আসিফ বায়েজিদ
একটি নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করার পর দেশের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। আর কাঙ্ক্ষিত ডিগ্রিটি যদি শিক্ষাবৃত্তির আওতায় হয়, তবে তা সোনায় সোহাগা ! উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে একেকজনের প্রেষণা ভিন্ন হলেও লক্ষ্য একই।
এই লক্ষ্য অর্জনের চাবিকাঠি দুটি। প্রথমত, যথেষ্ট সময় হাতে নিয়ে পরিকল্পনা করা। দ্বিতীয়ত, সে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করতে দৃঢ় মনোবল নিয়ে পরিশ্রম করে যাওয়া।
বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের ভাষায়, ‘আপনি যদি পরিকল্পনা করতে ব্যর্থ হন, তাহলে আপনি ব্যর্থতার জন্যই পরিকল্পনা করছেন।’ সুতরাং প্রস্তুতি শুরু করার কাজটি আগামীকালের জন্য ফেলে না রাখাই ভালো। পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ্যক্রম ছাড়াও গবেষণা, সহশিক্ষাক্রমিক কাজ, ভাষাদক্ষতাসহ বেশ কিছু বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া প্রয়োজন। এসব বিষয় নিয়েই এ সংক্ষিপ্ত রচনা। লেখাটির উদ্দীষ্ট পাঠক মূলত যাঁরা সদ্য সম্মানে ভর্তি হয়েছেন এবং পরে ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ায় স্নাতকোত্তর বা মাস্টার্স পড়তে আগ্রহীরা। তবে যাঁরা বিদেশে স্নাতক করবেন, লেখাটি তাঁদেরও উপকারে আসবে।
বিভাগ ও সিজিপিএ
বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে পছন্দের দেশ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভাগে ভর্তির সুযোগ পাওয়া অর্জুনের লক্ষ্যভেদের থেকেও খানিকটা কঠিন হওয়ার কথা, যদি না সব কটি ক্ষেত্রে একাধিক পছন্দ থাকে। সে জন্য একাধিক দেশ, বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগ এবং বৃত্তি খুঁজে মনস্থির করা গেলেই মঙ্গল। প্রতিটি বিভাগ এবং বৃত্তির শর্তাবলি ভিন্ন হলেও কিছু শর্ত কম-বেশি সব বিশ্ববিদ্যালয়েই এক। প্রথমত, আপনি যে বিভাগ বা বিষয়ে আবেদন করবেন, সে বিষয়ে আপনার সম্মান/ব্যাচেলর ডিগ্রি থাকলে উত্তম। অন্য বিভাগ বা বিষয়েও আবেদন করতে দোষ নেই। তবে আগ্রহ, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে আবেদনের যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, আবেদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যূনতম সিজিপিএর দিকে নজর রাখা জরুরি। সিজিপিএর দিক থেকে আপনার বিভাগে প্রথম বা দ্বিতীয় স্থান অধিকার করতে না পারলে উচ্চশিক্ষা আপনার জন্য নয়–এটি যেমন মিথ্যা, তেমনি সিজিপিএ ব্যাপারটিই মূল্যহীন, সেটিও সত্যি নয়। তাই কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে সিজিপিএর দিকে লক্ষ্য রাখার দায়িত্ব আপনারই।
গবেষণা ও গবেষণাসংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা
কেবল পশ্চিমা দেশগুলোতে নয়, প্রায় সমগ্র বিশ্বেই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পড়াশোনা গবেষণাভিত্তিক। দার্শনিকভাবে মনে করা হয় শিক্ষার্থীরা জ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসেন। সেসব উত্তর খোঁজার নিয়মতান্ত্রিক উপায় শিক্ষার মধ্য দিয়েই ডিগ্রি অর্জন করেন। তাই স্নাতকোত্তর বিদেশে পড়তে চাইলে সম্মান পর্যায় থেকেই গবেষণা, পরিসংখ্যান, প্রাতিষ্ঠানিক লেখা ইত্যাদি অল্প অল্প করে শেখা এবং সংশ্লিষ্ট কাজের সঙ্গে সচেতনভাবে যুক্ত থাকা যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবন থেকেই বিভাগের বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ, সম্মেলন, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও প্রকাশনার কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও গবেষণাকর্মের আগ্রহ এবং সুযোগ সৃষ্টি হবে। সেই সঙ্গে এসব বাড়তি (কিন্তু কাঙ্ক্ষিত) অভিজ্ঞতা আবেদনপত্রেও উল্লেখ করতে পারবেন। উল্লেখ্য, প্রকাশিত গবেষণাকর্মের অভিজ্ঞতা অনেক ক্ষেত্রেই অন্যান্য শর্তাবলিকে শিথিল করে দেয়। তবে গবেষণাপত্র প্রকাশিত না হলে আপনার ভর্তি বা বৃত্তির সুযোগ হবে না–এমন নয়। সে ক্ষেত্রে অন্যান্য অভিজ্ঞতা দিয়ে গবেষণার বাড়তি চাহিদাটুকু পূরণ করে নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
লেখক: আসিফ বায়েজিদ
ইরাসমাস মুন্ডুস স্নাতকোত্তর গবেষক, গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়; শিক্ষানবিশ গবেষণা সহযোগী, টুয়েন্টে বিশ্ববিদ্যালয় ও ডেপুটি ম্যানেজার (শিক্ষা ছুটি) ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি।
Discussion about this post