অনলাইন ডেস্ক
করোনা পরিস্থিতিতে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ইন্টারনেট বিলের ওপর অতিরিক্ত ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে দেশের ৪৪ বিশিষ্টজন বিবৃতি দিয়েছেন। আজ শনিবার এক বিবৃতিতে তারা বলছেন, কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে এবং নতুন প্রজন্মের মেধা ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকল্প নেই। ঠিক এ সময় সরকার কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষ করে মােবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের ওপর আরােপিত অতিরিক্ত কর/ভ্যাটের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা স্কুল অব ইকোনোমিক্স-এর প্রতিষ্ঠাতা ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দীন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাফর ইকবাল, কথা সাহিত্যিক ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান সেলিনা হোসেন, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সাইখ সিরাজ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ওমেনের প্রেসিডেন্ট রোকেয়া আফজাল রহমান, বুয়েটের কম্পিউটার সাইন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরীসহ ৪৪ জন।
বিবৃতিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর ঝুঁকির কারণে মার্চের মাঝামাঝি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর দুই সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষার্থীদের শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়ায় যুক্ত রাখার জন্য সরকার কর্তৃক চালু করা দূর-শিক্ষণ কার্যক্রম, বিশেষ করে সংসদ টেলিভিশন যথাসাধ্য প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি ইন্টারনেট, মােবাইল ফোন ও রেডিওভিত্তিক শিক্ষা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার প্রয়াসও প্রশংসার দাবি রাখে। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং এটুআইসহ সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাধুবাদ পাওয়ার যােগ্য।
তবে শিক্ষার্থীদের আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সুশিক্ষিত, বিজ্ঞানমনস্ক ও তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ মানুষের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নের জন্য প্রযুক্তিকে অবশ্যই আরও সহজলভ্য করা প্রয়ােজন। কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে মূলধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযােগ, প্রয়ােজনীয় সংখ্যক ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ট্যাবলেট ও স্মার্টফোন সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়ােজন। একই সঙ্গে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, পেশাগত উন্নয়ন, ও শিক্ষা কার্যক্রম মনিটরিংয়ের লক্ষ্যে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার, বিশেষ করে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য Massive Online Open Course (MOOC) চালু করা এখন সময়ের দাবি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ইন্টারনেটের ওপর কর কমানাের পরিবর্তে বাড়ানাে হয়েছে! বাজেটে দুই ধাপে (ব্যান্ডউইথ পাইকারি কেনা এবং খুচরা বিক্রির জন্য) ১৫% হারে ভ্যাট আরােপ করার ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী শিক্ষার্থীদের প্রায় ৩২.২৫% অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হবে। ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী সংগঠনগুলাের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী যেসব শিক্ষার্থী আগে গড়ে ১ হাজার টাকা মাসিক ইন্টারনেট বিল দিতেন। একই সেবা নেওয়ার জন্য এখন তাদেরকে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা গুণতে হবে। এটা অবশ্যই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর লক্ষ্য অর্জনের পরিপন্থী।
Discussion about this post