এস, এম, পারভেজ
সম্পাদক- শিক্ষার আলো
তরুণদের অনুপ্রেরণা তিনি। তরুণদের স্বপ্ন দেখান তিনি।সততা ও বিনম্রতার প্রতীক তিনি। তরুণদের নতুনভাবে ভাবতে শেখান তিনি। বলছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের কথা।তাঁর ৫০তম জন্মদিন আজ।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালে ২৭ জুলাই ঢাকায় পরমাণু বিজ্ঞানী এমএ ওয়াজেদ মিয়া ও শেখ হাসিনা দম্পতির ঘরে জন্ম নেন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জয় নাম রাখেন নানা শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার সময় মা ও বাবার সঙ্গে জার্মানিতে ছিলেন জয়। পরে মায়ের সঙ্গে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ভারতে চলে যান তিনি। তার শৈশব ও কৈশোর কাটে ভারতে। সেখানকার নৈনিতালের সেন্ট জোসেফ কলেজে লেখাপড়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক করেন তিনি। পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোক প্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।২০০২ সালের ২৬ অক্টোবর ক্রিস্টিন ওভারমায়ারকে বিয়ে করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। তাদের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।
২০০৭ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম কর্তৃক গ্লোবাল লিডার অব দ্য ওয়ার্ল্ড হিসেবে নির্বাচিত হন সজীব ওয়াজেদ জয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্লোগানটি যুক্ত হয় তার নেপথ্যে ছিলেন জয়।
পরবর্তী সময়ে পর্দার অন্তরালে থেকে গোটা দেশে তথ্য-প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটান এই তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। ২০১৪ সালের ১৭ নভেম্বর সজীব ওয়াজেদ জয়কে অবৈতনিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেয়া হয়।
লেখাপড়া করা অবস্থায় রাজনীতির প্রতি অনুরক্ত থাকলেও জয় সক্রিয় রাজনীতিতে নাম লেখান ২০১০ সালে। ওই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিতৃভূমি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ দেয়া হয় তাকে, যার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে আসেন তিনি। বর্তমানে মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়
আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ পাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তিনি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর ধারণা দেন এবং এর বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। মূলত বাংলাদেশকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে শক্তিশালী করতে এবং ই-গভর্নেন্স ও প্রযুক্তি শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে কাজ শুরু করেন। উন্নয়ন খাত এবং গভর্নেন্সে বাংলাদেশের বিভিন্ন লক্ষ্য অর্জনেও তিনি তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের উপর জোর দেন। তার লক্ষ্য হলো আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে আইটি আউটসোর্সিংয়ে শীর্ষস্থানে নিয়ে যাওয়া। ২০২১ সালের মধ্যে রপ্তানী আয়ে টেক্সটাইল এবং গার্মেন্টস খাতকে অতিক্রম করে যাওয়ার জন্য আইটি খাতকে নিয়ে তিনি বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।
তার বিভিন্ন দূরদর্শী উদ্যোগের কারণে বাংলাদেশ গত ৬ বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যাপক উন্নতি সাধন করতে সক্ষম হয়েছে, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে আইটি ফ্রিল্যান্সিংয়ে তৃতীয় স্থান দখল করতে সমর্থ হয়েছে। শুধুমাত্র ২০১৫ সালেই এই খাত থেকে ৩০ কোটি ডলার রপ্তানি আয় করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ।
এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি হাই-টেক পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। হাজার হাজার তরুণ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষতা বাড়ানোর প্রশিক্ষণ পাচ্ছে। আরও গবেষণার জন্য অনেককেই দেওয়া হচ্ছে বৃত্তি। বিভিন্ন সরকারি এবং জনসেবায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে সরকারি ওয়েবপোর্টাল ‘জাতীয় তথ্য বাতায়ন’ যা বিশ্বের মধ্যে সর্ববৃহৎ। প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে কয়েক’শ মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে। দেশের ৫ হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। ডিজিটালাইজেশনের সুফল দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মোবাইল এবং ইন্টারনেট ব্যবহারে বিপ্লব ঘটানোর কারণে বাংলাদেশকে এখন মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে ধরা হচ্ছে। এমনকি বিল গেটসও এর প্রশংসা করেছেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রীর অবৈতনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জয়ের অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছি। এই ডিজিটাল বাংলাদেশ জয়ের কাছ থেকে শেখা। জয়ই আমাকে এ ব্যাপারে সব রকম পরামর্শ দিয়েছিলো। ’
তথ্য-প্রযুক্তি সমৃদ্ধ উন্নত দেশ গড়তে জয়ের কাছ থেকে সব সময় পরামর্শ নিয়ে থাকেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
ডিজিটাল অর্থনীতির প্রবক্তা
দেশকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে একটি ভিশন বাস্তবায়ন বা এর জন্য নীতিমালা প্রণয়নই যথেষ্ট নয়, এর সঙ্গে প্রয়োজন ব্র্যান্ডিং। সজীব ওয়াজেদ আমাদের আমন্ত্রণে সিলিকন ভ্যালি, নিউইয়র্ক, নরওয়ে, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশের টেক সামিটগুলোতে অংশ নিয়েছেন এবং বাংলাদেশকে তথ্যপ্রযুক্তিতে বিনিয়োগের সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড, ই-এশিয়ার মতো আয়োজনে বিদেশি নেতৃবৃন্দকে বাংলাদেশে নিয়ে এসে তিনি আমাদের সক্ষমতা ও সম্ভাবনাগুলো তুলে ধরেছেন। তিনি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাংলাদেশকে নিয়ে যে আস্থা তৈরি করতে পেরেছেন তার সুফল আমরা পেয়ে চলেছি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় তার উপস্থাপনে মুগ্ধ হয়ে স্ন্যাপচ্যাটকে মাল্টিবিলিয়ন ডলারের আইপিওতে নিয়ে যাওয়া ইমরান খান বাংলাদেশে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। একইভাবে তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে পেগাসাস টেক ভেঞ্চারস, গোল্ডেন গেট ভেঞ্চারস, অ্যান্ট ফাইন্যান্সিয়াল, ডেফটা পার্টনার্স, ফাইভ হান্ড্রেড স্টার্টআপসসহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে।
তারুণ্যের পৃষ্ঠপোষক
পর্দার অন্তরালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থেকে গোটা দেশে তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব ঘটান এই তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে দলীয় ঘরানা ছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তি, রাজনীতি, সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ, তরুণ উদ্যোক্তা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন জয়। বিশেষ করে দেশের তরুণদের দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে আত্মনিয়োগ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কর্মসূচি ও পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি।
দেশ গঠনে তরুণদের মতামত, পরামর্শ শুনতে জয়ের ‘লেটস টক’ ও ‘পলিসি ক্যাফে’ দুটি প্রোগ্রাম ইতিমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। এছাড়া তিনি তরুণ উদ্যোক্তা ও তরুণ নেতৃত্বকে একসঙ্গে যুক্ত করার পাশাপাশি প্রশিক্ষিত করতে তরুণদের বৃহত্তম প্ল্যাটফরম ‘ইয়াং বাংলার’ সূচনা করেন। বর্তমানে বেশিরভাগ সময়েই দেশের বাইরে অবস্থান করতে থাকা সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের রাজনীতি ও সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে ফেসবুকে মতামত ব্যক্ত করে থাকেন। ইতিমধ্যেই ডিজিটাল বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে তার নামডাক ছড়িয়ে পড়েছে।
সজীব ওয়াজেদ বলে থাকেন, তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় নেতৃত্ব দিতে বাংলাদেশ থেকে গুগল, ফেসবুক, আমাজন, আলিবাবার মতো উদ্ভাবনী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তৈরি হতে হবে যার জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম। এই লক্ষ্যে তিনি ২০১৬ সালে ‘স্টার্টআপ বাংলাদেশ’ উদ্বোধন করেন, যেখানে তরুণ উদ্যোক্তা ও তাদের স্টার্টআপগুলোকে জায়গা, প্রশিক্ষণ, বিনিয়োগসহ সফল স্টার্টআপ হিসেবে তৈরিতে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি স্টার্টআপে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ সহজ করতে তিনি আমাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার নির্দেশনায় মাত্র তিন মাসের মধ্যে অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট রুল প্রণীত হয়। ছোট ছোট উদ্যোক্তার জন্য স্মল ক্যাপিটাল বোর্ড গঠন করা হয়।
ডিজিটাল বাংলাদেশের নেপথ্য নায়ক ও নিঃশব্দে ঘটে যাওয়া আইসিটি বিপ্লবের স্থপতি সজীব ওয়াজেদ জয়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাঁর কন্যার প্রজ্ঞা ও নিরলস শ্রমের সাথে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র জয়ের মেধার সম্মিলন ডিজিটাল বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছে এক স্বপ্নচূড়ায় ! করোনার এসময়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করে নির্বিঘ্নে লেখাপড়া, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামাজিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখা তারই প্রমাণ। দেশের লাখ লাখ তরুণ এখন ঘরে বসে আয় করছে। প্রতিযোগিতা করছে গোটা বিশ্বের সাথে। লাখ লাখ তরুণের মাঝে এ স্বপ্ন বুনে দিয়েছেন সজীব ওয়াজেদ জয়।
দীপ্ত তারুণ্যের প্রতীক ভবিষ্যত এই নেতৃত্বের দুটি অনুপ্রেরণাময় বক্তব্য-
জয় বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে নাগরিক সেবাগুলো মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে কাজ করছে সরকার। এরইমধ্যে সেবা ডিজিটাইজেশনে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন যেমন বাস্তবতা তেমনি আগামীতে এটিই বিশ্বে নেতৃত্ব দেবে। ডিজিটাল সেবা দিয়ে বাংলাদেশ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে জাতিসংঘের ৫০তম তালিকায় থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘সৎ সাহস ও নিজের আত্মবিশ্বাস থাকলে যে কোনো কঠিন কাজ করা যায়। আমরা কারও চেয়ে কম নই। বিদেশের সঙ্গে আমরা সমানে সমান। সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ে বিদেশী সাটিফিকেট প্রয়োজন নেই।’ অর্থাৎ এই তরুণ নেতৃত্বের কাছে পদ্মাসেতুর ঘটনার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে সততা এবং আদর্শের কোনো বিকল্প নেই। সৎ না থাকলে মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায় না। আর মানুষের ভালোবাসা ছাড়া ক্ষমতায় আসা যায় না। তিনি বিশ্বাস করেন, নিজের দেশকে টেনে উঠাতে হবে। দেশপ্রেম দেখাতে হবে। বিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে টেনে তোলার মধ্যেই দেশপ্রেম নিহিত রয়েছে
Discussion about this post