ক্যারিয়ার ডেস্ক
ডেনমার্ক উত্তর ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। এটি জুটলান্ড উপদ্বীপের উত্তরে এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়ান উপদ্বীপের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। ডেনমার্কের সাথে সুইডেন ও নরওয়ে’র সীমানা রয়েছে। ডেনমার্কের সাথে যুক্ত আরও ৪৪৪টি দ্বীপ রয়েছে, যার মধ্যে বৃহত্তমগুলো হল ফুনেন, সেল্যান্ড, লোলান এবং বোর্নহোলম। ডেনমার্কের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর হল কোপেনহেগেন। এখানে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং অন্যান্য সামাজিক সেবাগুলো বিনামূল্যে বা খুব কম খরচে পাওয়া যায়। ডেনমার্কের অর্থনীতি খুবই উন্নত। এখানে বেকারত্বের হার কম এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উচ্চ।
আবেদনের যোগ্যতা
মাস্টার্স, পিএইচডিসহ যেকোনো স্নাতকোত্তর অধ্যয়নের জন্য যোগ্যতা ন্যূনতম চার বছরের স্নাতক ডিগ্রি। তবে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।
ডেনমার্কে স্নাতক উচ্চশিক্ষার আবেদনগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত হয়। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের সরাসরি একক কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন না করে জাতীয় ভর্তির ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।
ভাষাগত যোগ্যতা
ইংরেজি ভাষার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের আবেদনকারীদের ইংরেজি ভাষা দক্ষতা ন্যূনতম ইংরেজি ‘বি’ ক্যাটাগরির হতে হবে। এটি মূলত ডেনিশ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রণীত ইংরেজি ভাষা দক্ষতা যাচাইয়ের ব্যবস্থা। কোনো কোনো প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে ইংরেজি ‘এ’ প্রয়োজন হয়। ইংরেজি ‘বি’র সমতুল্য আইইএলটিএস স্কোর ৬ দশমিক ৫ পয়েন্ট, যেটা ইংরেজি ‘এ’-এর ক্ষেত্রে ৭ পয়েন্ট।
সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
ডেনমার্ক বোলোগনা প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। তাই শিক্ষার্থীরা ডেনিশ প্রতিষ্ঠানে যে ডিগ্রি অর্জন করেন, তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ২০২৩ সালের কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিংয়ের ৮২তম অবস্থানে আছে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ডেনমার্কের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো—
কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন?
ডেনমার্কে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
ইউনিভার্সিটি অফ কোপেনহেগেন: ডেনমার্কের সবচেয়ে পুরনো ও বড় বিশ্ববিদ্যালয়। এটি ইউরোপের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। ইউনিভার্সিটি অফ কোপেনহেগেনে বিজ্ঞান, প্রকৌশল, ব্যবসা, অর্থনীতি, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।
আরহুস ইউনিভার্সিটি: ডেনমার্কের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। এটিও ইউরোপের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। আরহুস ইউনিভার্সিটিতে বিজ্ঞান, প্রকৌশল, ব্যবসা, অর্থনীতি, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।
টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অফ ডেনমার্ক: ডেনমার্কের সবচেয়ে বড় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। এটি বিশ্বের অন্যতম সেরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অফ ডেনমার্কে প্রকৌশল, বিজ্ঞান, ব্যবসা, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।
আলবর্গ ইউনিভার্সিটি: ডেনমার্কের তৃতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। এটিতে বিজ্ঞান, প্রকৌশল, ব্যবসা, অর্থনীতি, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ডেনমার্ক: ডেনমার্কের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়। এটিতে বিজ্ঞান, প্রকৌশল, ব্যবসা, অর্থনীতি, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
স্নাতকের জন্য শুধু এইচএসসি/ডিপ্লোমার মূল প্রশংসাপত্র।
আইইএলটিএস/টোয়েফল স্কোরের সনদ।
যদি কোনো নথিতে নামের পরিবর্তন থাকে, তাহলে নাম পরিবর্তনের নথি প্রয়োজন হবে, যেমন বিবাহের সনদপত্র।
যোগ্যতা মূল্যায়নের জন্য দ্বিতীয়বার আবেদন করা হয়ে থাকলে পূর্বের মূল্যায়ন ও স্বীকৃতির সিদ্ধান্তের নথি সংযুক্ত করতে হবে।
স্নাতকোত্তরের জন্য উপরোক্ত নথিপত্রের সঙ্গে স্নাতক ডিগ্রি এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সংযুক্ত করতে হবে।
এ ছাড়া বিষয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে ডেনিশ এজেন্সি ফর হায়ার এডুকেশন অ্যান্ড সায়েন্স শিক্ষার্থীর যোগ্যতা যাচাইয়ের নিমিত্তে আরও কাগজপত্র চাইতে পারে।
আবেদনের পর কাগজপত্র পাঠানোর উপায়
স্নাতকের ক্ষেত্রে সব নথি পাঠানোর ঠিকানা হলো—
Danish Agency for Higher Education and Science, Haraldsgade 53, 2100 Copenhagen
কুরিয়ারে পাঠানোর সময় খামের ওপর শিক্ষার্থীর পুরো নাম ও জন্মতারিখ উল্লেখ করতে হবে। স্নাতকোত্তরের ক্ষেত্রে সব একই, শুধু ঠিকানার জায়গায় থাকবে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানা। শিক্ষার্থীর যোগ্যতা যাচাই সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মূল নথিগুলো ডাকযোগে আবেদনে উল্লেখিত শিক্ষার্থীর ঠিকানায় ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ভিসা আবেদনের জন্য কী কী ডকুমেন্টস লাগবে?
