প্রযুক্তি ডেস্ক
সমুদ্রের তলদেশে ছড়িয়ে থাকা ইন্টারনেট ক্যাবলগুলো (সাবমেরিন ক্যাবল) ব্যবহার হবে ভূমিকম্প অথবা সুনামি নির্ণয়ে, অথবা জলবায়ুর পরিবর্তনে সমুদ্র প্রবাহের পরিবর্তন জানার জন্য। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরি এমনটাই দাবি করে বলছে, টেলিকমিউনিকেশনে ব্যবহার করা এই ক্যাবলগুলোকে গভীর সমুদ্রে সায়েন্টিফিক সেন্সর হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্য এবং কানাডার সঙ্গে সংযুক্ত এটি অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগে এর পরীক্ষা চালিয়েছেন।
বিজ্ঞানীরা জানান, সমুদ্রের তলদেশে স্থায়ীভাবে কোনও সেন্সর বসানোটা অনেক খরচসাধ্য। গোটা বিশ্বে মাত্র অল্প কয়টা বসানো আছে। ল্যাবরেটরির একজন গবেষক ড. গিউসেপ্পি মাররা বিবিসিকে বলেন, ‘পৃথিবী পৃষ্ঠের ৭০ ভাগে জল থাকলেও বেশিরভাগ সিসমিক স্টেশনগুলো রয়েছে স্থলে। কেননা, জলের ভেতরে স্থাপন করা অনেক বেশি খরচসাধ্য। অপরদিকে সমুদ্রের তলদেশে রয়েছে প্রচুর অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল। ৪৩০টি ক্যাবল মিলিয়ে মোট আট লাখ মাইল দৈর্ঘের ক্যাবল রয়েছে।’
মাররা বলেন, ‘কম্পন, চাপ এবং তাপমাত্রার পরিবর্তন— এ বিষয়গুলো ক্যাবলের ভেতরে প্রবাহিত হওয়া আলোর গতিকে খুব অল্প মাত্রায় প্রভাবিত করে। সুক্ষ্ম কোনও যন্ত্র দিয়ে একে পরিমাপ করা সম্ভব।’ তারা এমন একটি সিগন্যাল নির্ণয়ও করতে পেরেছেন। বিজ্ঞানীরা ক্যাবল এবং রিপিটার ডিভাইসের মাঝে স্প্যান বসায়, যেনো তা আলাদা একটি সেন্সরের মতো কাজ করে এবং সিগন্যালকে বুস্ট করে। গবেষকরা জানান, এই প্রযুক্তি সমুদ্রের তলদেশে ব্যাপকহারে ব্যবহার করলে তা ভূমিকম্পের ঢেউয়ের গতিপ্রকৃতিসহ আরও অনেক কিছুর ডিটেকটরের কাজ করবে।
ড. গিউসেপ্পি মাররা বলেন, ‘সমুদ্রের তলদেশের এই প্রযুক্তিকে যদি ভূপৃষ্ঠের সিসমিক সেন্সরের সঙ্গে যুক্ত করা যায়, তাহলে পুরো এই সিস্টেমটির মাধ্যমে পৃথিবীর অভ্যান্তরীণ গঠন এবং চলমান গতিপ্রকৃতিও জানা যাবে।’
এছাড়া ক্যাবলভিত্তিক এই সেন্সরের মাধ্যমে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলসহ বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে গভীর পানিতে প্রবাহের পরিবর্তনের তথ্যও পাওয়া সম্ভব বলে দাবি করেন বিজ্ঞানীরা। এই গবেষণায় যুক্ত হয়েছে গুগলসহ এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রিটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভে এবং ইটালির একটি প্রতিষ্ঠান।
Discussion about this post