আবেদন এবং ভর্তি প্রসেসিং:
নির্দিষ্ট দেশের বাছাইকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য প্রথমে ভর্তি তথ্য, প্রসপেকটাস ও ভর্তি ফরম চেয়ে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্র কুরিয়ার যোগে, ফ্যাক্স বা ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠানো যায়। তবে ই-মেইলে পাঠানো ভাল। আবেদন পত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌছলে তারা আপনার ঠিকানায় ভর্তির আবেদন ফরম ও প্রসপেকটাস পাঠিয়ে দিবে। এতে সাধারনত দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগে। তবে অনেক ক্ষেত্রে আপনার ই-মেইল আড্রেস দিলে সেখানেও আবেদন ফরম দিতে পারে। আবার কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েব সাইটে আবেদন ফরম দিয়ে থেকে। এক্ষেত্রে ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে হবে। এরপর আবেদন ফরমটি প্রয়োজনীয় সকল তথ্য দিয়ে নির্ভুলভাবে পূরন করে প্রসপেকটাসের নির্দেশনা অনুসারে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র ও আবেদন ফি/ব্যাংক ড্রাফট কোন আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস বা রাষ্ট্রীয় ডাকের মাধ্যমে নির্দেশিত ঠিকানায় পাঠাতে হবে। উল্লেখ্য যে, আবেদন ফি অফেরত যোগ্য। আর হ্যাঁ, মনে রাখা প্রয়োজন যে, কোন প্রকার অসত্য তথ্য দিলে ভর্তি অনিশ্চিত বা পরবির্তিতে বাতিলের সম্ভাবনা থেকে এবং ভিসা পেতে সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া ফরম পূরনের সময় কাটাকাটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে ফরমটি ফটোকপি করে আগে ফটোকপি পূরন করুন এবং পরবর্তীতে সেটা দেখে মূল ফরমটি পূরন করুন।
আবেদনপত্রের সাথে সাধারনত যেসব কাগজপত্র পাঠাতে হয়
১. সকল একাডেমিক কাগজপত্রঃ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বা তদুর্ধব সকল সনদপত্র ও নম্বরপত্রের সত্যায়িত ফটকপি এবং সাবেক বা বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের সুপারিশপত্র।
২. ভাষাগত দক্ষতার প্রমানপত্রঃ নির্বাচিত দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শর্তানুযায়ী যে ভাষার দক্ষতা থাকতে হবে সে ভাষায় দক্ষতার প্রমান স্বরূপ ভাষা শিক্ষা কোর্সের সনদপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
৩. উলেখ্য যে, ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষার ক্ষেত্রে যদি সে দেশে গিয়ে চান তবে তার প‚র্বতন ভাষা হিসেবে ইংরেজিতে দক্ষতার প্রমান স্বরূপ IELTS/TOFEL এর সনদপত্রের সত্যায়িত কপি পাঠাতে হবে। তবে কোন কোন দেশের ক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতার সনদ পত্র লাগে না।
৪. আর্থিক সামর্থের প্রমানপত্রঃ যিনি আপনার বিদেশে পড়াশোনাকালীন যাবতীয় খরচ বহন করবেন তার অঙ্গীকারপত্র, আর্থিক সামর্থের প্রমানস্বরূপ ব্যাংক গ্যারান্টিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি। উল্লেখ যে, নিজ খরচে পড়ার ক্ষেত্রে আর্থিক সামর্থের প্রমানস্বরূপ স্পন্সরের নামে দেশভেদে বিভিন্ন অংকের অর্থের ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট এবং অনেক ক্ষেত্রে এ সলভেন্সি সার্টিফিকেট এর বৈধতার পক্ষে বিগত ৬ মাসের ব্যাংক লেনদেন রিপোর্টের সত্যায়িত কপি পাঠাতে হয়।
