ফারিয়া ইসলাম দীপ্তি
উচ্চশিক্ষা গ্রহণে শিক্ষার্থীদের কাছে সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি কিংবা ইউরোপিয়ান দেশগুলো প্রাধান্য পেয়ে থাকে। তবে বর্তমানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য এশিয়ান দেশ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ায় পড়ালেখা করা বেশ বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠছে। দেশটিতে বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি আকর্ষণীয় কোরিয়ান সংস্কৃতির সান্নিধ্য, মনোরম আবহাওয়াবেষ্টিত চমৎকার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও উন্নত জীবনব্যবস্থার সুযোগ রয়েছে।
ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পিএইচডি করার জন্য শিক্ষার্থীরা কোরিয়ায় যেতে পারেন। ব্যাচেলর ডিগ্রির মেয়াদ সাধারণত তিন থেকে চার বছর, মাস্টার্স ডিগ্রির মেয়াদ এক থেকে দুই বছর এবং ডক্টরাল/পিএইচডি ডিগ্রির মেয়াদ তিন থেকে পাঁচ বছর হয়ে থাকে। কোরিয়ান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ফল ও স্প্রিং এই দুই সেমিস্টারে শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারেন। সাউথ কোরিয়ায় ব্যাচেলর প্রোগ্রামে ভর্তি বেশ প্রতিযোগিতামূলক। এসএসসি, এইচএসসি অথবা ও-এ লেভেলে খুব ভালো ফলাফলের পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলোর কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলে সুবিধা পাওয়া যায়। ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির জন্য এসবের বিকল্প নেই।
দক্ষিণ কোরিয়ায় সব বিষয় নিয়েই শিক্ষার্থীরা পড়তে পারবেন। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার নাম করা কিছু ইউনিভার্সিটি হলো:
- সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
- কোরিয়া ইউনিভার্সিটি
- ইউনিভার্সিটি অব সিউল
- ইয়নসেই ইউনিভার্সিটি
- চেওংজু ইউনিভার্সিটি
- চুংনাম ইউনিভার্সিটি
পড়ার খরচ
দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি বা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় টিউশন ফি কম হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্সভেদে ১ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার থেকে ১৫ হাজার ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে। সাধারণত কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর নির্ভর করে টিউশন ফি পৃথক হয়ে থাকে, তাই কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাদের ওয়েবসাইটগুলোতে ফির ব্যাপার নিশ্চিত হওয়া ভালো। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে স্কলারশিপের সুযোগ। এগুলো সম্পর্কে জানতে পছন্দের ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে নিয়মিত চোখ রাখতে হবে।
ভাষা
কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজি ও কোরিয়ান উভয় ভাষার কোর্স রয়েছে। তবে উভয় ক্ষেত্রেই ভাষা দক্ষতার প্রমাণপত্র দেখাতে হয়।
বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কোর্সের পাশাপাশি কোরিয়ান ভাষার কোর্সেরও ব্যবস্থা করে থাকে। তাই স্থানীয় ভাষা শিখতে পারলে অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে। দ্রুতই সেখানে বসবাসের যোগ্য হয়ে যাবে। পড়ালেখা শেষে ভালো চাকরির সুযোগ পাওয়াও সহজ হয়ে যাবে।
আবেদন করতে যা যা লাগে
- অ্যাপ্লিকেশন ফরম
- সব একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট
- আইইএলটিএস স্কোর অথবা কোরিয়ান ভাষা দক্ষতার পরীক্ষার প্রমাণপত্র
- মোটিভেশন লেটার
- সিভি
- কাজের অভিজ্ঞতার সনদ (যদি চায়)
- গবেষণাপত্র/রিসার্চ পেপার (যদি চায়)
খরচ ও আবাসনের ব্যবস্থা
দেশটির মুদ্রার মান বাংলাদেশি টাকার তুলনায় খুবই কম। কোরিয়ান ১০০ ওন, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭/৮ টাকার কাছাকাছি। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্প খরচে পড়ালেখা করার এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে সেখানে। দক্ষিণ কোরিয়ায় টিউশন ফি ও থাকা-খাওয়ার খরচ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া বা কানাডার চেয়ে কম। তবে এ দেশের ডিগ্রির মান ইউরোপের দেশগুলোর চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। সিউলের মতো বড় শহরগুলোতে টিউশন ফি ও থাকা-খাওয়ার খরচ একটু বেশি, তবে অন্যান্য শহরে কম। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা চাইলেই সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা খণ্ডকালীন কাজ করতে পারেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা ছুটির সময় ফুলটাইম কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন। দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা স্বল্প খরচে এসব হোস্টেলে থাকতে পারবেন।
Discussion about this post