ক্যারিয়ার ডেস্ক
ফরেন অ্যাডমিশন অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টের কনসালটেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ফ্যাকড-ক্যাব)’র সভাপতি কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী বলেছেন, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে উচ্চ শিক্ষায় বিদেশ গমন কমেছে ৯৮ ভাগ। আগে প্রতি বছর দেশের ৮০ হাজার থেকে ১ লাখের মতো শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ যেতেন। এ বছর গত ৮ মাসে গেছেন মাত্র ২ হাজারের মতো।’ ইত্তেফাককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী বলেন, বিদেশের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন অনেক শিক্ষার্থীর। তবে সবার তা পূরণের সুযোগ থাকে না। নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়তে যাওয়ার যোগ্যতা থাকলেও সামর্থ্য থাকে না। কিন্তু যোগ্যতা ও সামর্থ্য থাকলেও এ বছর বিদেশে পড়ার সেই স্বপ্নে বাঁধ সেধেছে করোনা ভাইরাস। কোভিড-১৯ এর কারণে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অধিকাংশ দেশে বিদেশি নাগরিকদের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। দূতাবাসগুলো নতুন করে ভিসা ইস্যু করছে না। ফলে যারা বিদেশে পড়ালেখা করতে চায় তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য রাজধানীর পান্থপথ, ধানমন্ডি, বনানী, গুলশান, রামপুরায় দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৪০০ কনসালটেন্সি এজেন্সি আছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর একমাত্র সমিতি হলো ফরেন অ্যাডমিশন অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টের কনসালটেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ফ্যাকড-ক্যাব) প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৫ সালে ফ্যাকড-ক্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়। দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী এর আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০২০-২২ মেয়াদে সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী বলেন, ‘প্রতি বছরে ২ লাখ শিক্ষার্থী বিদেশে যাওয়ার জন্য আমাদের কাছ আসে। এ বছর এই ৮ মাসে এসেছে মাত্র ৪ হাজারের মতো।’
কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী বলেন, তারন আহসান যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব আলাবামায় এমবিএ পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। কথা ছিল জুনে যাবেন। কিন্তু সেটা পিছিয়ে সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়ার কথা। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি জমা দিতে বলা হয়েছে। ভর্তি ফিসহ আনুষঙ্গিক কাজে লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু তারন বুঝতে পারছেন না, তিনি যেতে পারবেন কি না বা কীভাবে কী করবেন। করোনা মহামারিতে তারনের মতো বিদেশে পড়তে যাওয়ার সুযোগ পেয়েও অনেকে শিক্ষার্থীই অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। বিভিন্ন দেশের নানা নিষেধাজ্ঞায় বিপাকে পড়েছেন তারা।
ইউনেস্কোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ৬০ হাজার শিক্ষার্থী দেশের বাইরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। সবচেয়ে বেশি যান মালয়েশিয়ায়। এরপর রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কানাডা, ভারত ও জাপান। এছাড়া অন্য দেশেও বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন।
কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী বলেন, গত বছরের শেষ দিকে করোনা ভাইরাস ছড়াতে শুরু করে। এ বছরে এসে তা মহামারি আকার ধারণ করেছে। যেসব দেশে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যান, সেসব দেশেও করোনা ছড়িয়েছে। যেখানে প্রকোপ সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, ক্লাস চলে অনলাইনে। বাংলাদেশেও প্রতিদিন করোনায় সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। যেসব শিক্ষার্থীর গ্রীষ্মের সেশনে যাওয়ার কথা ছিল, তারা এখন আটকা পড়েছেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য যেসব শিক্ষার্থী বিদেশে যেতে চান তাদের সহজে ভিসা পাওয়ার ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
কানাডার মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটি অব নিউফাউন্ডল্যান্ডে স্নাতক স্তরে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তানভীর ইসলাম। সেপ্টেম্বরে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। ভিসা করাতে পারছেন না। ভিসা না করালে টিউশন ফিও দিতে পারবেন না। তানভীর পড়াশোনায় বিরতি দিতে চাননি। তাই দেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার ভর্তি হয়েছেন।
Discussion about this post