মইনুল হাসান
এ বছরের শুরুতেই বিজ্ঞানীরা আরেকটি চমকপ্রদ খবর দিয়েছেন। তা হলো দুধের জন্য আর গাভির দরকার হবে না। ভবিষ্যতে এক কোষী অণুজীব হবে দুধের প্রধান উৎস। তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর তামির টুলের এবং খাদ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা ড. আইয়াল ইফারগান দুজনে মিলে এককোষী ছত্রাক ইস্ট থেকে দুধ উৎপাদনের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে এক বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছেন। পুষ্টিগুণের সঙ্গে রং, ঘ্রাণ, স্বাদ আর গঠন বিবেচনায় অণুজীব উৎপাদিত দুধ কোনো অংশেই কম যায় না; বরং আর কিছু পুষ্টিগুণ যোগ করে স্বাস্থ্যের জন্য আরও উত্তম করা যাবে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। এমনকি এ থেকে উৎকৃষ্ট মানের চিজ অর্থাৎ পনির তৈরি করা যাবে।
চিনি, দুধ, ঘ্রাণ আর মূল উপাদানের হেরফের করে নানা ব্র্যান্ডের চকলেটে বাজারে সয়লাব। গ্রিন অ্যান্ড ব্ল্যাকস, তাজা, থিও, মিল্কা, মার্স, নেস্টেলে, গডিভা, পাচি, গাইলিয়ান, ক্যাডবারি, ফেরেরো, আরও কত কী!
নানা তথ্য ঘাঁটতে গিয়ে প্রথমেই হোঁচট খেলাম। পৃথিবীজুড়ে মানুষের খুবই প্রিয় এই মজার খাবার। শুধু তা–ই নয়, এটি একেবারে স্বয়ং ‘ঈশ্বরের খাদ্য’। বহু বছর পূর্বে একজন উদ্ভিদবিজ্ঞানী কোকোয়া গাছটির নামকরণ করেছিলেন এমন করেই।এমন নামকরণের যুক্তি আছে। বহু আগে থেকেই চকলেটের জাদুকরি স্বাদের কথা মানুষ জানত। মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকার আদিবাসী অ্যাজটেক এবং মায়ারা ভগবানের খাবার চকলেট পানিতে গুলিয়ে ভগবানের পানীয় জ্ঞানে পান করত। এরপর আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে হার্নান কর্টেস নামে এক ইউরোপীয় অভিযাত্রী এই কোকোয়া বিনে লুকানো চমৎকার স্বাদের এবং সুগন্ধি ঘ্রাণের খাবারের সন্ধান পান। তিনি যেমনটি বলেছেন, ‘চকলেট অত্যন্ত উপাদেয়, সেই সঙ্গে জীবন রক্ষাকারী, এনার্জি প্রদায়ী খাবার’।
আর এ জন্যই দুর্গম স্থানে অভিযানকারী সৈনিকেরা সঙ্গে চকলেট বহন করে। ধীরে ধীরে এই পৃথিবীর খাবারপ্রেমীরা বেশুমার পরিমাণে চকলেটের প্রেমে পড়েছেন।আমি কাজে লেগে গেলাম। আমার কাজের জন্য শিল্পবর্জ্য হলো পনির শিল্পের ফেলে দেওয়া জল বা মাঠা আর অনুঘটক হলো লিপোজেনিক ইস্ট। এই অণুজীবের একটি বিশেষ গুণ হচ্ছে, খাবারে অতিরিক্ত চিনি থাকলে এককোষীটি শরীরে প্রচুর চর্বি জমা করে। আমাকে এমন ইস্ট কাজে লাগিয়ে উৎপাদন করতে হবে ‘কোকোয়া বাটার’ অর্থাৎ চকলেটের অন্যতম উপাদান ‘চকলেট মাখন’।
অবশেষে বংশগতির অণুতে খানিকটা প্রকৌশল কাজে লাগিয়ে একদম চকলেট মাখনের মতো স্বাদ, সুগন্ধের মাখন উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। যত সহজে এবং অল্প কথায় এমন অসাধ্য সাধনের কথা এখানে লিখেছি, তা তেমন সহজ মোটেই ছিল না।
আজ অণুজীব থেকে মজার চকলেট উৎপাদনের জৈবপ্রযুক্তি আমাদের হাতের মুঠোয় আছে। তবে অণুজীব এবং বর্জ্য—দুটোতেই সাধারণ মানুষের নেতিবাচক মনোভাব বেশ তীব্র। তাই এখনো সময় আসেনি বড়দিন বা ইস্টারে ইস্টের চকলেটে রসনা তৃপ্ত করার।
লেখক: ফ্রান্সপ্রবাসী গবেষক এবং লেখক।
Discussion about this post