শিক্ষার আলো ডেস্ক
উচ্চশিক্ষার জন্য এখন অনেক শিক্ষার্থীই জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে চান। জাপান সরকার শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়ন করতে আগ্রহী বিদেশি শিক্ষার্থীদের মেক্সট বৃত্তি দেয়। বাংলাদেশি নাগরিকেরা বাংলাদেশে অবস্থিত জাপান দূতাবাস ও জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাধ্যমে এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। জাপান সরকারের দেওয়া বৃত্তিগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে সম্মানিত। গবেষণার মাধ্যমে বৃত্তিপ্রাপ্তির দেশ এবং জাপানের মধ্যে বন্ধুত্বের সেতু হয়ে ওঠা মানবসম্পদকে উৎসাহিত করা এবং উভয় দেশ ও বৃহত্তর বিশ্বের উন্নয়নে অবদান রাখার লক্ষ্যেই দেওয়া হয় এই বৃত্তি।
সাধারণত দুইভাবে পাওয়া যায় এ বৃত্তি। একটি হচ্ছে বাংলাদেশে অবস্থিত জাপান দূতাবাসের মাধ্যমে। আরেকটি হচ্ছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইছেন, সেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে। স্নাতক চার-পাঁচ বছর, স্নাতকোত্তর দুই-তিন বছর ও পিএইচডি তিন-চার বছরের হয়ে থাকে।
যেসব শাখায় স্কলারশিপ পাওয়া যাবে
১. সোশ্যাল সায়েন্সেস ও হিউম্যানিটিজ। এর দুটি ভাগ রয়েছে: এ আর বি। এ-র মধ্যে রয়েছে ল, পলিটিকস, পেডাগগি, সোশিওলজি, লিটারেচার, হিস্ট্রি আর জাপানিজ ল্যাঙ্গুয়েজ। বি-তে রয়েছে ইকোনমিকস আর বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।
২. ন্যাচারাল সায়েন্সেসের তিনটি ভাগ রয়েছে। এ, বি ও সি। এ-তে সায়েন্স (ম্যাথমেটিকস, ফিজিকস, কেমিস্ট্রি), ইলেকট্রিক এবং ইলেকট্রনিক স্টাডিজ, মেকানিক্যাল স্টাডিজ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেরিটাইম ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার, কেমিক্যাল স্টাডিজ ও বায়োটেকনলজি। বি-তে রয়েছে অ্যাগ্রিকালচারাল স্টাডিজ, হাইজিনিক স্টাডিজ নার্সিং ও বায়োলজি। মেডিসিন আর ডেন্টিস্ট্রি পড়ছে সি-এর মধ্যে।
৩. সাধারণত কোর্সগুলো চার বছরের হলেও মেডিকেল ডিগ্রি কোর্সটি ছয় বছরের। উল্লেখ্য, সর্বোচ্চ তিনটি বিষয়ের নাম প্রেফারেন্স হিসেবে দেওয়া যাবে। সবগুলো বিষয় একটি ভাগের হতে হবে। শুধু যাঁরা ফার্স্ট প্রেফারেন্স সি থেকে দেবেন তাঁরা অন্য ভাগ থেকে পরের প্রেফারেন্স দিতে পারবেন, যেহেতু সি-তে সাবজেক্ট আছে দুটি।
৪. কলেজ অব টেকনোলজির মধ্যে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন, কমিউনিকেশন অ্যান্ড নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারিং, মেটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার অ্যান্ড সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেরিটাইম ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদিতে এই বৃত্তি দেওয়া হবে। অধিকাংশ কোর্সের মেয়াদ তিন বছরের। তবে মেরিটাইম ইঞ্জিনিয়ারিং সাড়ে চার বছর সময় লাগবে।
৫. যাঁরা স্পেশালাইজড ট্রেনিং কলেজে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক, তাঁরা টেকনোজি, পারসোনাল কেয়ার এবং নিউট্রিশন, এডুকেশন ও ওয়েলফেয়ার, বিজনেস, ফ্যাশন এবং হোম ইকোনমিকস, কালচার ও জেনারেল এডুকেশনের মতো নানা বিষয়ে পড়তে পারবেন। সাধারণত এসব কোর্সের মেয়াদ দুই বছর।
সুযোগ-সুবিধা
- রিসার্চে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা পাবেন ১ লাখ ৪৩ হাজার ইয়েন।
