অনলাইন ডেস্ক
কালো মথুরা ( Lophura leucomelanos) ( ইংরেজি: Black Francolin ), কালা মথুরা , কালো ময়ূর বা শুধুই
মথুরা Phasianidae (ফ্যাসিয়ানিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Lophura (লোফুরা) গণের এক প্রজাতির পাখি। কালো মথুরার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ চূড়াধারী পাকড়া ময়ূর ( গ্রিক lopos =চূড়া, oura =লেজ, lenkos =সাদা ও melanos=কালো)।
প্রজাতিটি রূপালি মথুরার ( Lophuranycthemera ) সাথে একটি মহাপ্রজাতির সৃষ্টি করেছে। আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Least Concern বা বিপদমুক্ত বলে ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশে এরা বিপন্ন (Endangered) বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের ১৯৭৪[২] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। চাকমা ভাষায় কালো মথুরার নাম সানগ্রু । আবার খাসিয়া , মারমা ও ত্রিপুরা ভাষায় এর নাম যথাক্রমে খ্রুট , রই রাতা ও টকরু ।
আবাস
কালো মথুরার মূল আবাস বাংলাদেশ , ভারত, পাকিস্তান ,নেপাল , ভুটান , মিয়ানমার , চীন এবং থাইল্যান্ড ।
১৯৬২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে এদের অবমুক্ত করা হয়েছে।
কালো মথুরার মোট নয়টি উপপ্রজাতি সনাক্ত করা সম্ভব
oatesi , lineata and crawfurdi উপপ্রজাতিগুলো কালো মথুরার না রূপালি মথুরার সে বিষয়ে বিতর্ক
রয়েছে। এই দু’টি প্রজাতি নিজেদের মধ্যে উর্বর সংকর জন্ম দিতে সক্ষম। তবে ইরাবতী নদী প্রজাতি দু’টির মধ্যে প্রাকৃতিক বাধা হিসেবে কাজ করে। সাধারণত ইরাবতী নদীর পশ্চিম পার্শ্বে কালো মথুরার আবাস আর পূর্ব পার্শ্বে রূপালি মথুরার। উল্লিখিত তিনটি উপপ্রজাতির আবাস ইরাবতী নদীর পূর্ব পাশে হওয়ায় এদের
নামকরণ নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
বিবরণ
কালো মথুরা কালচে ভূচর পাখি। এদের দৈর্ঘ্য কমবেশি ৬২ সেন্টিমিটার, ডানা ২২ সেন্টিমিটার,ঠোঁট ৩.৫ সেন্টিমিটার, পা ৭.৫ সেন্টিমিটার, লেজ ২৩ সেন্টিমিটার ও ওজন ১.৩ কেজি। স্ত্রী ওপুরুষ পাখির মধ্যে পার্থক্য বিস্তর। পুরুষ মথুরার পিঠ উজ্জ্বল নীল ও কালোয় মেশানো। কোমর ও পেছনের পালকের প্রান্ত সাদা। মাথার চূড়ার পালক খাড়া ও পেছনমুখী। মুখ পালকহীন, মুখের চামড়া ও গলায় ঝুলন্ত লতিকা উজ্জ্বল লাল।
দেহতলে পুরো কালো রঙের উপর ইস্পাত-নীল ও বেগুনী চাকচিক্য। স্ত্রী মথুরার দেহে অনুজ্জ্বল বাদামি পালকের ধূসর প্রান্ত আঁশের মত দেখায়। মাথার চূড়া ও লেজের পালক প্রায় বাদামি। গলা পীতাভ-বাদামি।
কোমর ও পায়ের পালকের প্রান্তদেশ ফিকে।চোখের আশেপাশের অল্প একটু অংশ পালকহীন ও উজ্জ্বল লাল। স্ত্রী ও পুরুষ মথুরার উভয়ের চোখ পিঙ্গল থেকে কমলা-বাদামি। উভয়ের লেজ মোরগের লেজের মত। ঠোঁট সবুজাভ ও শিঙ-বর্ণের, ঠোঁটের গোড়া কালচে ও আগা ফিকে। পা ও পায়ের পাতা বাদামি। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে প্রায় স্ত্রী মথুরার মত, তবে পিঠে কালচে-বাদামি ও পীতাভ ডোরা দেখা যায়।উপপ্রজাতিভেদে কালো মথুরার মধ্যে ব্যাপক বিভিন্নতা দেখা যায়।
স্বভাব
কালো মথুরা বনের প্রান্তে ও বনসংলগ্ন খোলা জায়গায় বিচরণ করে। সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় বা পারিবারিক ছোট দলে থাকে। মাটিতে ঘুরে ঘুরে খাবার খুঁজে বেড়ায়। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে বাঁশবীজ, ডুমুর, বটফল,পিঁপড়া, উইপোকা, ছোট সাপ ও গিরগিটি। ভোরে ও গোধূলিতে এরা বেশি সক্রিয় থাকে। দিনের
বেলা গাছের নিচু ডালে বিশ্রাম নেয়। সকাল ও সন্ধ্যায় নিচু স্বরে মুরগীর মত ডাকে: কুড়ড়-কুড়ড়-কুড়চি-কুড়ড়… ।এরা খুব লাজুক পাখি,মানুষের আনাগোনা টের পেলে দ্রুত লুকিয়ে পড়ে।
প্রজনন
মার্চ থেকে অক্টোবর এদের প্রধান প্রজনন ঋতু। এসময় পুরুষ কালো মথুরার ডাকাডাকি বেড়ে যায়। স্ত্রী মথুরা ঘন ঝোপের নিচে নখ দিয়ে মাটি আঁচড়ে পাথর, লতাপাতা বা ঘাসের গোছা দিয়ে বাসা বানায়। বাসা বানানো শেষে ৬-৯টি ডিম পাড়ে।ডিমগুলো ফিকে-পীতাভ বা পীতাভ-সাদা থেকে লালচে পীত বর্ণের হয়। ডিমের মাপ ৪.৯ ×৩.৭ সেন্টিমিটার। স্ত্রী মথুরা একাই ডিমে তা দেয়। ২০-২১ দিনে ডিম ফোটে।
তথ্য: রেজা আহমেদ [ বাংলাদেশের পাখি পৃষ্ঠা-১১২]
Discussion about this post