অনলাইন ডেস্ক
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, দেশের সব মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এটি কোনো বিশেষ পেশার মানুষের জন্য নয়।
বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এ ধরনের আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে বেসরকারি সংস্থা ডিপ্লোম্যাটস আয়োজিত ‘ফ্যাক্ট অ্যান্ড ইমপ্যাক্ট অব ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ সেমিনারে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি একথা বলেন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মো. আমিন উদ্দিন এবং আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বিশেষ অতিথি হিসেবে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন। ব্যারিস্টার এস এম শফিউল্লাহ রহমান, ব্যারিস্টার আলী আসিফ খান রাজীব এবং অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কাজল মূল আলোচনায় অংশ নেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ যখন ডিজিটাল ছিল না—তখন এ আইনের প্রয়োজন হয়নি। আজ যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিংবা অনলাইনে একজন গৃহিণীর চরিত্র হনন করা বা মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয় তাহলে তিনি কোন আইনে প্রতিকার পাবেন! একজন কৃষক, ছাত্র, লেখক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী কিংবা একজন রাজনীতিবিদের ক্ষেত্রে যদি সেটি ঘটে, তাহলে প্রতিকার পেতে আইনের প্রয়োজন রয়েছে। সেই প্রয়োজনীয়তার নিরিখেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ভারতে দ্য ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যাক্ট-২০০০, পাকিস্তানে দ্য প্রিভেনশন অব ক্রাইম অ্যাক্ট-২০১৬ এবং সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়াতেও এ ধরনের আইন করা আছে। একটি ফ্রেমওয়ার্ক আইনের অধীনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত দেশগুলো এ ধরনের আইন প্রণয়ন করেছে কিংবা করছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে সরকার গঠনের আগে আমাদের দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার করতেন মাত্র ৫০ লাখ মানুষ। আজ ১১ কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন প্রায় আট কোটি মানুষ। আমরা সরকার গঠন করার আগে দেশে হাতেগোনা কয়েকটি অনলাইন পত্রিকা ছিল। এখন অনলাইন পত্রিকা কত বা কয় হাজার সেটি একটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়। পাশাপাশি আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, মানুষ অনলাইনে নানা প্রতিকূলতা ও বিগ্রহের শিকার হচ্ছে। অনলাইনে নানা ধরনের অপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে।
সাইবার ক্রাইমের উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, গত কয়েক বছরের ঘটনাপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করলে আমরা দেখতে পাই, রামুর ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালানোর কারণে হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দুর্গাপূজা উপলক্ষে যে ঘটনা ঘটেছে, সেটিও অপপ্রচারের কারণে হয়েছে। এর আগে ছেলেধরা গুজব ও পদ্মা সেতু করতে হলে সেখানে নরবলি দিতে হবে—এমন গুজব রটিয়ে দেওয়া হলো এবং সে কারণে অনেক নিরীহ মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন। এসবও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগ নেই উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, দেশের মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সে দায়িত্ব থেকেই এ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে এ আইনের যাতে অপপ্রয়োগ না হয়, কারো মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় কিংবা মুক্তমত চর্চার ক্ষেত্রে ব্যত্যয় সৃষ্টি না করে সেজন্য সরকার সচেতন আছে। সেজন্য পদক্ষেপও নেওয়া হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও তার তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের তত্ত্বাবধানে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। এই করোনার মধ্যেও পৃথিবীর মাত্র ২০টি দেশের জিডিপি বেড়েছে, এরমধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থানে। মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে। এগুলো সম্ভব হয়েছে দেশ ডিজিটাল হয়েছে বলে।
Discussion about this post