানিতে এক চিমটি খাবার সোডা দিয়ে ফুটে উঠলে শাক দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। যেহেতু সজনা পাতা বেশ শক্ত তাই এই প্রক্রিয়ায় শাক একদম নরম হয়ে যাবে। এর সাথে মরিচ, পেয়াজ ও সরিষার তেল মিশিয়ে ভর্তা করে নিলেই চলে। অনেকেই ভাজিও করে খান। আমাদের বাসায় প্রচলন ছিল প্রসূতি মহিলাকে সজনা শাক দিয়ে খাবার দেবার। আজ বুঝি পুষ্টিগুন না জেনেও কেন দেয়া হত।
Discussion about this post