বিশেষ প্রতিবেদক
তথ্য-প্রযুক্তির সঙ্গে যেন তারুণ্যের গাঁটছড়া বাঁধা। বিল গেটস থেকে মার্ক জাকারবার্গ প্রযুক্তির দুনিয়া কাঁপিয়েছেন তরুণ বয়সেই। তরুণ বা নওজোয়ানদের অসাধ্য কিছু নেই। প্রথা ভাঙায় দুঃসাহস দেখাতে পারে শুধু তরুণরাই। বাংলাদেশেও রয়েছে এমন কিছু তরুণ প্রাণ, যারা চাকরির পেছনে না ঘুরে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার মধ্যে অন্যতম ফাহিম সালেহ। ফাহিম ও তার দুই সহযোদ্ধা স্বপ্ন দেখলেন উন্নত বিশ্বের আদলে বাংলাদেশেও অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা চালু করে মানুষের ভোগান্তি দূর করার। সেই স্বপ্নই বাস্তবে রূপ দিতে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘পাঠাও’।
রাইড শেয়ারিং অ্যাপটি এতটাই জনপ্রিয় পেয়েছে যে, গুগল প্লে-স্টোর থেকেই ডাউনলোড হয়েছে পাঁচ মিলিয়নেরও বেশি বার। বলা চলে, বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহর ঢাকার যাতায়াত ব্যবস্থায় রীতিমত বিপ্লব ঘটিয়েছে ‘পাঠাও’। তারুণ্যের এমন উদ্যোগ রাজধানীবাসীর ভোগান্তি আর দুর্ভোগ অনেকটাই লাঘব করেছে। এসবের নেপথ্যে ফাহিমের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। উদ্যোক্তা ফাহিমের ১৯৮৬ সালে জন্ম ।
তার বাবা সালেহ উদ্দিন বড় হয়েছেন চট্টগ্রামে আর মা নোয়াখালীর মানুষ। তবে ফাহিম থাকতেন নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে। মেধাবি ছাত্র ফাহিম নিউইয়র্কে একটি হাই স্কুলে পড়াবস্থায়ই ‘উইজ টিন’ নামক একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিলেন। বেশ অর্থও আয় করতে সক্ষম হন। এরপর ম্যাসেচুসেটস স্টেটের বেন্টলি ইউনিভার্সিটি থেকে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে কম্পিউটার ইনফরমেশন সিস্টেমে ব্যাচেলর করেন ফাহিম। উদ্ভাবনী মেধাসম্পন্ন ফাহিম আর পেছনে ফিরে না তাকিয়ে কিংবা কোন কোম্পানীতে চাকরির চেষ্টা না করেই মা-বাবার জন্মস্থান বাংলাদেশে ছুটেন।
২০০৭ সালে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে মিলে ফাহিম ঢাকায় হ্যাকহাউস নামের একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। সেটা খুব একটা সফলতা পায়নি। ফের ফিরে যান আমেরিকায়। তবে ২০১৪ সালে নিউইয়র্ক থেকে ঢাকায় গিয়ে পাঠাও চালু করে নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন তিনি। ফাহিম নাইজেরিয়া ও কলম্বিয়ায় এমন আরো দুটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ কোম্পানির মালিক। ইন্দোনেশিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশেও তিনি ব্যবসা বিস্তৃত করেছিলেন। বাংলাদেশে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ Pathao ছাড়াও নাইজেরিয়াতে Gokada এবং কলম্বিয়াতে Picap রাইড শেয়ারিং অ্যাপ কোম্পানির মালিকও তিনি ছিলেন। এছাড়াও teenhangout.com, PrankDial.com, Adventure Capital, KickBack Inc., HackHouseDhaka এর সফল উদ্যোক্তা তিনি। এই সফল উদ্যোক্তা বাংলাদেশের প্রযুক্তি নির্ভর উদ্যোগগুলোকে সিলিকন ভ্যালি আর ওয়াল স্ট্রিট এর নজরে এনেছিলেন, পাশাপাশি প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক বেকার যুবকের জীবনে পরিবর্তন এনেছিলেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশে যেই তথ্য প্রযুক্তি অবকাঠামো সৃস্টি হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, সেই অবকাঠামোর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে হাজারো তরুনের আত্মকর্মসংস্থানের অন্যতম সংস্থান রাইড শেয়ারিং প্লাটফর্ম ‘পাঠাও” এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা, চট্টগ্রামেরই সন্তান, নিউইয়র্ক নিবাসী ফাহিম সালেহ মাত্র ৩৩ বছর বয়সে নিউইয়র্কে তার বাসভবনে আততায়ীর হাতে নৃশংসভাবে নিহত হয়েছেন।প্রিয় বাংলাদেশে আর ফেরা হবে না ফাহিমের। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন দক্ষ প্রযুক্তিবিদ উদ্যোক্তাকে হারালো। ফাহিম সালেহর অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক ও তার পরিবারবর্গের প্রতি সহানুভুতি প্রকাশ করছে শিক্ষার আলো পরিবার ।
Discussion about this post