শিক্ষার আলো ডেস্ক
ভূমিকম্প সহনশীল সড়ক বা মহাসড়ক নির্মাণে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে ওআইসির কেএএনএস সাইন্টিফিক পুরস্কার-২০২১ এর চূড়ান্ত রাউন্ডের জন্য মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশি তরুণ গবেষক ড. রিপন হোড়।
দা নলেজ অ্যাপ্লিকেশন অ্যান্ড নোসন ফর সোসাইটি (কেএএনএস) প্রতিযোগিতা মুসলিম বিশ্বের ওআইসিভুক্ত দেশের তরুণ গবেষক ও বিজ্ঞানীদের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতা। যা মর্যাদাপূর্ণ মোস্তফা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফাউন্ডেশন আয়োজন করে থাকে।
এতে ২৫টি দেশের ৬৫৮টি উদ্ভাবন জমা পড়ে। সেই উদ্ভাবনগুলো পৃথিবীর বিখ্যাত গবেষক ও বিজ্ঞানী পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করে ১৭টি উদ্ভাবনকে চূড়ান্ত পর্বের জন্য মনোনয়ন দিয়েছে। যার মধ্যে রিপন হোড়ের উদ্ভাবন অন্যতম। প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বটি আগামী ১০-১৩ মে ইরানের রাজধানী তেহরানে অনুষ্ঠিত হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী ড. রিপন হোড় গণমাধ্যমকে বলেন, মোস্তফা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফাউন্ডেশন থেকে আজ আমি কেএএনএস প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত রাউন্ডের মনোনয়নের ব্যাপারে ই-মেইল পেয়েছি। পরিবহন সেক্টরে তিন জন চূড়ান্ত পর্বের জন্য মনোনয়ন পেয়েছে। অনেক ভালো লাগছে। দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।
প্রতিযোগিতায় ১৭টি উদ্ভাবনকে চূড়ান্ত পর্বের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়। সব উদ্ভাবনকে মোট ছয়টি প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভাগ করা হয়। সেগুলো হলো- ১) অর্থনীতি ও ব্যাংকিং; ২) শক্তি, পানি ও পরিবেশ; ৩) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি; ৪) স্বাস্থ্য; ৫) পরিবহন; ৬) খনি ও খনিজ শিল্প। চূড়ান্ত পর্বে ছয়টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেওয়া হবে। পুরস্কারের মধ্যে ৩০ গ্রাম গোল্ড পদক, ২০০০ ডলার এবং নেটওয়ার্ক প্লাটফর্ম থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য বিশেষ সুবিধাগুলো। এর আগে ২০১৮ সালে কেএএনএস সাইন্টিফিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
এর আগে বাংলাদেশের নরম মাটিতে ড. রিপন হোড়ের উদ্ভাবিত ভূমিকম্প প্রতিরোধী মোড়ানো বাঁধের প্রযুক্তি ২০২১ সালের গত ২৪ জুন দেশের অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হয়।
ইতোমধ্যে ড. রিপন হোড়ের এ গবেষণার ফলাফল ছয়টি বিখ্যাত আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ড. রিপন হোড়ের এ উদ্ভাবিত বাঁধে শুধু ভূমিকম্প প্রতিরোধই হবে না, এটি বন্যা প্রতিরোধক বাঁধ হিসেবে বেশ কাজ করবে এবং এ বাঁধটি খাড়া হওয়ার কারণে সরকারের ব্যাপক ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় কমিয়ে দেবে। পাশাপাশি ব্যাপক কৃষি জমির সাশ্রয় হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারি এবং তার ছাত্র প্রকৌশলী রিপন হোড়ের সমন্বয়ে গঠিত গবেষক দল ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ছয় বছরের গবেষণায় নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন। তাদের উদ্ভাবিত ‘র্যাপ ফেস ইমব্যাংকমেন্ট’ নামের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে বাঁধ, সড়ক-মহাসড়ক কিংবা রেললাইন বড় মাত্রার ভূমিকম্পেও অক্ষত থাকবে। পাশাপাশি চলমান পদ্ধতিতে নির্মাণের তুলনায় আর্থিক ব্যয় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কমে আসবে। সবচেয়ে আশার কথা হলো, এ প্রযুক্তি অনেক কৃষিজমি বাঁচিয়ে দেবে। মূলত দেশে নতুন সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে দুই পাশের ব্যাপক কৃষিজমি নষ্ট হয়। ‘র্যাপ ফেস ইমব্যাংকমেন্ট’ প্রযুক্তি ব্যবহারে উঁচু বাঁধ বা রাস্তা নির্মাণে দুই পাশের জমির ব্যবহার অনেক কমে যাবে।
ইতোমধ্যে জাপান ও আমেরিকার শক্ত মাটিতে এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহারে সফলতা মিলেছে বলেও জানা গেছে। তবে বাংলাদেশের মতো নরম মাটির দেশে এ প্রযুক্তি কার্যকর কি না তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তবে রিপন-আনসারি উদ্ভাবিত প্রযুক্তি নরম মাটিতেও বেশ কার্যকর। ইতোমধ্যে ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় তা প্রমাণিত হয়েছে।
Discussion about this post