৫. আবেদন ফি-এর ব্যাংক ড্রাফটঃ দেশ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভেদে আবেদন ফি বাবদ ৭০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকার ব্যাংক ড্রাফট পাঠাতে হয়।
বিশেষ তথ্য:
সার্টিফিকেটের ক্ষেত্রে আপনাকে যে বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয় সার্টিফিকেট বা মার্কসিট প্রদান করেছে ঐ বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট বিভাগ রয়েছে, সেখান থেকে মার্কসিট ও সার্টিফিকেট ইংরেজি মাধ্যমে করে দিবে।
ইংরেজিতে দক্ষতার প্রমাণপত্রের ক্ষেত্রে, ব্রিটিশ কাউন্সিল নিয়ন্ত্রিত ওঊখঞঝ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এবং স্কোর পয়েন্ট উল্লেখ করে একটি সার্টিফিকেট দিতে হবে।
আর্থিক অবস্থার ক্ষেত্রে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এমন তথ্য ও প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে যে, পড়ালেখায় যাবতীয় ব্যয় বহন করতে আপনি বা আপনার স্পন্সর সক্ষম আছেন। উল্লেখ্য, যদি আপনার আর্থিক অবস্থা সচ্ছল না হয় এবং আপনি উপরিউক্ত দুটি শর্ত (ইংরেজিতে দক্ষতা এবং ভালো রেজাল্ট) পূরণ করতে সক্ষম হন তাহলে যেসব কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তিমূলক পড়াশুনার সুযোগ দেয় আপনাকে সেসব প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করতে হবে।
সুপারিশপত্রের ক্ষেত্রে আপনি যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে সার্টিফিকেট অর্জন করেছেন সেসব প্রতিষ্ঠানের প্রধানের একটি ইংরেজি মাধ্যমের সুপারিশপত্র সংগ্রহ করুন।আবেদনের সাথে আপনার অতিরিক্ত যোগ্যতাগুলোও উল্লেখ করুন। যেমন- কম্পিউটার দক্ষতা, বাংলা ব্যতীত অন্য কোনো ভাষাজ্ঞান, খেলাধুলার কৃতিত্ব, সাংস্কৃতিক কৃতিত্ব ইত্যাদি বিষয়ের প্রমাণপত্রও সংযুক্ত করুন।
ফান্ড ও স্পন্সর
কাঙ্খিত দেশে থাকা-খাওয়া ও টিউশন ফির জন্য শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা থাকতে হবে। প্রমাণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টের শেষ এক বছরের লেনদেনের কাগজপত্র অর্থাৎ ব্যাংক স্টেটমেন্ট যুক্ত করতে হবে ভিসা আবেদনপত্রের সঙ্গে। স্পন্সরের ক্ষেত্রে মা-বাবা ছাড়াও বৈধ অভিভাবকদের সহযোগিতা নিতে পারেন। তবে অন্য কোনো ব্যক্তিকে অভিভাবক বানিয়ে ভুয়া স্পন্সর সংগ্রহ করে ভিসা আবেদন করতে নিষেধ করে ভিসা সেন্টার কর্তৃপক্ষ। ভুয়া কাগজপত্র প্রমাণিত হলে ভিসা প্রত্যাখ্যান ছাড়াও আইনি ঝামেলার আশঙ্কা আছে। এ জন্য কোনো মিথ্যার আশ্রয় না নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
ভিসা পাওয়ার পর করণীয়
