অনলাইন ডেস্ক
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ‘মুজিব ১০০ আইডিয়া প্রতিযোগিতা’র পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিযোগিতায় আইডিয়া শেয়ায় করে সেরা ১০টি দলক এক কোটি টাকা পুরস্কার পেয়েছেন। এই অর্থ তাদের আইডিয়া বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় করতে হবে।
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তজার্তিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।
পুরস্কারপ্রাপ্ত ১০ আইডিয়াসমূহ হলো:
কৃষকের অর্থায়নের সমাধান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গ্রাহক পরিসেবা, ভাল গ্রাহক সন্তুষ্টির জন্য ভবিষ্যতের স্মার্ট গ্রাহক সহায়তা, পিভিডক্টর: পারকিনসন্স ডিজিজ সনাক্তকরণ এবং পর্যবেক্ষণের জন্য স্মার্টফোন-ভিত্তিক ভার্চুয়াল টুল, ডিপ-ডিপ্রেশন: মানব মস্তিষ্কে প্রাথমিক পর্যায়ে হতাশা সনাক্তকরণের স্মার্ট ডাইগনোস্টিক যন্ত্র, রিফাইন স্টিক, আই পাওয়ার: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সিস্টেম যা বিদ্যুত চাহিদার পূর্বাভাস ও কার্যকর ব্যবহারের সমন্বিত পরিকল্পনা তাৎক্ষণিকভাবে প্রদান করতে পারে, বঙ্গবন্ধু অলিম্পিয়িাড অনলাইন শিক্ষামূলক গেম, শব্দ-কল্প-দ্রুম: বাংলা ভাষায় দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য যোগাযোগ মাধ্যম, অন্ধ ও বধিরদের জন্য সাশ্রয়ী ইন্টারনেট-অব-থিংস ভিত্তিক ব্রেইল ডিসপ্লে এবং ফ্যাক্টরি নেক্সট-আইওটি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও তথ্য -বিজ্ঞানের সাহায্যে পোশাক শিল্পের মান ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং আধুনিক শিল্পকারখানায় রূপান্তরের প্রযুক্তি।
এছাড়া, সেরা ১০ আইডিয়া বাংলাদেশ আইসিটি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ইনকিউবেশনের মাধ্যমে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করা হবে। আইডিয়া প্রতিযোগিতায় চূড়ান্তভাবে মনোনীত ১০০টি আইডিয়ার জন্য ২০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়।
ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ- এর সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোসেনসহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে মুজিব শতবর্ষ আইডিয়া প্রতিযোগিতার বিচারক, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আইসিটি মন্ত্রলায়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, ইউজিসি’র বিভাগীয় প্রধান, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজক কমিটি ও উপ-কমিটির সদস্য, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সম্মেলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে আইডিয়া প্রতিযোগিতা। ‘স্থানীয় উদ্ভাবন, বিশ্বব্যাপী পদার্পণ’ শিরোনামে শুরু হওয়া আইডিয়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, স্মার্ট শহর ও গ্রাম, কর্মসংস্থান, ই-গভর্ন্যান্স, পরিবহন ও পর্যটন, পরিবেশ, রিটেইল ও ই-কমার্স এবং ব্যাংকিং ও আর্থিকসহ ১০টি ক্ষেত্রে ১০৫১টি উদ্ভাবন ধারণা জমা দেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বর্তমান সরকার তরুণদের উদ্ভাবন সক্ষমতা বাস্তবায়নের জন্য উপর্যুক্ত পরিবেশ তৈরিতে কাজ করছে। সরকারের গৃহীত উদ্যোগের ফলে দেশে প্রায় ২ হাজার স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং এসব ক্ষেত্রে প্রায় ১৫ লক্ষ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার চায় পড়াশোনা শেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠী চাকরির পেছনে ঘুরবে না, বরং নিজেরা উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। সরকারের আইসিটি ডিভিশন শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবন সক্ষমতা বাস্তবায়নের সুযোগ তৈরির জন্য দেশের ১০০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০০ টি সেন্টার অব এক্সিলেন্স অন ফোরআইআর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির জন্য দেশের প্রতিটি জেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। এছাড়া, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত আইসিটি অবকাঠামো গড়ে তুলছে। তিনি দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এসব অবকাঠামোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তি পরিচালনা করতে পারে এমন দক্ষ জনসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি শিক্ষা ক্যারিকুলামে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার পরামর্শ দেন।
সভাপতির বক্তব্যে ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর শহীদুল্লাহ বলেন, আইডিয়া প্রতিযোগিতার মাধ্যমে স্থানীয় উদ্ভাবনগুলো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। এ প্রতিযোগিতায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গবেষক ও উদ্ভাবকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত আইডিয়াগুলোকে প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
উল্লেখ্য, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উদ্যোক্তা ও স্টার্টআপদের উন্নয়নের লক্ষ্যে ইনোভেশন হাব তৈরিতে ইউজিসি ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ (আইডিয়া) প্রকল্প সম্প্রতি একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। এছাড়া, এই সমেঝোতার ফলে মুজিব ১০০ আইডিয়া প্রতিযোগিতা থেকে প্রাপ্ত সেরা উদ্ভাবনী আইডিয়াগুলোকে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করবে।
Discussion about this post