অনলাইন ডেস্ক
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের আয়োজনে আজ রোববার থেকে ঢাকায় শুরু হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ কম্পিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্ট (আইসিপিসি)। গ্রামিংয়ের বিশ্বকাপ নামে পরিচিত এ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে (ওয়ার্ল্ড ফাইনালস) ৭০টির বেশি দেশ থেকে ১৩৭টি দল অংশ নেবে। বাংলাদেশ থেকে অংশ নিচ্ছে ৮টি দল।
রাজধানীর বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে ৮ নভেম্বর আইসিপিসির ৪৫তম আসরের উদ্বোধন করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। এখানেই ৪ নম্বর হলে ১০ নভেম্বর বেলা ১১টায় শুরু হবে মূল প্রতিযোগিতা। ছয় ঘণ্টাব্যাপী এ প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন প্রশ্ন বা সমস্যার সমাধান করতে হবে। পরীক্ষা পরিচালনা করবেন আইসিপিসির বিচারক পর্ষদ। পুরো প্রতিযোগিতা হবে ইন্টারনেটযুক্ত কম্পিউটারে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা সমাধান করা দলকে ওয়ার্ল্ড ফাইনাল বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। পুরস্কার হিসেবে বিজয়ী দল পাবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, সনদ এবং ১৫ হাজার ডলার। অঞ্চলভিত্তিক সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া ১২টি দলকে বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হবে। সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া চারটি দলকে স্বর্ণপদক দেওয়া হবে। পঞ্চম থেকে অষ্টম স্থানের জন্য রৌপ্য এবং নবম থেকে দ্বাদশ স্থানের জন্য আছে ব্রোঞ্জ পদক।
১১ ডিসেম্বর সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের পুরস্কার দেবেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এর আগে ৭ নভেম্বর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মহড়ার পাশাপাশি দলগুলোর নিবন্ধন সম্পন্ন করে কনসার্ট আয়োজন করা হবে। ৮ নভেম্বর হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। ৯ নভেম্বর হবে মহড়া।
রবিবার আইসিটি টাওয়ারের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার। এরপর বক্তব্য রাখেন আয়োজনের সহ-আয়োজক জেট ব্রেইন এর বিনিয়োগ বিভাগের এসভিপি এবং গবেষণা ও শিক্ষা বিষয়ক বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট অন্ড্রে ইভ্যানভ; পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে’র কর্পোরেট কমিউনিকেশন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিকি ঝ্যাং, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক ভিসি কামরুল হাসান।
বক্তব্যে পৃষ্ঠপোষক ও সহ আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আইসিপিসি ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. উইলিয়াম বি পাউচার বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশ আইসিটি খাতে ভালো করছে। এসিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হাত ধরে আইসিপিসিতেও তারা ভালো করছে। এই প্রতিযোগিতা প্রোগ্রামারদের দক্ষতাকে বাড়িয়ে দেয়। তাদেরকে সমাধান মুখী করে।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
তিনি বলেন, ২০১০ এর আগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) পড়ানো হতো না। আমরা ২০১০ এ ৬ষ্ঠ শ্রেণির থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বাধ্যতামূলকভাবে অন্তর্ভুক্ত করি। আমরা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানাতে শুরু করি, যার ফলাফল আজকের বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, আমরা মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য সারাদেশে ৩০ হাজার আইসিটি ল্যাব স্থাপন করি। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি ৩০০ টি স্কুল অব ফিউচার স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন, যার সুফল আগামী দিনে পাওয়া যাবে। যেখানে আমাদের ছেলে-মেয়েরা ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানাতে পারবে বলেও জানান তিনি।
পলক বলেন, বর্তমানে দেশে তথ্য প্রযুক্তি খাতে কাজের সুযোগ অনেক বেড়েছে। সরকার ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানাতে সব ধরনের সহায়তা করছে। তিনি বলেন, বর্তমানে যার ফলে আমাদের দুই হাজার সফটওয়্যার কোম্পানি রয়েছে। তিন শতাধিকেরও অধিক বিপিও কোম্পানি হয়েছে এবং আমাদের দেশে বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তি খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে ২ মিলিয়নেরও অধিক মানুষের। এছাড়াও, আমাদের হাজারেরও উপরে ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে তথ্য প্রযুক্তি খাতে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য তথ্য প্রযুক্তি খাত থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে তথ্য প্রযুক্তি খাতে দেশে ৩ মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। পাশাপাশি সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে আইসিটি খাত থেকে ৫ মিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য নিয়েছে। সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইনোভেটিভ আইটি ল্যাব স্থাপন করছে। তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবেলায় মেধার কোন বিকল্প নেই, মেধাকে কাজে লাগিয়ে জয় করতে হবে এ বিপ্লব। দেশের উদ্যোক্তাদের সরকার সবসময়ই সহায়তা করতে প্রস্তুত। তাদের আইডিয়াকে ব্যবসায়িক রূপ দিতে সরকার সহায়তা করছে বলেও জানান তিনি।
Discussion about this post