ভিসা পাওয়ার পর আপনাকে প্রস্তুতি নিতে হবে বিদেশগমনের জন্য। দেশ ত্যাগ করার সময় আপনার সকল কাগজপত্রের যত বেশি সম্ভব ফটোকপি সত্যায়িত করে সাথে রাখুন। কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আদান-প্রদানকৃত কাগজপত্র, বৈদেশিক মুদ্রা ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্র সাথে রাখুন। কারণ আপনি যখন কোনো দেশের বিমান বন্দর অতিক্রম করবেন তখন ঐ দেশের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আপনার কাগজপত্র দেখতে চাইবের মূলত ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষই তাদের দেশে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করে এবং তারা ইচ্ছা করলে আপনার বৈধ কাগজপত্র ও ভিসা থাকা সত্তেও আপনাকে দেশে ফেরত পাঠাতে পারেন। শুধু আচরণের উপর সন্দেহ হলেই কাগজপত্র বৈধ থাকলেও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ভিসা বাতিল করার ক্ষমতা রাখেন। সুতরাং এ বিষয়েও সতর্কতা জরুরি।
ভর্তির অনুমতিপত্র পাওয়ার পর করনীয়:
ভর্তির অনুমতিপত্র বা অফার লেটার পাওয়ার পর সাধারনত অফার লেটারে বা প্রসপেক্টাসে উল্লেখিত টিউশন ফি’র সমপরিমান অর্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক ড্রাফট করতে হবে যা ভিসা ইন্টারভিউয়ের সময় দূতাবাসে দেখাতে হয় এবং ভিসা পেলে পরবর্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জমা দিয়ে দিতে হবে। কিন্তু টিউশন ফি বা এরকম বেশি পরিমান অর্থ ব্যাংক ড্রাফট করতে হলে ব্যাংকে নিজের নামে একটি স্টুডেন্ট ফাইল চালু করতে হবে এবং সেখান থেকেই বিদেশে পড়াশোনাকালীন সকল আর্থিক লেনদেন পরিচালনা করা যাবে। ব্যাংকে স্টুডেন্ট ফাইল খোলার জন্য যে সমস্ত কাগজপত্র লাগে সেগুলো হল-
(১) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রসপেক্টাস বা ভর্তির প্রমানপত্র বা ভর্তি ফরম, (২) পাসপোর্ট, (৩) শিক্ষাগত সনদপত্র, (৪) পুলিশ ছাডপত্র এবং (৫) ছবি।
উল্লে্খ্য যে, বিভিন্ন ব্যাংকের বৈদেশিক বিনিময় শাখাগুলোতে স্টুডেন্ট ফাইল খোলার জন্য আলাদা কেন্দ্র রয়েছে।
ভিসা প্রসেসিং:
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার পর তাদের পাঠানো অফার লেটার বা ভর্তির অনুমতিপত্রে উল্লেখিত ডেডলাইনের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানে পৌছাতে হবে। অন্যথায় ভর্তি বাতিল হবে। তাই নির্দিষ্ট তারিখের পূর্বে আপনাকে সেদেশের ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও প্রায় সব নিয়মই এক রকম। কোন দেশে ভিসা পেতে হলে প্রথমে সে দেশের ভিসার আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ভিসার আবেদনপত্র সরবরাহ করে থাকে। তা না হলে নির্দিষ্ট দূতাবাস থেকে ভিসার আবেদনপত্র সংগ্রহ করে সঠিক তথ্য দিয়ে নির্ভুল ভাবে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্রসহ দূতাবাসে জমা দিতে হবে এবং নির্দিষ্ট দিনে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। ভিসার জন্য সাধারনত যে সব কাগজপত্র লাগে-
১. শিক্ষাগত কাগজপত্রঃ সনদপত্র, নম্বরপত্র, প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রশংসাপত্রের সত্যায়িত ফটোকপিসহ মূলকপি।
২. পাসপোর্টঃ পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ১ বছর থাকতে হবে এবং পেশা, জন্ম তারিখ ও অন্যান্য সকল তথ্যের সাথে শিক্ষাগত কাগজ পত্রের মিল থাকতে হবে। আপনার পাসপোর্ট করা না থাকলে পাসপোর্ট করে নিন।
৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রমানপত্র বা অফার লেটার।
৪. আর্থিক সামর্থ্যের প্রমানপত্রঃ আবেদন ও ভর্তি প্রসেসিং অংশে এ সম্পর্কে বিস্তারিত দেখে নিন।
৫. ছবিঃ সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে, পরিস্কার ভদ্র পোশাকে তোলা স্মার্ট ও স্পষ্ট ছবি হলে ভাল হয় এবং রঙ্গিন হওয়াই উত্তম।
৬. টিউশন ফি’র ব্যাংক ড্রাফটঃ প্রতিষ্ঠান ভেদে টিউশন ফি ভিন্ন হয়ে থাকে।
৭. ভাষাগত দক্ষতার প্রমানপত্রঃ আবেদন ও ভর্তি প্রসেসিং অংশে দেখুন।
৮. পুলিশ ছাড়পত্রঃ পুলিশ ছাড়পত্রের জন্য নিজ নিজ থানায় যোগাযোগ করে একটি নির্দিষ্ট ফি প্রদানের মাধ্যমে এটি সংগ্রহ করা যায়। তবে আপনার বিরুদ্ধে দেশ ও আইনবিরোধী কন কাজে জরিত থাকের অভিযোগ থাকলে আপনি পুলিশ ছাড়পত্র পাবেন না।
ভিসা অফিসারের সাথে সাক্ষাৎকার পর্ব :
ভিসার জন্য আবেদনপত্র জমা নেয়ার পর দ‚তাবাস থেকে আপনাকে সাক্ষাতের সময় ও তারিখ জানিয়ে দিবে। ভিসা ফরম জমা দেয়ার সময় এবং ভিসা অফিসারের সাথে সাক্ষাতের সময় আপনার সকল কাগজপত্র সাথে রাখবেন।
বিশেষ তথ্য:
ভিসা অফিসারের সাথে সাক্ষাতের সময় কোনো অসত্য বা ভুল তথ্য উপস্থাপন করবেন না।
ভিসা অফিসারের সাথে সাক্ষাৎকারের আগেই ইংরেজিতে কথা বলার চর্চা করুন। ইংরেজিতে সহজভাবে ভিসা অফিসারের সাথে কথা বলতে হবে, যাতে তিনি বুঝতে পারেন যে, আপনার ইংরেজি দক্ষতা ভালো।
ভিসা অফিসার আপনাকে বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করবেন। যেমন-
১. কেন আপনি তাদের দেশে যেতে চান?
২. কোন বিশ্ববিদ্যালয়/কলেজে ভর্তি হচ্ছেন, কেন হচ্ছেন?
৩. নিজ দেশে শিক্ষার সুযোগ থাকতে বিদেশ যেতে চান কেন?
৪. উচ্চশিক্ষা শেষে আপনি দেশে ফিরবেন কিনা?
৫. আপনার পড়ালেখার খরচ কে বহন করবেন? তিনি যথেষ্ট সচ্ছল কিনা?
দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি:
ভর্তি ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর প্রস্তুতি নিতে হবে বিদেশ যাত্রার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা ভিসার ডেডলাইন যাই হোক না কেন তার বেশ কয়েকদিন আগেই দেশ ত্যাগ করা ভাল। কারন অনেক সময় আবহওয়াজনিত ও অন্যান্য কছু কারনে যাত্রাপথে বিলম্ব হতে পারে। সেক্ষেত্রে হাতে সময় না থাকলে বিপদ হতে পারে।
দেশ ছাড়ার পূর্বে আপনার পাসপোর্ট, ভিসা ইত্যাদি যথাযথ অবস্থায় আছে কি না দেখে নেবেন। বেদেশে অবস্থানের সময় এই সব দলিল আপনাকে অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে। আপনি কোন পথে বিদেশে যেতে চান তা নির্ধারন করার সময়ও অনেকগুলো বিকল্প পথ ভাবার অবকাশ আছে। বিমানযোগে ভ্রমন করতে চাইলে মনে রাখবেন অনেক এয়ারলাইন্সে ছাত্রদের জন্য কিছু বাড়তি সুবিধা রয়েছে। অনেক ক্কেত্রে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স ছাত্রদের জন্য ডিসকাউন্ট রেটে টিকিট দিয়ে থাকে। আপনি নির্ধারিত দিনের টিকিট যদি বেশ ক’মাস আগে করেন তবে এক্ষেত্রে অনেক এয়ারলাইন্সে আপনি ছাড় পাবেন। বিদেশে গিয়ে কোথায় থাকবেন এবং আপনার আবাসনের বিষয়টি কেমন হবে তা সম্পর্কেও খোঁজখবর নিন। স্বাস্থ ও নিরাপত্তা