অনলাইন ডেস্ক
প্রথম বারের মতো ‘আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড ২০২০’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ৬টি পুরস্কারের মধ্যে দুটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে বাংলাদেশ। চূড়ান্ত পর্বে রৌপ্য জয় টিম ডিজিটাল। এছাড়াও বেস্ট প্রোটোটাইপ বিভাগে পুরস্কৃত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ডিউ নিমবাস।
হংকং-এ আয়োজিত এই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে বাংলাদেশের ১২ টি দল অংশ নিয়েছিলো। এদের মধ্যে রৌপ্যজয়ী টিম ডিজিটাল। ডিউ নিমবাস দলের তাহলীল, ইশতিয়াক জাহিদ, মোহাম্মদ আতিকুর রহমান এবং মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী পেলেন বেস্ট প্রোটোটাইপ পুরষ্কার।
আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াডের কথা প্রথমে শুনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের ফেসবুক পোস্ট থেকে। তারপর আমরা আইডিয়া নিয়ে কাজ করি। আমাদের একটি মাত্র অফলাইন মিটিং হয় বাকিসব অনলাইনে। অফলাইনে আমরা যেদিন বসি সেদিন ১৫ টার মত প্রজেক্ট নিয়ে বসি ওখান থেকে ১টি সিলেক্ট করি। সিলেক্টে আমরা মাথায় রাখি কিভাবে সরকারের উপকারে আসবে এবং মানুষের উপকারে আসবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইনুল হাসান স্যার আমাদের বললেন একটি বিষয়ের সমস্যা সমাধান করতে। ল্যান্ডের মত জটিলতার সমাধান করতে, যেটা করতে পারলে বাংলাদেশের মানুষের জন্য কিছু হবে এমনটাই জানান ডিউ নিমবাস।
ডিউ নিমবাস দলের সদস্য তাহলীল জানান, প্রথমে সরকারি সেবাকে ব্লকচেইন করার চেষ্টা করেছিলাম পরে দেখলাম সব কিছু নিয়ে কাজ করার সম্ভব না তাই স্যারের পরামর্শে ল্যান্ডকে ব্লকচেইনের আওতায় আনতে কাজ শুরু করি।
কেন ল্যান্ডের মত বিষয়টি বেছে নিলেন এই বিষয়ে আরেক সদস্য মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী জানান, বাংলাদেশের ১৬ শতাংশ পরিবার ল্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মতো সার্ভিস প্রতি বছর নিয়ে থাকে যা ৬৫ লাখ পরিবার। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল হিসাব অনুযায়ী প্রতি বছর ২৯৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার ঘুষ দিতে এই কাজ করতে গিয়ে। একটি দলিল করতে ১৯ টা ফিজিক্যাল কাজ করতে হয়, যার জন্য সময় লাগে দুই থেকে তিন মাস। আর একটি সাধারণ তথ্য জানতে গেলে পাঁচ-সাত দিন সময় লাগে। ব্লকচেইন এমন একটি কাজ করবে যার ফলে সবার কম্পিউটারে তথ্য পরিবর্তন সম্ভব নয়, একই নেটওয়ার্কে থাকার ফলে দুর্নীতি কমানো সম্ভব হবে।
বাংলাদেশে ব্যাংকের হিসাব মতে, ৬৪ শতাংশ মানুষ জমির কাগজ বন্ধক রেখে ঋণ নিচ্ছে। এখানেও দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব। কেউ ভুয়া কাগজ দিয়ে জমির ঋণ নিতে পারবেন না।
লেনদেন কিভাবে হবে এই বিষয়ে মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী জানান, নিমবাস প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ব্যাংকের মাধ্যেম লেনদেন করা যাবে। নগদ বা অন্য কোন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে চাচ্ছি না আমরা। ব্যাংকের লেনদেন স্বচ্ছতা অনেক বেশি। মোবাইলে ব্যাংকিং লেনদেনে ব্যয় বেশি এতো বড় লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে করাটায় ভালো। তবে আগামীতে এটা নিয়ে ভাবা যাবে।
টিমের অন্য সদস্য ইশতিয়াক জাহিদ বলেন, বর্তমান সরকার ভূমিকে ডিজিটালাইজেশন করতে কাজ করছে। আশা করি সব রেকর্ড ২০২২ সালের মধ্যে হয়ে যাবে। কাজ শেষ করলেই আমরা ২০২৩ সালে ১০টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ব্লকচেইন প্রযুক্তির পাইলট প্রজেক্ট শুরু করা হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তি থেকেও ব্লকচেইন আরো অনেক উন্নত।
কেমন সময় লাগবে জমি কেনা-বেচা করতে এই বিষয়ে টিম নিমবাসের সদস্য মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, একটি জমি কেনা-বেচা করতে ৭ টি ধাপ পার করতে হবে নিমবাসে, বিক্রি করতে সময় লাগবে ৩ দিন। কেউ যদি জমি কিনতে চায় নিমবাসে সার্চ সিস্টেম থাকবে। কোন জমি বিক্রি করা হবে তা দেখানো হবে। সেবাটি ফ্রিতে হবে না, জমির বিস্তারিত জানতে প্রতিবছর একজন গ্রাহককে ৫০ টাকা ফি দিতে হবে।
Discussion about this post