ভিসার জন্য আবেদনের সময় সাধারণত নিম্নলিখিত ডকুমেন্টস লাগে:
পাসপোর্ট
উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট
গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ (জিপিএ) ট্রান্সক্রিপ্ট
আইইএলটিএস বা টোয়েফল স্কোর কার্ড
রেফারেন্স লেটার (যদি প্রয়োজন হয়)
অফার লেটার
টিউশন ফি পরিশোধের রশিদ
স্টাডি পার্মিটের পূরণকৃত এপ্লিকেশন ফর্ম (ফ্যামিলি ডিটেলস সহ)
ব্যাংক স্টেটমেন্ট
স্বাস্থ্য বীমা সনদপত্র
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদপত্র
খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ
বিদেশি শিক্ষার্থীদের ডেনমার্কে পড়াশোনার পাশাপাশি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ করার সুযোগ আছে। তবে জুন, জুলাই ও আগস্টে এ রকম কোনো বিধিনিষেধ নেই, পুরোটা সময়ই কাজ করা যায়।
স্কলারশিপের সুবিধা
ডেনমার্কের ব্যয়বহুল উচ্চশিক্ষার খরচ চালানোর জন্য সেরা উপায় হচ্ছে স্কলারশিপ। ডেনমার্ক তার বিদেশি মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ ভালো স্কলারশিপের ব্যবস্থা রেখেছে। স্থানীয় শিক্ষার্থী ও স্কলারদের নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার মাধ্যমে এই স্কলারশিপগুলোতে সহজেই আবেদন করা যেতে পারে। সবচেয়ে জনপ্রিয় স্কলারশিপ প্রকল্পগুলোর মধ্যে ইরাসমাস মুন্ডাস/জয়েন্ট মাস্টার ডিগ্রি এবং ডেনিশ সরকারি বৃত্তি অন্যতম। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার খরচ পুষিয়ে নেওয়ার জন্য ডেনমার্কের বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপের জন্য এখানে খোঁজ নিতে পারেন।
ডেনমার্কে স্থায়ী ভাবে বসবাসের সুযোগ
ডেনমার্কে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য বেশ কয়েকটি উপায় রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ উপায় হল:
উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে: ডেনমার্কে উচ্চশিক্ষা শেষে, শিক্ষার্থীরা 6 মাসের জন্য ডেনমার্কে কাজ করার অনুমতি পান। এই সময়ের মধ্যে তারা যদি একটি চাকরি খুঁজে পান এবং সেই চাকরিতে কমপক্ষে 1 বছর কাজ করেন, তাহলে তারা স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করতে পারেন।
চাকরির মাধ্যমে: ডেনমার্কে একটি চাকরি পাওয়ার পর, চাকরিদাতা নিয়োগকর্তা সেই কর্মচারীর জন্য স্থায়ী বসবাসের অনুমতির জন্য আবেদন করতে পারেন।
পরিবারের মাধ্যমে: ডেনমার্কের নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দার সাথে বিবাহিত বা সংসার করা ব্যক্তিরা স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করতে পারেন।
এছাড়াও, ডেনমার্ক সরকার নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমতি প্রদান করে। এর মধ্যে রয়েছে:
বিনিয়োগ: ডেনমার্কে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করলে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাওয়া যেতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা: ডেনমার্কে এমন দক্ষতা রয়েছে যা ডেনমার্কের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। এই দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা স্থায়ী বসবাসের অনুমতির জন্য আবেদন করতে পারেন।
Discussion about this post