বিষয়ক ইস্যুগুলো সম্পর্কে জানুন। সে দেশের আইন অনুযায়ী কি করা যাবে আর কি করা যাবে না তার সম্পর্কে ধারনা থাকাটা জরুরি। আর্থিক দিকগুলো সম্পর্কেও আপনার সচেতন থাকাটা জরুরি। পেমেন্ট করারা সঠিক সময়টা কবে হবে, আর্থিক অনুদান পেয়ে থাকলে সেই টাকা হাতে পাবার ব্যাপারে কী কী করনীয় ইত্যাদি বিষয়গুলো জেনে নিন। বিদেশে থাকার সময় কিভাবে আপনার পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখবেন-টেলিফোন, ডাক, ই-মেইল ইত্যাদি সুযোগ সুবিধা পর্যাপ্ত কিনা বা তার জন্য আপনার কত খরচ হবে এ সংক্রান্ত তথ্যগুলো সংগ্রহ করুন। সর্বোপরি আপনি যে দেশে যাচ্ছেন তার ইতিহাস, রাজনীতি, আইনকানুন, রীতিনীতি প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে যতটুকু সম্ভব জেনে নিন।
সংশ্লিষ্ট দেশের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসঃ
যখন আপনি সংশ্লিষ্ট দেশের বিমানবন্দরে অবতরন করবেন তখন আপনার সেদেশে আসার উদ্দেশ্য এবং সম্ভাব্য অবস্থানের সময় কাল সম্পর্কে ইমিগ্রেশন অফিসার জিজ্ঞাসা করবেন। ইমিগ্রেশন অফিসার আপনার পাসপোর্ট, ভিসা, স্বাস্থ ও প্রতিষেধক সনদ ইত্যাদি পরীক্ষা করবেন। তারপর তারা ঐ দেশে ঢোকার জন্য আপনাকে অনুমতি দেবেন। ঐ দেশের নিয়ম অনুসারে বা বিভিন্ন সময়ের বা ঋতুর চাপ অনুসারে ইমিগ্রেশনের আইনকানুন ও পদ্ধতি দ্রুত অথবা সময়সাপেক্ষ অথবা ক্লান্তিকর হতে পারে। দীর্ঘ সময়ের বিমান ভ্রমনের পরে ইমিগ্রেশনের দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর পদ্ধতি আপনার কাছে বিরক্তিকর হয়ে উঠতে পারে। কিন্ত ধৈর্য ধরে এবং নম্র ভাবে ইমিগ্রেশন অফিসারের সকল প্রশ্নের জবাব দিন। ইমিগ্রেশনের পর আসবে কাস্টমস। কি কি জিনিস আপনি বহন করছেন তার একটি তালিকা আপনাকে কাগজে লিখতে হতে পারে। এখানেও সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর ভদ্রভাবে দিন। কাস্টমস অফিসার প্রয়োজনে আপনার ব্যাগ চেক করতে পারেন। সতরাং তার প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিয়ে তাকে সন্তুষ্ট করুন।
বিমান ভ্রমন জনিত ক্লান্তিঃ
দীর্ঘ বিমান ভ্রমনের ফলে এবং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অঞ্চলের ভিতর দিয়ে যাওয়ার ফলে আপনি শারীরিক কিছু পরিবর্তন অনুভব করতে পারেন। হয়ত আপনি ভুল সময়ে ঘুমাবেন এবং জেগে উঠবেন, শারীরিক ভাবে দুর্বল ও ক্লান্তি অনুভব করবেন এবং কিছুটা অস্থিরতায় ভুগবেন। যখনই আপনার শরীরের অন্তরস্থিত ঘড়িটা নুতন সময়ের সাথে নিজেকে মিলিয়ে নিবে তখন অর্থাৎ কয়েকদিন কেটে গেলে এই অবস্থাটা ঠিক হয়ে যাবে। এ সম্পরর্কে আরেকটি টিপস হল নতুন দেশে পৌচ্ছানোর কিছুক্ষন পর হালকা ব্যায়াম করুন এবং ঐ দেশের সময় অনুযায়ী ঘুমাতে যান। এর ফলে নতুন পরিবেশে শরীরের অভিযোজন ত্বরান্বিত হবে।উল্লেখ্য যে, বিদেশে উচ্চশিক্ষার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশ আগত ছাত্রদের জন্য অভ্যররথনার ব্যাবস্থা রাখে। বিমানবন্দরে পৌচ্ছেই সে ক্ষেত্রে আপনি একজন গাইড পাবেন, যে আপনাকে নতুন ঐ পরিবেশ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জ্ঞাপন করবেন।
