অনলাইন ডেস্ক
দেশে স্টার্টআপ বা নতুন উদ্ভাবনী উদ্যোগ নিয়ে বেশ জোরেশোরে কথা হচ্ছে। একটা ইকোসিস্টেম তৈরি হয়েছে। কিন্তু এটা নিয়ে কোনও নীতিমালা তৈরি হয়নি। এবার সেটাও হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ স্টার্টআপ লিমিটেড স্টার্টআপ নীতিমালা তৈরি করতে যাচ্ছে। আগামী বছরের জানুয়ারি-নাগাদ নীতিমালার খসড়া তৈরি শেষ হবে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নীতিমালায় স্টার্টআপের সংজ্ঞাও চূড়ান্ত হবে। তখন স্টার্টআপ একটি আনুষ্ঠানিকতায় রূপ পাবে। দেশীয় স্টার্টআপের একটি মেয়াদকালও ভাবা হয়েছে। স্টার্টআপের মেয়াদ হতে পারে ১০ বছর। সংশ্লিষ্ট স্টার্টআপের বয়স ১০ বছর হয়ে গেলে প্রতিষ্ঠানটি স্বাভাবিক বা অন্যান্য কোম্পানির কাতারে চলে যাবে। স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে এসব জানা গেছে। কোম্পানিটির লক্ষ্য— ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে ৫টি ইউনিকর্ন স্টার্টআপ (বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি) তৈরি করা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে দেশের স্টার্টআপ ইকো সিস্টেমে ১ হাজার ২০০টি সক্রিয় স্টার্টআপ রয়েছে। আর প্রতি বছর দুই শতাধিক স্টার্টআপ এই ইকোসিস্টেমে যুক্ত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, স্টার্টআপ হলো এমন একটি উদ্যোগ, যাকে সহজে বলা হয়— এটি এমন একটি প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্ভাবনী, যা দ্রুতগতিতে প্রসারণমান। তথা এটি হবে এমন একটি উদ্যোগ, যাতে উদ্ভাবন থাকতে হবে, যা হবে প্রযুক্তিভিত্তিক, এটিতে একটি বিজনেস মডেল থাকতে হবে এবং যার প্রবৃদ্ধি হবে দ্রুত। এই কয়েকটি বিষয় কোনও প্রতিষ্ঠানে থাকলে, তাকে স্টার্টআপ বলা যাবে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি দুই ধরনের উদ্যোগ রয়েছে— স্টার্টআপদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বেসরকারিভাবে রয়েছে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি। বিদেশি ভেঞ্চার কোম্পানিও দেশে কাজ করছে। তারা দেশের অসংখ্য স্টার্টআপে বিনিয়োগ করেছে। এদিকে সরকারিভাবেও স্টার্টআপদের দেখভালের জন্য রয়েছে সরকারি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্টার্টআপ লিমিটেড। স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড ইতোমধ্যে বিভিন্ন খাতের ১৭টি স্টার্টআপে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আইডিয়া প্রকল্পের মাধ্যমে প্রি-সিড পর্যায়ে ৩১০টিরও বেশি উদ্যোক্তাকে ১০ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়ার জন্য মনোনয়ন দিয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, বাংলাদেশ স্টার্টআপ লিমিটেড গড়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশে একটা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ইকোসিস্টেম তৈরি করতে। যাদের কাজ প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠাগুলোর একেবারে প্রথম পর্যায়ে সাপোর্ট দেওয়া, গাইডলাইন দেওয়া এবং আর্থিকভাবে সগযোগিতা করা।
বাংলাদেশ স্টার্টআপ লিমিটেড সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে ৫টি ইউনিকর্ন (বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি) স্টার্টআপ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন তারা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিনিয়োগ করা প্রায় সব স্টার্টআপই সফলভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কোনও কোনও স্টার্টআপ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত হওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছে। এই মুহূর্তে অনলাইন গ্রোসারি বিভাগে চালডাল ও শিক্ষা প্রযুক্তি বিভাগে টেন মিনিট স্কুল মার্কেট লিডার হিসেবে দীর্ঘদিন নিজেদের মজবুত অবস্থান ধরে রেখেছে।’
কী ধরনের এবং কোন পর্যায়ের স্টার্টআপে স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড বিনিয়োগ করে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘আমরা সাধারণত আগ্রহোদ্দীপক প্রতিষ্ঠানের সিড ও গ্রোথ পর্যায়ে বিনিয়োগ করে থাকি। বিনিয়োগের বেলায় আমাদের মূল ফোকাস থাকে স্টার্টআপের স্কেলেবিলিটি (বিশেষ উচ্চতায় পৌঁছানো), লেনদেন, মূল ব্যবসায়িক উপাদান (বিশেষত্ব) ও বিনিয়োগটা কারা বা কোন টিম পাচ্ছে সেই বিষয়টি।’
