অনলাইন ডেস্ক
ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী ছিলেন প্রযুক্তি শিল্পবান্ধব একজন মানুষ। দেশের এই ক্রান্তিকালে তার প্রয়াণ অপূরণীয় ক্ষতি। ডিজিটাল যাত্রায় সবচেয়ে বড় ক্ষতি। তবে এই বাতিঘরের আলোয় নিজেদেরকে উদ্ভাসিত করতে পারলে করোনায় প্রযুক্তি খাতের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব বলে মনে করছেন তার সমসাময়িক প্রযুক্তিযোদ্ধারা।
সবার প্রিয় জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর স্মরণে শুক্রবার (১ মে) রাতে অনুষ্ঠিত ডিজিটাল স্মরণ সভায় এমন মন্তব্য করেছেন বক্তারা। বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীরের সঞ্চালনায় এই নক্ষত্র পুরুষের সঙ্গে নিজেদের স্মৃতিচারণ করেন বিসিএস এর সাবেক সভাপতি ও মহাসচিবেরা।
এদের মধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য গাজীপুরে আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল করার প্রস্তাব নিয়ে আমি যাদের কাছেই গিয়েছি, উনি ছাড়া সবাই আমাকে দুইটা-তিনটা ধমক দিয়েছে এবং ইচ্ছেমতো গালিগালাজ করেছে। এরপর ১৯৮৭ সালে আমি যখন কম্পিউটারে বাংলা করি তারপর থেকেও এক ধরনের আশ্রয়ের জায়গা ছিলেন জেআরসি স্যার। তার কাছে গেলে আমি গালিগালাজ থেকে বেঁচে যেতাম। তিনিই একমাত্র সামনে যাওয়াকে উৎসাহিত করতেন।
তিনি আরো বলেন,
একসময় স্যারের বাসার দোতালাতেই আমি থকতাম। সেখানে বসেই আমরা কম্পিউটার সমিতির কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই সমিতি ৩৬ জনের কমিটিই জেআরসি রিপোর্ট প্রস্তুত করেছে। ভারতের ধনকুবের দেওয়ান মেহতাকে বাংলাদেশে এনে ৫জন মন্ত্রীকে নিয়ে সেমিনার করেছে। এটা সম্ভব হয়েছে জেআরসি স্যারের কারণেই। তাঁর সুপারিশেই কম্পিউটারের সফটওয়্যার আমদানীর ওপর থেকে সম্পূর্ণ শুল্ক ও ভ্যাট মওকুফ করা হয়। ট্যাক্স হলিডে থেকে শুরু করে প্রযুক্তিবান্ধব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়েছে। এখনো জেআরসি কমিটির রিপোর্ট সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই আমলনামাটা ২০৪০ সাল পর্যন্ত চলবে।
স্মৃতি হাতড়ে বিসিএস এর প্রাক্তন সভাপতি মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রযুক্তিখাতের ব্যবসায়ীদের জামিলুর রেজা স্যারের কাছে ঋণ রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালাসহ সব সময়ই দেখেছি। তিনি সবার আগে ইন্ডাস্ট্রিকে গুরুত্ব দিতেন। আমরা যারা ব্যবসায়ী তারা কোনো কোনো সময় কোনো শ্রেণীর কাছে অচ্ছুৎ অথবা অপাঙক্তেয় হিসেবে বিবেচিত হই। কিন্তু জামিলুর রেজা স্যার মাথার ওপর হাত দিয়ে আমাদের জন্য সার্টিফায়েড করতেন। আমাদের সঙ্গে কথা বলতেন এবং আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকতেন।
বিসিএস এর প্রাক্তন সভাপতি ও অ্যাসোসিও এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ এইচ কাফী, বিসিএস এর প্রাক্তন সভাপতি ও ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান মো. সবুর খান, লীডস কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান জনাব শেখ আব্দুল আজিজ, জালালাবাদ এসোসিয়েশন এর সভাপতি ড. এ কে আব্দুল মুবিন (অব. সচিব, সেতু বিভাগ) এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিসিএস এর প্রাক্তন মহাসচিব মুনিম হোসেন রানা এই স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
অনুষ্ঠানে ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান মো. সবুর খান বলেন, জামিলুর রেজা স্যারের অনুপ্রেরণাতেই বিসিএস থেকে আমি প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে আইসিটি মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি পাশ করাতে সক্ষম হয়েছিলাম।
সোসিও এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ এইচ কাফী বলেন, তত্ববধায়ক সরকারের শাসনের শেষ দিনেও তিনি ভি-স্যাট সেবা উন্মুক্ত করতে বিসিএস এর আবেদন সই করে দেন। এটি উন্মুক্ত করার পরও একটা অপারেটরের মাধ্যমে ৬৪ কেবিপিএস ব্যান্ডউইথ সংযোগ নিতে গিয়েও বছরে যখন ৯৬ হাজার ইউএস ডলার দিতে হতো। এই বিল কমানোর পেছনেও তাঁর অবদান রয়েছে। তিনিই তৎকালীন অর্থমন্ত্রী শাহ এম এস কিবরিয়া সাহেব,বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, টেলিকম মন্ত্রী নাসিম সাহেব-কে এই ইন্টারনেটের ফলে লেখা-পড়ার কাজে আসবে এবং দেশের উপকার হবে যুক্তি দিয়ে তাদেরকে দিয়ে ৯৬ হাজার ইউএস ডলার থেকে ২৫ হাজার ডলারে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন।
Discussion about this post