বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
প্রত্যেক সপ্তাহে পৃথিবী থেকে মহাকাশে যাচ্ছে রকেট। কোনটা মঙ্গলে রোভার দিয়ে আসছে, কোনটা পর্যটক নিয়ে মহাকাশে যাচ্ছে, কোন রকেট আবার স্যাটেলাইট নিয়ে মহাকাশে যাচ্ছে। রোবট, নভোচারি কিংবা পর্যটক নিয়ে তো মহাকাশে ঘন ঘন যাওয়ার সুযোগ নেই।
সবচেয়ে বেশি রকেট মহাকাশে যাচ্ছে মূলত স্যাটেলাইট নিয়ে। কয়েকবছর ধরে মহাকাশে যেন স্যাটেলাইটের মেলা বসেছে। কিন্তু মহাকাশে ঠিক কতোগুলো স্যাটেলাইট আছে, সে বিষয়ে জানেন না অনেকেই।
সম্প্রতি মহাকাশে আর পৃথিবীর কক্ষপথে কতোগুলো স্যাটেলাইট আছে, এ নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচ্যুসেটসের সেন্টার ফর স্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের পরিচালক লওয়েল। অনেক স্যাটেলাইট মহাকাশে আছে কিন্তু অকার্যকর অবস্থায়। অনেকগুলো আবার জ্বলে গেছে। এরপরও এখনও হাজার হাজার স্যাটেলাইট আছে মহাকাশে।
যে প্রতিনিধি দলগুলো মহাকাশের স্যাটেলাইট নিয়ে নিরীক্ষা করেন, তারাও অনেক সময় বলতে পারেন না, মহাকাশে ঠিক কতোগুলো স্যাটেলাইট আছে।
কিন্তু সংবাদ মাধ্যম দ্যা কনসারভেশনে দেওয়া লওয়েলের তথ্য বলছে, পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরছে এমন স্যাটেলাইটের সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে, মহাকাশে ৭ হাজার ৯৪১ টি স্যাটেলাইট আছে। এরমধ্যে প্রথম মানুষের তৈরি স্যাটেলাইট রাশিয়ার স্পুটনিক ১৯৫৭ সালে মহাকাশে গেছে। এখনতো প্রতিবছরই কক্ষপথে স্যাটেলাইট যাচ্ছে। ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর ৬০ থেকে ১০০টা স্যাটেলটাইট মহাকাশে গেছে। এরপর নাটকীয়ভাবে বেড়েছে মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের সংখ্যা।
২০২০ সালে ১১৪টি রকেট ১ হাজার ৩০০ স্যাটেলাইট নিয়ে মহাকাশে গেছে। এরমধ্যে নতুন গেছে ১ হাজার স্যাটেলাইট। ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মহাকাশে ১ হাজার ৪০০ নতুন স্যাটেলাইট গেছে, যেগুলো পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে। সেপ্টেম্বরেই স্পেস এক্স একাই ৫১টি স্টারলিংক স্যাটেলাইট পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠিয়েছে।
মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ বাড়ার পেছনে কারণ দুটি। ২০২১ সালের আগস্টে স্পেস এক্সের একটি রকেট গেছে মহাকাশে, সাথে নিয়ে গেছে অনেকগুলো স্যাটেলাইট। স্যাটেলাইটের আকার ছোট হওয়ায় রকেটগুলো এখন অনেক বেশি স্যাটেলাইট ধারণে সক্ষম। প্রযুক্তির আধুনিকায়নে খুব সহজে আর কম খরচে মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। রকেটগুলো শক্তিশালী হয়নি, বরং স্যাটেলাইটগুলো আকারে ছোট হয়ে গেছে। ২০২০ সালে পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠানো স্যাটেলাইটগুলোর মধ্যে ৯৪ শতাংশই ক্ষুদ্র। ওজনে মাত্র ৬০০ কেজি।
স্যাটেলাইটগুলোর মধ্যে বড় একটি অংশ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে আর ইন্টারনেটের সার্ভিস দেয়। ২০২০ সালে ইন্টারনেট সেবার জন্য স্পেস এক্সের স্টারলিংক আর ওয়ান ওয়েবের ১ হাজার স্যাটেলাইট পৃথিবীর কক্ষপথে গেছে। দুটি কোম্পানি ভবিষ্যতে আরও ৪০ হাজার স্যাটেলাইট পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। বিভিন্ন কোম্পানি স্যাটেলাইট পাঠানোর পরিকল্পনায় ১ লাখ কোটি ডলারের বাজার দেখছেন। এ লক্ষ্যে অ্যামাজন কোম্পানি হাতে নিয়েছে কুইপার প্রকল্প।
কিন্তু অতিরিক্ত স্যাটেলাইটের কারণে পৃথিবীর আকাশ মানুষের কাছে আগের মতো দৃশ্যমান হচ্ছে না। স্পেস এক্স ৬০টি স্যাটেলাইট পাঠানোর পর মহাকাশবিজ্ঞানীরা জানান, রাতের আকাশে তারা দেখাই কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে স্যাটেলাইটের কারণে। পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে অনেক স্যাটেলাইট প্রদক্ষিণ করছে, যেগুলো মহাকাশে বর্জ্যও তৈরি করছে, যা ডেকে আনতে পারে বিপর্যয়।
এখন সেখানে অনেক দেশে শিক্ষার্থীদের প্রজেক্ট হয়ে গেছে স্পেস স্টেশন নিয়ে গবেষণা করা আর অন্তত ১০৫টি দেশের একটি করে হলেও স্যাটেলাইট আছে মহাকাশে।
Discussion about this post