- মাস্টার্সে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা পাবেন ১ লাখ ৪৪ হাজার ইয়েন।
- ডক্টরালে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা পাবেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ইয়েন।
- স্নাতকে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ১ লাখ ১৭ হাজার ইয়েন মাসিক ভাতা হিসেবে পাবেন।
- পরীক্ষা ফি, টিউশন ফি স্কলারশিপ কর্তৃপক্ষ বহন করবে।
- বাংলাদেশ থেকে জাপানে যাওয়ায়-আসার বিমান ভাড়া স্কলারশিপ কর্তৃপক্ষ বহন করবে।
আবেদনের যোগ্যতা
- স্নাতক শিক্ষার্থীদের বয়স ১৭-২৫ বছরের মধ্যে হতে হবে এবং ১২ বছরের শিক্ষাজীবন থাকতে হবে। স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রির জন্য বয়স ৩৫-এর কম হতে হবে এবং ১৬-১৮ বছরের শিক্ষাজীবন থাকতে হবে।
- কোনো প্রার্থী একাধিক প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারবেন না। যেকোনো একটি প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- বৃত্তির আবেদন ফরম।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
- একাডেমিক সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট।
- ডিন বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের রেকোমেন্ডেশন লেটার।
- আইইএলটিএস বা ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট।
- পাসপোর্ট বা এনআইডি।
- স্টাডি প্ল্যান।
- আবেদনকারীর শিক্ষক/ পরামর্শদাতারা/নিয়োগকারী কর্তৃক দুটি সুপারিশ পত্র।
- পাসপোর্ট স্ক্যান কপি।
গবেষণার শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা করে লাগবে:
- সিভি অধ্যয়নের পরিকল্পনা/উদ্দেশ্য বিবৃতি।
- প্রাথমিক বিষয়বস্তুতে প্রয়োগের অনুপ্রেরণা, শিক্ষা/গবেষণা ব্যাকগ্রাউন্ড ইত্যাদি।
- একাডেমিক থিসিস বা প্রাসঙ্গিক প্রকাশনা।
বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন: http://www.shed.gov.bd/site/view/scholarship/Apply
আবেদনপত্র দাখিলের নিয়ম
আবেদনকারীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া অনলাইন লিংকে প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি সাবমিট করতে হবে। আবেদনকারীকে ওই অনলাইন লিংকে তথ্য দেওয়ার পর পূরণকৃত ওই ফরম, সার্টিফিকেট বা মার্কশিট, পাসপোর্ট/ ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ, আইইএলটিএস/ টোফেলের সার্টিফিকেটের কপি এবং সংশ্লিষ্ট সব ডকুমেন্টের সত্যায়িত ফটোকপি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঠিকানায় জমা দিতে হবে।
প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে English Language Proficiency অথবা Japanese Language Proficiency-এর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রার্থীদের প্রাথমিক বাছাই চূড়ান্তকরণের ক্ষমতা এ কমিটি সংরক্ষণ করে।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য, কোনো প্রার্থী একাধিক প্রোগ্রামে আবেদন করলে তাঁর আবেদন বাতিল বলে গণ্য হবে; অর্থাৎ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট/ মাস্টার্স/ ডক্টরাল যেকোনো একটি প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করা যাবে। এ ছাড়া পূরণকৃত তথ্য ছক ও ক্যাটাগরি অনুযায়ী প্রযোজ্য সার্টিফিকেট/ মার্কশিট ও অন্যান্য যাবতীয় ডকুমেন্টের হার্ড কপি মন্ত্রণালয়ে জমা না দেওয়া হলে কোনো আবেদন বিবেচনা করা হবে না।
Discussion about this post