বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
সময়ের সাথে সাথে ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে উঠছে চাঁদে অবতরণ করা ভারতীয় চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ ও রোভার ‘প্রজ্ঞান’ থেকে সাড়া পাবার সম্ভাবনা। দেশটির মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বিবিসিকে জানান, চাঁদের হিমশীতল পরিবেশে বিক্রম ও প্রজ্ঞানের জেগে উঠার সম্ভাবনা ফুরিয়ে যাচ্ছে।
গত ২৩ আগস্ট রোভার প্রজ্ঞানকে নিয়ে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করেছিল চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম। এরপর প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে অসংখ্য ছবি ও বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের পর, চন্দ্রপৃষ্ঠে রাত নেমে এলে বিক্রম ও প্রজ্ঞানকে ঘুম পাড়িয়ে রাখে ভারতের মহাকাশ সংস্থা- ইসরো।
তখন সংস্থাটির বিজ্ঞানীরা জানান, চাঁদে যতক্ষণ সূর্যের আলো থাকবে, ততক্ষণ বিক্রম এবং প্রজ্ঞানের জেগে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ইসরো এক চন্দ্রদিবস, অর্থাৎ পৃথিবীর হিসেবে আগামী ১৪ দিন অপেক্ষা করবে। এই সময়ের মধ্যে অনবরত সূর্যের আলো পড়বে চাঁদের মাটিতে। ফলে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে।
এই এক চন্দ্রদিবস পরও বিক্রম ও প্রজ্ঞান ঘুম থেকে জেগে ওঠেনি। তবে ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বলেছেন, তারা আরও একটি চন্দ্রদিবস শেষ না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাবে। গত শুক্রবার (২৫ আগষ্ট) মহাকাশ সংস্থা ইসরো জানায়, একটি নতুন চন্দ্র দিবস শুরু হওয়ার পরে তারা ল্যান্ডার এবং রোভারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে, কিন্তু কোনও সংকেত পায়নি।
ইসরো আশা করেছিল, সূর্যের আলোতে যান দুটোর ব্যাটারিগুলো রিচার্জ হয়ে যাবে এবং ২২ সেপ্টেম্বরের কাছাকাছি চাঁদে সূর্য উঠলে মডিউলগুলো পুনরায় জাগ্রত হবে। সেদিন বিক্রম ও প্রজ্ঞান জেগে না ওঠায় ইসরো এক বার্তায় জানায়, তারা তাদের শেষ চেষ্টা করে যাবেন। তবে সম্ভাবনা কমে আসছে দ্রুত।
কিন্তু সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে ইসরোর সাবেক প্রধান এএস কিরণ কুমার বিবিসিকে বলেন, প্রতিটি ঘণ্টার সাথে সাথে বিক্রম ও প্রজ্ঞানের পুনরায় জেগে ওঠার সম্ভাবনা কমছে। ল্যান্ডার এবং রোভারে এমন অনেক সব যন্ত্রাংশ রয়েছে যা চাঁদের শীতল তাপমাত্রায় টিকে থাকতে পারে না।
তিনি জানান, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি তাপমাত্রা রাতে মাইনাম ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে মাইনাস ২৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যায় বলে জানা যায়। যতক্ষণ না পর্যন্ত ল্যান্ডারের ট্রান্সমিটারটি সজাগ হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত সেটির সঙ্গে যোগাযোগ করার কোন সুযোগ নেই।
ভারত চন্দ্রযান-৩ মিশনের মাধ্যমে ইতিহাস তৈরি করে যখন সেটি চন্দ্র দক্ষিণ মেরুর কাছে সফলভাবে একটি মহাকাশযান অবতরণ করার প্রথম দেশ হয়ে ওঠে। এতে করে যুক্তরাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীনের পরে চাঁদে অবতরণের অভিজাত দেশের ক্লাবে যোগ দিলো ভারত।
Discussion about this post