সামি আহমেদ বলেন, ‘কোনও স্টার্টআপে বিনিয়োগের আগে ওই প্রতিষ্ঠানের ৫টি বিশেষ উপাদানের দিকে নজর দেওয়া হয়। এরমধ্যে রয়েছে— প্রতিষ্ঠাতা, বাজার, বিজনেস মডেল, প্রভাব ও অর্থ ফেরতদানের সক্ষমতা। এগুলো ঠিক থাকলে ওই প্রতিষ্ঠানকে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করার জন্য অফারে পাঠানো হয়।’ তিনি জানান, এরই মধ্যে স্টার্টআপ বাংলাদেশ ১৭টি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। জানা গেছে, স্টার্টআপ বাংলাদেশ সোয়াপ নামের একটি স্টার্টআপে ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দেশের স্টার্টআপ সংস্কৃতি ও স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড সম্পর্কে জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত প্রথম এবং একমাত্র ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড। ৫০০ কোটি টাকার সরকারি অর্থায়নের মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা ২০২০ সালের মার্চ মাসে। বাংলাদেশে স্টার্টআপ বা উদ্যোক্তাদের কল্যাণে ও নতুন কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি ব্যবসায়িক দক্ষতার বিকাশে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন স্টার্টআপে বিনিয়োগের মাধ্যমে এবং বাংলাদেশে একটি টেকসই স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম তৈরিতে ভূমিকা রাখছে এই প্রতিষ্ঠান।’
তিনি বলেন, ‘স্টার্টআপ বাংলাদেশের প্রাথমিক লক্ষ্য— দেশের জন্য একটি উদ্যোক্তাবান্ধব ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সিস্টেম গড়ে তোলা। সরকারি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড হিসেবে প্রাথমিক পর্যায়ের প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্ভাবনী স্টার্টআপদের আর্থিক, অপারেশনাল গাইডেন্স প্রদান এবং পলিসিগত সহায়তা করাই হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য।’
পলক জানান, ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ৫টি ইউনিকর্ন স্টার্টআপ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে স্টার্টআপ বাংলাদেশ। দেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের লাইফলাইন হচ্ছে তরুণ উদ্যোক্তা। তারা সরকারের কাছ থেকে অর্থায়ন, মেন্টরশিপ, প্রশিক্ষণ এবং পলিসিবিষয়ক সহযোগিতা আশা করে থাকে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এজন্যই আমরা স্টার্টআপ বাংলাদেশের মতো প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছি, যার মাধ্যমে উদ্যোক্তারা সহজেই এই সহযোগিতা পেতে পারে। দেশে স্টার্টআপের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড ইতোমধ্যে বিভিন্ন খাত থেকে ১৭টি বিভিন্ন স্টার্টআপে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের আওতাধীন আইডিয়া প্রকল্পের মাধ্যমে প্রি-সিড পর্যায়ে ৩১০টিরও বেশি উদ্যোক্তাকে ১০ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়ার জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই অনুদানের সম্পূর্ণ অর্থ গ্রহণ করেছে এবং এর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের উদ্যোগকে একটি ভালো অবস্থানে নিতে সক্ষম হয়েছে। স্টার্টআপ বাংলাদেশ একাধিক দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে বিবিধ প্রোগ্রামের কাজ করছে, যেগুলো সামগ্রিক ইকোসিস্টেমের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির পোর্টফোলিওতে কিছু সম্ভাবনাময় স্টার্টআপকে আমরা অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— পাঠাও, টেন মিনিট স্কুল, চালডাল, সেবা, ট্রাক লাগবে, শাটল ইত্যাদি।’
সম্প্রতি একটি জরিপে উঠে এসেছে, স্টার্টআপদের মাধ্যমে বাংলাদেশে ১৫ লাখের বেশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। স্টার্টআপ মূল্যায়নের পরিপ্রেক্ষিতে সিড স্টেজে সর্বোচ্চ এক কোটি এবং গ্রোথ ও গাইডেড স্টার্টআপ স্টেজে প্রতি রাউন্ডে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে থাকে স্টার্টআপ বাংলাদেশ। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, বিনোদন, লজিস্টিকস, ই-কমার্স ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগ করছে স্টার্টআপ বাংলাদেশ। আজকের এই স্টার্টআপরাই আগামীতে ফেসবুক, অ্যামাজন কিংবা গুগলের মতো বড় প্রতিষ্ঠানে রূপ নেবে বলে প্রতিমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
Discussion about this post