বিদেশে পার্ট টাইম কাজের সুযোগ :
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে শিক্ষার্থীদের জন্য পার্টটাইম কাজের সুবিধা আছে। এ সুবিধাটি আমাদের মতো গরিব দেশের জন্য খুবই প্রয়োজন। সেসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা (ঘণ্টাভিত্তিক পারিশ্রমিক সুবিধায়) কাজ করার সুবিধা আছে। এ সুবিধা শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার খরচের একটা বড় অংশের যোগান দেয়। সে দেশে যাওয়ার পরই এসব সুবিধা গ্রহণের পথ খুঁজে পাবেন।
বিদেশে পৌঁছার পর
ভিসাপ্রাপ্তির পর ভিসার মেয়াদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। শিক্ষা সমাপ্তের আগমুহুর্ত পর্যন্ত ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করে থাকে।কোনো শিক্ষার্থী যদি নিয়মিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেন কিংবা পড়াশোনা ছেড়ে দেন, সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভিসার মেয়াদ বাড়াবে না। তা ছাড়া বিদেশে আবাসন কিংবা পার্টটাইম চাকরি পেতে কারো সহযোগিতার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান আবাসন সুবিধা কিংবা চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণা করে। আর প্রতিটি দেশেরই নিজস্ব কিছু নিয়ম-কানুন থাকে। এসব মেনে চলতে হবে।
অভিবাসনের সুযোগ
অনেক শিক্ষার্থী বিদেশে পাড়ি জমান শুধু উচ্চশিক্ষার জন্যই নয়, ভবিষ্যতে সেখানে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্যও। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ডসহ উন্নত দেশগুলো চাহিদাসম্পন্ন বিষয়ে বিদেশি ডিগ্রিধারীদের অভিবাসনের সুযোগ দিয়ে থাকে। দেশে বসেই আপনি অভিবাসনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এসব দেশের ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের অফিশিয়িাল ওয়েববসাইটে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া থাকে। যেসব বিষয়ের ডিগ্রিধারী কিংবা পেশাজীবীরা অভিবাসনের সুযোগ পায়, তা ওয়েবসাইট থেকে জেনে নিতে পারেন। তবে বিভিন্ন বিষয়ের যোগ্যতার ওপর পয়েন্ট নির্ধারণ করে অভিবাসন ভিসা দিয়ে থাকে কর্তৃপক্ষ।
কনসালটেন্সি ফার্মের পরামর্শ :
ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভাগীয় শহরে গড়ে উঠেছে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও ব্যবস্থাপনার প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজসমূহে ভর্তির ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানের পরামর্শও নিতে পারেন। তবে সাবধান থাকা জরুরি যে, এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অনেকই প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত। বাজারে আছে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় প্রস্তুতি-পরামর্শ ও বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্যসমৃদ্ধ বই। এসব বই থেকেও ধারণা ও সহায়ক তথ্য পাওয়া যাবে। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ভিজিট করে তথ্যের যথার্থতা যাচাই করা যেতে পারে।
Discussion about this post